হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা হলেই যে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট থাকবে এই ধারণা এখন অনেকটাই বদলেছে। অনেকেই করোনার নিরব শিকার হচ্ছেন। তাদের ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণই প্রকাশ পাচ্ছে না।
সম্প্রতি বেশ কিছু করোনা রোগীর শরীরে নানা ধরনের র্যাশ দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ডায়রিয়ার সমস্যাও।তাদের জ্বরের কোনো লক্ষণই নেই, নেই কাশি, গলা ব্যথা কিংবা শ্বাসকষ্ট। তবে সন্দেহবশত পরীক্ষার পর ফলাফল আসছে কোভিড-১৯ পজিটিভ।
দিনকে দিন এই প্রাণঘাতী ব্যাধিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এই অসুখের অন্যতম উপসর্গ জ্বর বলেই এত দিন জানা ছিল। তবে বর্তমানে জ্বর, কাশি আর শ্বাসকষ্ট ছাড়াও নতুন নতুন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে আক্রান্তদের মাঝে।
অনেকের আবার পায়ের আঙুলে ছোট ফুসকুড়ি ও ঘা হতে পারে। টেস্ট করতে গিয়ে করোনা ধরা পড়ছে। ভারতীয় ক্রিটিকেল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অরিন্দম কর বলেন, কোভিড ১৯ আক্রান্তদের শ্বাসকষ্ট ও জ্বর শুরু হয় সংক্রমণের ৫ থেকে ৬ দিন পর থেকে। জ্বর নিয়ে যখন রোগীরা আসেন তার সপ্তাহখানেক আগেই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন।
বলাই বাহুল্য আক্রান্তদের সংস্পর্শে থাকা অন্য মানুষদের মধ্যে এরই মধ্যে জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতসহ বাংলাদেশেও অনেক আক্রান্ত রোগীরা কোনো উপসর্গ ছাড়াই পজেটিভ হচ্ছেন। জ্বর-সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি এখন না থাকলেও শরীরের র্যাশ ও ডায়রিয়াও কোভিড-১৯ এর নতুন লক্ষণ বলে বিবেচিত।
ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজির সভাপতি সন্দীপন ধরে মতে, কোভিড-১৯ এর উপসর্গ হিসেবে পায়ের আঙুলে ছোট ফুসকুড়ি ও ঘা হতে পারে। এ ছাড়া ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট মশার কামড়ের মতো র্যাশ দেখা যেতে পারে।
ইতালি ও চীনের হুবেই-এর হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের ২০ শতাংশের শরীরে এই র্যাশ দেখা গিয়েছে। চিকিৎসকরা প্রথমে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলে মনে করলেও পরবর্তী কালে জানা যায়, নভেল করোনার কারণেই ত্বকে নানা ধরনের র্যাশ বের হয়।
তবে কোভিড-১৯ এর কারণে ফুট শোর নামে পায়ের বুড়ো আঙুলের নীচে এক বিশেষ ধরনের ঘা হয়। একমাত্র করোনা হলেই এই নির্দিষ্ট সমস্যা দেখা যায়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
এক নজরে জেনে নিন করোনা আক্রান্তদের কী কী প্রাথমিক উপসর্গ দেখা যায়-
> জিভের স্বাদ চলে গিয়ে খাবারে অরুচি হয়।
> গন্ধের বোধ নষ্ট হয়ে যায়।
> পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
> পায়ের আঙুলে ছোট ফুসকুড়ি ও ঘা হতে পারে।
> ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট মশার কামড়ের মতো র্যাশ দেখা যেতে পারে।
> গা ম্যাজম্যাজ করে, ব্যথা হতে পারে।
> পেটে ব্যথা ও বমি হতে পারে।
> জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি থাকতে পারে।
> গলা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে তিন শতাংশ রোগীর গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হয়। এদের অক্সিজেন ও প্রয়োজনে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দরকার হয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। শরীরের র্যাশের পাশাপাশি কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে পেটের গোলমাল, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা ও বমি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ভারতীয় জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে ডায়রিয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। কারণ শ্বাসনালিতে যে রিসেপ্টরগুলোতে কোভিড-১৯ আক্রমণ করে, সেই রকমই গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যাক অর্থাৎ অন্ত্রেও সেই রিসেপ্টর আছে।
নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করে নভেল করোনাভাইরাস শ্বাসনালিতে না গিয়ে পেটে পৌঁছে গিয়ে অন্ত্রে সংক্রমণ হলে পেটের গোলমাল, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা ও বমি হওয়ার ঝুঁকি থাকে, বললেন সুবর্ণবাবু।
একই সঙ্গে তিনি জানালেন, শ্বাসনালি ও ফুসফুসের সংক্রমণের তুলনায় ডায়ারিয়া হলে রোগের সঙ্গে মোকাবিলা কিছুটা সুবিধাজনক। স্যালাইন ও জিঙ্ক দিয়ে ডায়রিয়ার মোকাবিলা করা হয়, বলেন ডা. সুবর্ণবাবু।
বর্তমানে সবাইকে আরো বেশি সাবধান হতে হবে। যথাযথ মাস্ক ব্যবহার করে ও হ্যান্ড হাইজিন মেনে এই সংক্রমণ অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা যায়। তবে মাস্কের ব্যাপারে বিশেষ সচেতন হতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ফ্যাশনেবল মাস্ক পরে রোগ প্রতিরোধ করা মুশকিল। এন ৯৫ মাস্কের উপর সাধারণ মাস্ক ব্যবহার করলে সংক্রমণ আটকানো যায়। এসময় ভিড় জায়গা, বাজার ও শপিং মল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেন ডা. সুবর্ণবাবু।
বাসে বা ট্রেনে যাওয়া-আসা করতে হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। জ্বর বা কাশি ছাড়া কোভিড-১৯-এর অন্যান্য যে কোনো একটি উপসর্গ দেখা গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।