ঢাকা ০৪:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘লিচুর রাজ্যে’ রাসায়নিকের শঙ্কা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪১:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মে ২০১৫
  • ৪০৩ বার

‘লিচুর রাজ্য’ দিনাজপুরের জনপদ এখন কাঁচা পাঁকা লিচুতে ভরপুর। জেলা জুড়ে যেন চলছে লিচু উৎসব। উৎসব প্রতিযোগিতায় নেমেছে বাগান মালিক এবং ব্যবসায়ীরা। কে আগে বাজারে লিচু নিয়ে আসতে পারে। আর এ প্রতিযোগিতার কারণে লিচু বাগানে ব্যবহার হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক কীটনাশক। এ কারণে লিচুর পুষ্টিমান নিয়ে শঙ্কিত দিনাজপুরে সাধারণ ক্রেতারা।

 

দিনাজপুরে বাজারে আসতে শুরু করেছে মাদ্রাজি লিচু। এর পর বাজারের আসবে বোম্বাই এবং বেদানা, তার পর আসবে চায়না-১, চায়না-২ ও চায়না-৩। সবার শেষে বাজারে আসবে কাঁঠালি লিচু। এ ছাড়াও লিচুর আরো কয়েকটি জাত রয়েছে।

 

কীটনাশক বিক্রেতা এবং বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, লিচু বাগানের পরিচর্যার ক্ষেত্রে বায়ার কোম্পানির ডেসিস, বেল্ট, পদ্মা ওয়েল কোম্পানির রিপকট এবং ইন্তেফা গ্রুপের জুবাস, প্রোক্টোকেম গ্রুপের কোরজেন, অ্যাবামেকটিন গ্রুপের লাকাদ কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।

 

গাছের মুকুল এবং ফলকে ধরে রাখার জন্য সেমকো গ্রুপের লিটোসেন, এসিআই গ্রুপের ফ্লোরা, সারিপ গ্রুপের গিকোজিন, মেগডোলান গ্রুপের মেগনোল ব্যবহার করা হয়। ফলকে দ্রুত বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে হরমোন হিসেবে ক্রস কেয়ার কোম্পানির পটাস সিনেটেড, জিঙ্ক প্লাসসহ নাফা, জাদা, বাড়ন্ত নামে বেশ কিছু হরমোন ব্যবহার করা হয়। তবে এ সব কীটনাশক শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিনা তা তাদের জানা নেই।

 

বীরগঞ্জ পৌর শহরের লিচু বিক্রেতা মো. জয়নাল আবেদীন জানান, বাজারে এখন মাদ্রাজি লিচু এসেছে। এক শত লিচু বিক্রয় হচ্ছে ৫০টাকা থেকে শুরু করে ১৪০টাকা দরে। তবে এ সব লিচুর স্বাদ তেমন ভালো নয়। শুধু ক্রেতাদের মন জোগাতেই বাগান মালিকদের কাছ থেকে পাইকারি দরে লিচু এনেছি বেশি লাভের আশায়। লিচুতে ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিক মেশানোর বিষয়ে তিনি বলেন, গাছেই যদি এ রাসায়নিক জাতীয় কিছু মিশিয়ে দেয়, তবে তা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা বাজারে বিক্রির সময় কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করি না।

 

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার মাটি ও জলবায়ু লিচু উৎপাদনে উপযোগী হওয়ায় দিনাজপুরে  লিচু চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। দিনাজপুরে ৪ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২৯৮টি বাগানে ৬ লাখ ৪৫টি গাছে লিচু উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন।

 

দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, যে কোনো কেমিক্যাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। লিচুতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে শরীরে ক্ষতির ঝুঁকি থেকেই যায়- এটা নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে। বিশেষ করে ফেটে যাওয়া লিচুর ভেতরে কীটনাশক ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ বিষয়ে একজন পুষ্টি বিজ্ঞানী বলতে পারবেন এসব কীটনাশক ব্যবহারে শরীরের কী কী এবং কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে। তবে এখনো পর্যন্ত দিনাজপুরের লিচুতে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়ার তথ্য আমার জানা নেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

