মুসলমানদের জ্ঞানের রাজত্ব ফিরে আসুক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জনের বিশেষ যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন দুনিয়ার জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে, তেমনি আখেরাতের জীবনেরও মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে।

মজার ব্যাপার হল, মানুষ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকে জ্ঞান অর্জনের মহানেয়ামত দেয়া হয়নি। মানবতার ধর্ম ইসলাম জ্ঞানার্জনকে এতই গুরুত্ব দিয়েছে যে, হেরা গুহায় রাসূল (সা.)-এর ওপর সর্বপ্রথম নাজিল করা ওহিই হল- ‘পড়, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’

ইমাম গাজ্জালী (রহ.) এহইয়াউল উলুমুদ্দিনে বলেন, জ্ঞান দুই ধরনে- এক. আবশ্যক জ্ঞান। যেমন শরিয়ত, চিকিৎসা, গণিত, কৃষি, রাষ্ট্রনীতি ও দর্শনশাস্ত্র ইত্যাদি। দুই. অনাবশ্যক জ্ঞান। যেমন- ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরি সাহিত্য ইত্যাদি।

এসব চর্চার পেছনে সময় নষ্ট না করে কল্যাণকর জ্ঞানের পেছনে লেগে থাকা একজন মুসলমানের কর্তব্য। দুনিয়ার কল্যাণের জন্য জ্ঞান শিখলে সেটাও সওয়াবের হতে পারে যদি পরিশুদ্ধ নিয়ত থাকে।

আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে মুসলমানদের শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করলে তা সওয়াব হিসেবেই গণ্য হবে। যদিও আমরা দেখব আপনি কম্পিউটার টিপছেন, নেট ব্রাউজ করছেন, মোবাইল টিপছেন- আর দশজন যা করে তেমনই; কিন্তু আপনি আসলে জ্ঞান ও দক্ষতার চর্চা করছেন।

জ্ঞানার্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন।’ (সূরা মুজাদালা, আয়াত ১১।) রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ, যে কোরআন শিখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর ৫০২৭।)

অন্য হাদিসে হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য পথে নামল, আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর ২৬৯৯।) আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা যাকে বিশেষ কল্যাণ দিতে চান, তাকে ধর্মের গভীর প্রজ্ঞা দান করেন।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর ৭১।)

ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মীয় শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে জাগতিক শিক্ষারও গুরুত্ব। দুনিয়ার প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা জরুরি। তা ছাড়া ধর্মীয় কাজের জন্যও কখনও কখনও জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়।

একইভাবে দুনিয়ায় সুখে-শান্তিতে বসবাব করার জন্য ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই ধর্ম ও দুনিয়া দুটিকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞান হল মুসলমানদের হারানো সম্পদ। যেখানে পাও তা কুড়িয়ে নাও।’ তাই আসুন! দৈনিন্দন কাজের ফাঁকে অল্প করে হলেও প্রতিদিন আমরা জ্ঞানচর্চা করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর