ঢাকা ০৬:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পার্সেলে বন্দী ঋতুপর্ণার জীবন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ মার্চ ২০২০
  • ২০৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভয় আর অপরাধ, সংসারের সঙ্গে অনন্তকাল ধরে চলতে থাকা এই দুই বোধের মাঝখানে একটা পাতলা ফিতে রয়েছে। পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য ‘দ্য পার্সেল’ ছবিটিকে এই পাতলা ফিতের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। ছবিটি যেন সেই  ফিতের উপর দিয়ে ব্যালান্স করে অনেক দূরে যাবে বলে হাঁটছে। দর্শকের নির্নিমেষ চেয়ে থাকার মাঝে হঠাত্ই ঢুকে পড়ছে অবাঞ্ছিত কলিং বেলের শব্দ। সেই শব্দের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে পার্সেলে মোড়া অতীত। কিংবা এমন এক বর্তমান যেখানে দাঁড়িয়ে সাজানো সংসারের সুসংবাদ হোঁচট খায়। ইন্দ্রাশিস পারিবারিক গল্প বলতে ভালোবাসেন। পরিবারের প্রতিটা মানুষের একটা নিজস্ব ক্রাইসিস রয়েছে। সেই পারিবারিক ক্রাইসিসগুলোকে শহরের বহুতলে ঝুলতে থাকা বিষণ্ণ জামাকাপড়ের মতো সাজিয়েছেন পরিচালক।

এই ছবির নন্দিনী (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত), শৌভিক (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)-কে আমরা প্রতিদিন চারপাশে দেখতে পাই। আমরা তাদেরকে চিনি। কখনও আমরা তাদের জীবন নিয়ে পাড়ার ঠেকে মুখরোচক আলোচনা করি। আবার কখন এবং কীভাবে যে আমরা নিজেরাই ওই চরিত্রগুলো হয়ে উঠি সেই হিসেব মনে হয় কেউই রাখতে পারি না।

ছবিতে কোনও এক বিশেষ শ্রেণীর পারিবারিক ক্রাইসিস দেখানো হয়নি। এই শহরেই কেউ তার পঙ্গু স্বামীকে আঁকড়ে ধরে বাঁচে। ভিজিয়ে ফেলা বিছানার চাদর নিয়ে ক্লান্ত দুটো হাত প্রতি সন্ধ্যায় কাচতে যায়। মেঠো পথ শেষ হয় যেখানে, সেখান থেকে পূত্রবধুর মৃত্যু শোকে শাশুড়িমায়ের কান্নায় ভিজে যায় শহরের ফুটপাত। আবার কোথাও স্বজন হারানো হয়ে ওঠে লুম্পেনদের স্বর্গদ্বারের চাবি, কোথাও আবার স্বজন হারিয়ে নিঃস্ব হয় মানুষ।

ঋতুপর্ণা এই ছবিতে অসামান্য অভিনয় করেছেন। গোটা ছবিতে কোথাও তাকে এতটুকু বেশি মনে হয়নি। সাধারণ জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখা গিয়েছে তার অভিনয়ে। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন আরও এক শক্তিশালী অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।

এছাড়াও বিশেষ করে বলতে হবে দামিনী বেণী বসুর কথা। ছবির বেশিরভাগটাই ঘরের মধ্যে শ্যুট করেছেন পরিচালক। ছবিতে যে খুব ভালো দৃশ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমনটা নয়। সেই শূন্যস্থান সংলাপ দিয়ে পূরণ করেছেন পরিচালক। ছবির আরও একটি স্তম্ভ হল আবহসঙ্গীত। তার জন্য অবশ্যই জয় সরকারের বাহবা প্রাপ্য।

নিঃসন্দেহে ইন্দ্রাশিস আগের ছবিগুলো দিয়ে তার নিজস্ব দর্শক তৈরি করেছেন। এই ছবি সেই দর্শকদের নিরাশ করবে না। বিষয় হল, ইন্দ্রাশিস কি নতুন দর্শক তৈরি করতে পারবেন? অন্যভাবে বলতে গেলে বাংলা ছবির দর্শক কি ইন্দ্রাশিসকে আরও একবার আবিষ্কার করতে পারবেন?
এই দুটি প্রশ্নের উত্তরই যদি না হয়, তাহলে আর কিছুই না, ‘দ্য পার্সেল’ সেই ফিতের উপর হাঁটতে হাঁটতে ব্যালান্স হারাবে। হারালেও, আশা করি ইন্দ্রাশিসসুলভ ছবি পরিচালক তৈরি করে যাবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পার্সেলে বন্দী ঋতুপর্ণার জীবন