‘লিচুর রাজ্যে’ রাসায়নিকের শঙ্কা

আপডেট টাইম : ০৬:৪১:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মে ২০১৫

‘লিচুর রাজ্য’ দিনাজপুরের জনপদ এখন কাঁচা পাঁকা লিচুতে ভরপুর। জেলা জুড়ে যেন চলছে লিচু উৎসব। উৎসব প্রতিযোগিতায় নেমেছে বাগান মালিক এবং ব্যবসায়ীরা। কে আগে বাজারে লিচু নিয়ে আসতে পারে। আর এ প্রতিযোগিতার কারণে লিচু বাগানে ব্যবহার হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক কীটনাশক। এ কারণে লিচুর পুষ্টিমান নিয়ে শঙ্কিত দিনাজপুরে সাধারণ ক্রেতারা।

 

দিনাজপুরে বাজারে আসতে শুরু করেছে মাদ্রাজি লিচু। এর পর বাজারের আসবে বোম্বাই এবং বেদানা, তার পর আসবে চায়না-১, চায়না-২ ও চায়না-৩। সবার শেষে বাজারে আসবে কাঁঠালি লিচু। এ ছাড়াও লিচুর আরো কয়েকটি জাত রয়েছে।

 

কীটনাশক বিক্রেতা এবং বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, লিচু বাগানের পরিচর্যার ক্ষেত্রে বায়ার কোম্পানির ডেসিস, বেল্ট, পদ্মা ওয়েল কোম্পানির রিপকট এবং ইন্তেফা গ্রুপের জুবাস, প্রোক্টোকেম গ্রুপের কোরজেন, অ্যাবামেকটিন গ্রুপের লাকাদ কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।

 

গাছের মুকুল এবং ফলকে ধরে রাখার জন্য সেমকো গ্রুপের লিটোসেন, এসিআই গ্রুপের ফ্লোরা, সারিপ গ্রুপের গিকোজিন, মেগডোলান গ্রুপের মেগনোল ব্যবহার করা হয়। ফলকে দ্রুত বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে হরমোন হিসেবে ক্রস কেয়ার কোম্পানির পটাস সিনেটেড, জিঙ্ক প্লাসসহ নাফা, জাদা, বাড়ন্ত নামে বেশ কিছু হরমোন ব্যবহার করা হয়। তবে এ সব কীটনাশক শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিনা তা তাদের জানা নেই।

 

বীরগঞ্জ পৌর শহরের লিচু বিক্রেতা মো. জয়নাল আবেদীন জানান, বাজারে এখন মাদ্রাজি লিচু এসেছে। এক শত লিচু বিক্রয় হচ্ছে ৫০টাকা থেকে শুরু করে ১৪০টাকা দরে। তবে এ সব লিচুর স্বাদ তেমন ভালো নয়। শুধু ক্রেতাদের মন জোগাতেই বাগান মালিকদের কাছ থেকে পাইকারি দরে লিচু এনেছি বেশি লাভের আশায়। লিচুতে ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিক মেশানোর বিষয়ে তিনি বলেন, গাছেই যদি এ রাসায়নিক জাতীয় কিছু মিশিয়ে দেয়, তবে তা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা বাজারে বিক্রির সময় কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করি না।

 

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার মাটি ও জলবায়ু লিচু উৎপাদনে উপযোগী হওয়ায় দিনাজপুরে  লিচু চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। দিনাজপুরে ৪ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২৯৮টি বাগানে ৬ লাখ ৪৫টি গাছে লিচু উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন।

 

দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, যে কোনো কেমিক্যাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। লিচুতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে শরীরে ক্ষতির ঝুঁকি থেকেই যায়- এটা নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে। বিশেষ করে ফেটে যাওয়া লিচুর ভেতরে কীটনাশক ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ বিষয়ে একজন পুষ্টি বিজ্ঞানী বলতে পারবেন এসব কীটনাশক ব্যবহারে শরীরের কী কী এবং কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে। তবে এখনো পর্যন্ত দিনাজপুরের লিচুতে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়ার তথ্য আমার জানা নেই।