হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সংক্রমিত হলে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও নার্সসহ সংশ্লিষ্ট কেউ যেন সংক্রমিত না হন, সেজন্য তাদের প্রত্যেকের জন্য পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ব্যবহার অত্যাবশ্যক হবে। তবে বর্তমানে যে পরিমাণ পিপিই মজুত রয়েছে তা সীমিত। তাই করোনাভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়াতে পারে-এমন আশঙ্কাকে মাথায় রেখে দেশীয় একটি কোম্পানির মাধ্যমেই উন্নতমানের পিপিই উৎপাদনের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
কয়েকবছর আগে দেশে বার্ড ফ্লু দেখা দিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে পিপিই পেয়েছিল বাংলাদেশ।
তারা বলেন, দেশে করোনাভাইরাস ব্যাপকহারে সংক্রমিত না হলে মজুদ থাকা পিপিই দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে। তবে ব্যাপকহারে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হলে মজুদকৃত পিপিই দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়াতে পারে-এমন আশঙ্কাকে মাথায় রেখে দেশীয় একটি কোম্পানির মাধ্যমেই উন্নতমানের পিপিই উৎপাদনের চিন্তাভাবনা চলছে। স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, বিশ্বের বহু দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে দ্রুত পিপিই পাওয়া অনিশ্চিত হতে পারে। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে যে সকল দেশে আগেই কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে তাদের অগ্রাধিকার বেশি। এসব চিন্তাভাবনা থেকেই দেশীয় একটি কোম্পানির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে পিপিই প্রস্তুত করার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ ধরনের উদ্যোগের কথা স্বীকার করলেও এ ব্যাপারে এখনই বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এ রোগে আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত কেউ সংক্রমিত না হলেও সংক্রমিত যে হবে না-এমনটা বলা যায় না। এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে রাজধানীর উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চীনের উহান প্রদেশে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২১ জানুয়ারি থেকে দেশের তিনটি বিমানবন্দর ও পরবর্তীতে সকল স্থল, সমুদ্র ও রেল স্টেশনে থার্মাল ও হ্যান্ড স্ক্যানার দিয়ে হেলথ স্ক্রিনিং করানো হচ্ছে। শুক্রবার (৬ মার্চ) পর্যন্ত ৪ লাখ ৭৯ হাজার যাত্রীর স্ক্রিনিং হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোভিড-১৯-এ সংক্রমিত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।
ক্রমেই বেড়ে চলে চলেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও নিহতের সংখ্যা। চীন থেকে ছড়ানো এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৯১৪ জন। আর প্রাণহানি ঘটেছে তিন হাজার ৪৬৬ জনের।
আক্রান্তদের মধ্যে ৫৬ হাজার ১২৩ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ৪২ হাজার ৩২৫ জন। এর মধ্যে ছয় হাজার ৪০১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিশ্বের ৯৪টি অঞ্চল এবং দেশে ছড়িয়েছে এ ভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে শুধুমাত্র চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৫৭৬ জন। যার মধ্যে তিন হাজার ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৫৩ হাজার ৯২৯ জন। আর বাকি ২৩ হাজার ৬০৫ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ছয় হাজার ৫৯৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৩৫ জন সুস্থ হয়েছেন আর বাকি ছয় হাজার ৪১৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ইরানে এখন পর্যন্ত চার হাজার ৭৪৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণহানি ঘটেছে ১২৪ জনের। তিন হাজার ৭১০ জন চিকিৎসাধীন আছেন। বাকি ৯১৩ জন সুস্থ হয়েছেন। সর্বশেষ ভ্যাটিকান সিটিতে একজন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।