হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লেখেছিল পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে সে অনুরোধ জানিয়েছিল, মির্জাগঞ্জ থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করে দেয়ার জন্য। জবাবে সেতু নির্মাণ করা হবে বলে শীর্ষেন্দুকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু সেই সেতু নির্মাণে কোনো বিদেশি ঋণদাতা সংস্থার সাড়া পাওয়া যায়নি। এখন প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেতুটি নির্মাণে ‘কচুয়া-বেতালী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে (জেড-৮০৫২) পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি মঙ্গলবার (১০ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়/সেতু বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪২ কোটি ২৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী জেলার কচুয়া-বেতালী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কাসাইয়া সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার। এই সড়কের পয়ারা নদীর ওপর কোনো সেতু না থাকায় মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বর্তমানে এই সড়কের পায়রাকুঞ্জ অবস্থানে ফেরীর মাধ্যমে স্বল্প পরিসরে যানবাহন চলাচল অব্যাহত আছে। প্রস্তাবিত সেতুর অবস্থানে বর্ষায় নদীর গভীরতা ২০ মিটার এবং শীতকালে ১২ দশমিক ৫০ মিটার।
কচুয়া-বেতালী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর পায়রাকুঞ্জ নামক স্থানে ১৬৯০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের মাধ্যমে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী সদর এবং ঢাকার সরাসরি, নিরবচ্ছিন্ন এবং ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য।
এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৬০০ মিটার সংযোগ সড়ক, ডায়াডাক্টসহ ১৬৯০ মিটার সেতু, ১ হাজার মিটার গাইড বাঁধ নির্মাণ, ৮ দশমিক ৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ, নিরাপত্তা সেবা, বিস্তারিত নকশা পরামর্শক সেবা, নির্মাণ তদারকি পরামর্শক সেবা, টোল প্লাজা নির্মাণ, ওজন স্টেশন স্থাপন, টোল মনিটরিং ভবন, পুলিশ স্টেশন এবং প্রকল্পের জনবলের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, নদীর তীরে প্রতিরক্ষামূলক কাজ এবং অ্যাপ্রোচ সড়ক প্রভৃতি।
২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায় পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি লেখে। পরে প্রধানমন্ত্রী নিজেই চিঠির জবাব দেন।
প্রধানমন্ত্রী ওই চিঠির জবাবে বলেন, শীর্ষেন্দুর চিঠি পেয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত। নৌকায় নদী পার হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে ছেলেটির উদ্বেগের প্রশংসা করেন তিনি।
গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি ২০ সেপ্টেম্বর শীর্ষেন্দুর বিদ্যালয়ে পৌঁছায়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে শীর্ষেন্দু লেখে, ‘আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমার বাবার নাম বিশ্বজিৎ বিশ্বাস এবং মায়ের নাম শীলা রাণী সন্নামত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর শৈশবকাল নিয়ে রচনা লিখে আমি তৃতীয় স্থান অর্জন করি।’
শীর্ষেন্দু আরও লিখে, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়। আমাদের গ্রামের বাড়ি যেতে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদী পার হয়ে যেতে হয়। ওই নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ…কখনও নৌকা ডুবে যায়, কখনও কখনও ট্রলার ডুবে যায়। এসব দুর্ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। আমি আমার বাবা-মাকে হারাতে চাই না। কারণ আমি তাদের খুব ভালোবাসি। তাই আমাদের জন্য মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু তৈরির ব্যবস্থা করুন।’
শীর্ষেন্দু তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তার বাবা পটুয়াখালী শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং তার মা সমাজকল্যাণ অধিদফতরে চাকরি করেন। পটুয়াখালী শহরের পুরান বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন তারা।
পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণের অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখা পটুয়াখালীর খুদে শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাসকে পরে সংবর্ধনা দেয়া হয়। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আওড়াবুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এই সংবর্ধনা দেয়।