হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বজুড়ে চলছে করোনাভাইরাস মহামারি। এর বাইরে নই আমরাও। দেশে ইতিমধ্যে ২৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন কমপক্ষে দুজন। এ অবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খেতে হবে। কেননা এসব খাবার আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
চলুন তাহলে জেনে নেই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কি?
এটা হচ্ছে কিছু ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম- যা শরীরের ক্ষতিকর কোষ, প্রোটিন ও ডিএনএ’র ক্ষতি করে এমন কিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এসব খাবার শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে শরীরে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সাহায়তা করে।
পাশাপাশি এসব খাবার অকাল বার্ধক্য, বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ, ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধ করে।
এবার চলুন তাহলে কোন কোন খাবারে এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে তা জেনে নেই।
বিটা ক্যারোটিন: রঙিন ফলমূল ও শাকসব্জিতে এই উপাদান প্রচুর পরিমাণে আছে। যেমন- গাজর, পালংশাক, লালশাক, ব্রকলি, টমোটো, পেপে, আম, ডাল ইত্যাদি।
ভিটামিন এ: গাজর, পালংশাক, মিষ্টি আলু, মিষ্টিকুমড়া, জাম্বুরা, ডিম, কলিজা, দুধজাতীয় খাবার।
ভিটামিন ই: কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, বাদাম তেল, সীমের বিচি বা বিচিজাতীয় খাবার, ভেজিটেবল অয়েল, জলপাইয়ের আচার, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি।
ভিটামিন সি: আমলকী, লেবু, কমলা, সবুজ মরিচ, করলা ইত্যাদি।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আরও কিছু খাবার
উদ্ভিজ্জ খাবার হলো অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস, বিশেষ করে বেগুনি, নীল, কমলা ও হলুদ রংয়ের শাকসবজি ও ফল। এ ছাড়া নিচের খাবারগুলো থেকেও আপনি শরীরের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারবেন।
সবজি: করলা, লাল পাতা কপি, বিট, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি।
শাক: যেকোনো ধরনের ও রঙের শাক।
ফল: কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আম, কিউই, আনার, তরমুজ, বেরি, জলপাই, আনারস ইত্যাদি।
মসলা: আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ।
অন্যান্য: শিম বিচি, মটরশুঁটি, বিচিজাতীয় খাবার, বার্লি, ওটস, লাল চাল ও আটা, বাদাম।
টক দই: এটি প্রোবায়োটিকস, যা শ্বাসযন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্র সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে।
চা: গ্রিন টি, লাল চায়ে এল-থেনিন এবং ইজিসিজি নামক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনেক যৌগ তৈরি করে শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।
ভিটামিন: ভিটামিন বি ও জিংক–জাতীয় খাবার (বিচিজাতীয়, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, দুধ ইত্যাদি) শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির কোষ বৃদ্ধি করে। তাই এ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে।
আমিষ: উচ্চ মানের আমিষজাতীয় খাবার: ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।
তবে আরও একটি কথা মনে রাখতে হবে, খাবারে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বেশি পরিমাণ পেতে হলে আমাদের কোনও খাবারই অতিরিক্ত জ্বাল দেয়া যাবে না। কেননা অতিরিক্ত তাপে বা দীর্ঘ সময় রান্না করলে খাবারের এই উপাদানটি অনেকখানি কমে যাবে। এছাড়া যেসব শাকসব্জি বা ফল (যেমন শশা, গাজর, টমোটো, বিট, ব্রোকলি) কাঁচা খাওয়া সম্ভব সেগুলো সালাদ করে এমনি খাওয়াই ভালো। রান্নার ফলে এদের পুষ্টিগুণ কমে যায়।
একই সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে। পান, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, সাদাপাতা, খয়েরিইত্যাদি খাওয়া চলবে না। বাদ দিতে হবে ফাস্ট ফুড ও কোল্ড ড্রিংকস জাতীয় খাবারও। পাশাপাশি রাতে যথেষ্ট পরিমাণ ঘুমাতে হবে।
তাই কেরোনার এসময়টাতে বাসায় থাকুন, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট যথা শাকসব্জি ও ফলমূল জাতীয় খাবার খান এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করুন। একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনপদ্ধতিই পারে আমাদের সকল প্রকার রোগ থেকে মুক্ত রাখতে।