আপডেট টাইম : ০৩:০২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ মার্চ ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভয় আর অপরাধ, সংসারের সঙ্গে অনন্তকাল ধরে চলতে থাকা এই দুই বোধের মাঝখানে একটা পাতলা ফিতে রয়েছে। পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য ‘দ্য পার্সেল’ ছবিটিকে এই পাতলা ফিতের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। ছবিটি যেন সেই  ফিতের উপর দিয়ে ব্যালান্স করে অনেক দূরে যাবে বলে হাঁটছে। দর্শকের নির্নিমেষ চেয়ে থাকার মাঝে হঠাত্ই ঢুকে পড়ছে অবাঞ্ছিত কলিং বেলের শব্দ। সেই শব্দের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে পার্সেলে মোড়া অতীত। কিংবা এমন এক বর্তমান যেখানে দাঁড়িয়ে সাজানো সংসারের সুসংবাদ হোঁচট খায়। ইন্দ্রাশিস পারিবারিক গল্প বলতে ভালোবাসেন। পরিবারের প্রতিটা মানুষের একটা নিজস্ব ক্রাইসিস রয়েছে। সেই পারিবারিক ক্রাইসিসগুলোকে শহরের বহুতলে ঝুলতে থাকা বিষণ্ণ জামাকাপড়ের মতো সাজিয়েছেন পরিচালক।

এই ছবির নন্দিনী (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত), শৌভিক (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)-কে আমরা প্রতিদিন চারপাশে দেখতে পাই। আমরা তাদেরকে চিনি। কখনও আমরা তাদের জীবন নিয়ে পাড়ার ঠেকে মুখরোচক আলোচনা করি। আবার কখন এবং কীভাবে যে আমরা নিজেরাই ওই চরিত্রগুলো হয়ে উঠি সেই হিসেব মনে হয় কেউই রাখতে পারি না।

ছবিতে কোনও এক বিশেষ শ্রেণীর পারিবারিক ক্রাইসিস দেখানো হয়নি। এই শহরেই কেউ তার পঙ্গু স্বামীকে আঁকড়ে ধরে বাঁচে। ভিজিয়ে ফেলা বিছানার চাদর নিয়ে ক্লান্ত দুটো হাত প্রতি সন্ধ্যায় কাচতে যায়। মেঠো পথ শেষ হয় যেখানে, সেখান থেকে পূত্রবধুর মৃত্যু শোকে শাশুড়িমায়ের কান্নায় ভিজে যায় শহরের ফুটপাত। আবার কোথাও স্বজন হারানো হয়ে ওঠে লুম্পেনদের স্বর্গদ্বারের চাবি, কোথাও আবার স্বজন হারিয়ে নিঃস্ব হয় মানুষ।

ঋতুপর্ণা এই ছবিতে অসামান্য অভিনয় করেছেন। গোটা ছবিতে কোথাও তাকে এতটুকু বেশি মনে হয়নি। সাধারণ জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখা গিয়েছে তার অভিনয়ে। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন আরও এক শক্তিশালী অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।

এছাড়াও বিশেষ করে বলতে হবে দামিনী বেণী বসুর কথা। ছবির বেশিরভাগটাই ঘরের মধ্যে শ্যুট করেছেন পরিচালক। ছবিতে যে খুব ভালো দৃশ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমনটা নয়। সেই শূন্যস্থান সংলাপ দিয়ে পূরণ করেছেন পরিচালক। ছবির আরও একটি স্তম্ভ হল আবহসঙ্গীত। তার জন্য অবশ্যই জয় সরকারের বাহবা প্রাপ্য।

নিঃসন্দেহে ইন্দ্রাশিস আগের ছবিগুলো দিয়ে তার নিজস্ব দর্শক তৈরি করেছেন। এই ছবি সেই দর্শকদের নিরাশ করবে না। বিষয় হল, ইন্দ্রাশিস কি নতুন দর্শক তৈরি করতে পারবেন? অন্যভাবে বলতে গেলে বাংলা ছবির দর্শক কি ইন্দ্রাশিসকে আরও একবার আবিষ্কার করতে পারবেন?
এই দুটি প্রশ্নের উত্তরই যদি না হয়, তাহলে আর কিছুই না, ‘দ্য পার্সেল’ সেই ফিতের উপর হাঁটতে হাঁটতে ব্যালান্স হারাবে। হারালেও, আশা করি ইন্দ্রাশিসসুলভ ছবি পরিচালক তৈরি করে যাবেন।