১৬ দিনব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী কর্মতৎপরতার প্রচারের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ৯ নারী রাষ্ট্রদূতের এক যৌথ নিবন্ধে একথা বলা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নয়টি জাতির প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশে নিযুক্ত নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমরা অনেক বিষয় নিয়েই কাজ করছি। তবুও আমরা এ ব্যাপারে একমত যে সারা বিশ্বে, আমাদের দেশে, এবং বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সাড়া দেওয়া ও এর প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা জরুরি ভিত্তিতে আমলে নেওয়া উচিত।
যৌথ নিবন্ধে বলা হয়, গবেষণায় দেখা গেছে যে- সারা বিশ্বে নারীর প্রতি সহিংসতা (জেন্ডার-বেজড ভায়োলেন্স — জিবিভি) ভয়ানক আকারে বিস্তৃত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনের একজন নারী তার জীবনে সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন নিপীড়নের শিকার হন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে শতকরা ৮৭ ভাগ বিবাহিত নারী তাদের স্বামীর হাতে নিগৃহীত হন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা সমস্ত সম্প্রদায়ের উপর হুমকিস্বরূপ, এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করে, এবং সহিংসতা ও দ্বন্দ্বকে উস্কে দেয়। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায় যে, নারীর উপর সহিংসতার উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাস্থ্যসেবা ব্যয়, নারীদের আয়ের উৎস হারানো, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, এবং বংশ পরম্পরায় নেতিবাচক প্রভাব।“ইউএন উইমেন” অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৪৪ বছর পর্যন্ত নারী ও মেয়েশিশুদের ক্ষেত্রে সমষ্টিগতভাবে ক্যান্সার, সড়ক দুর্ঘটনা, ম্যালেরিয়া এবং যুদ্ধের কারণে মৃত্যুর চেয়েও নারীর প্রতি সহিংসতা অধিকতর মৃত্যু ও শারীরিক অক্ষমতার কারণ।
যৌথ নিবন্ধে ৯ নারী রাষ্ট্রদূত বলেন, জীবন-সঙ্গীর কাছ থেকে সহিংসতার শিকার হওয়া থেকে শুরু করে যৌন হয়রানি এবং জোরপূর্বক বিয়েসহ নারীর প্রতি সহিংসতার বহু ধরন রয়েছে। সহিংসতা যে রকমই হোক তা আমাদের সামগ্রিক মানবতার জন্য কলঙ্ক, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বাধা এবং তা আমাদেরকে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহবান জানায়। সহিংসতা অত্যাবশ্যকীয় নয় এবং আমরা প্রত্যেকেই এটি বন্ধের জন্য কাজ করতে পারি।
“নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনের কর্মতৎপরতা” সবার জন্য এ ব্যাপারে কাজ করার একটি সুযোগ। প্রতি বছর ২৫শে নভেম্বর নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবসে ১৬ দিনের কর্মতৎপরতা শুরু হয়, যেটি ১০ই ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে শেষ হয়। জাতিসংঘের উদ্যোগে শুরু হওয়া এই প্রচারাভিযানে নারী ও পুরুষ, ছেলে ও মেয়ে, সরকারি কর্মকর্তা এবং কমিউনিটি নেতাসহ সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। পুরো পৃথিবী এবং বাংলাদেশ জুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী সচেতনতা ও প্রথা তৈরীতে মানুষ কাজ করছে যা এই অভিশাপ থেকে মুক্তির পূর্বশর্ত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নতুন ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে জাতিসংঘের সাথে কাজ করছে। নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পরস্পর সম্পর্কিত লিঙ্গসমতা এবং নারী ও কন্যাশিশুর ক্ষমতায়নে জোর দেয়। এই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই দৃষ্টিপাত করতে হবে যদি আমরা উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করতে চাই। এখন বাস্তবায়নের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। এ প্রচেষ্টায় অন্যান্য সরকার, বেসকারি খাত এবং বিশেষ করে সুশীল সমাজের সঙ্গে অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ।
যৌথ নিবন্ধে বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের জীবনে পদক্ষেপ নিতে পারি। ভুক্তভোগীদের কথা শুনে এবং তাদেরকে বিশ্বাস করে আমরা তাদেরকে সহায়তা করতে পারি। পুরুষ ও ছেলেদেরকে শেখাতে পারি যেন তারা নারী ও মেয়েদেরকে সহযোগিতা করে এবং তাদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে এবং বিদেশে আমাদের সরকারগুলো নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করে, নীতিনির্ধারকগণকে এই বিষয়ে শিক্ষা দেয় যেন আইনি সহায়তা বাড়ানো যায়, সেবাদানকারীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয় যেন তারা ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনীয়তাগুলোকে ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পারে, এবং বিচার ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে পারে। আমরা সেসকল প্রকল্পে অনুদান দেই যে সকল প্রকল্প ভুক্তভোগীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও কারিগরি শিক্ষা প্রদান করে এবং ধর্মীয়, ব্যবসায়িক এবং সামাজিক নেতাদের সাথে কাজ করি যেন নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা বন্ধ করা যায়।
যৌথ নিবন্ধে ৯ নারী রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা এই উদ্যোগের সাথে জড়িত হয়েছি কারণ আরও একটি বিষয়ে আমরা সকলে একমতঃ শুধুমাত্র সমষ্টিগত পদক্ষেপের মাধ্যমেই নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব।
যৌথ নিবন্ধে স্বাক্ষরকারী ৯ নারী রাষ্ট্রদূত হলেন- পেমা শোডেন, রাজকীয় ভুটান দূতাবাস; ওয়ানজা ক্যাম্পোস দ্য নব্রেগা, ব্রাজিল; হ্যান ফুগল এস্কেয়ার, ডেনমার্ক; সোফি অবেয়ার, ফ্রান্স; ম্যাডাম নোরলিন বিন্তি ওসমান, মালয়েশিয়া; লিওনি মার্গারিটা কুয়েলেনায়ের, নেদারল্যান্ডস; মেরেটে লুন্ডিমো, নরওয়ে; ইয়াসোজা গুনাসেকেরা, শ্রীলঙ্কা ও মার্শা বার্নিকাট, যুক্তরাষ্ট্র।