হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঘরের বাইরের দূষিত বাতাস আমাদের আয়ু গড়ে প্রায় তিন বছর পর্যন্ত কমিয়ে দিচ্ছে। আর ধূমপানের ফলে যে পরিমাণ আয়ু কমে তার চেয়ে অনেক বেশি কমায় বায়ু দূষণ। এই কারণে এশিয়ার দেশগুলোতে গড় আয়ু চার বছরের মতো হ্রাস পেয়েছে।
যে কারণে বায়ু দূষণকে ‘নতুন ধরনের ধূমপান’ বলা হচ্ছে। ফুসফুসের অসুখ, ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক এসব মারাত্মক রোগের সঙ্গে বায়ু দূষণের সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে হৃদরোগের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়। এরপরেই রয়েছে ফুসফুসের সংক্রমণ। আর বায়ু দূষণের কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন বয়স্ক ব্যক্তিরা।
কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, যুদ্ধসহ সব ধরনের সংঘাতে পৃথিবীতে প্রতিবছর মানুষের আয়ু যতটা কমে, তার চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি গড় আয়ু কমে বায়ু দূষণের কারণে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর মৃত্যুর হার ধূমপানের ফলে হওয়া মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। গবেষণায় ২০১৫ সালে মানুষের গড় আয়ু ও মৃত্যুর হার গণনা করা হয় এবং তারা দেখতে পেয়েছেন, বায়ু দূষণের কারণে পৃথিবীতে ৮৮ লাখ মানুষ মারা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে ধূমপানের কারণে প্রতিবছর ৮২ লাখের বেশি মানুষ মারা যায় বিশ্ব জুড়ে। এর মধ্যে ৭০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায় সরাসরি সিগারেট এবং তামাকজাত পণ্য ব্যবহারের কারণে।
বিশ্ব মহামারী
দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে একজন মানুষের হৃদরোগ এবং ফুসফুসের অসুখ হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া স্বাস্থ্যের ওপর
অন্য নেতিবাচক প্রভাব তো আছেই। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক থমাস মুনজেল মনে করেন, এখন বায়ু দূষণের বিশ্ব-মহামারী চলছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, গত কয়েক দশকে ধূমপানের তুলনায় বায়ু দূষণের দিকে অনেক কম মনোযোগ দেয়া হয়েছে। এখন নীতি নির্ধারক এবং চিকিৎসকদের বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমন যদি শূন্যে নামিয়ে আনা যেত, তাহলে মানুষের গড় আয়ু অন্তত এক বছর বাড়ানো যেত।
আঞ্চলিক ও জাতীয় ক্ষতি
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, বায়ু দূষণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবসমূহ জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রভাব ফেলে। এর প্রভাব
একেক দেশে একেক রকম হয়। যেমন পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে গড় আয়ু চার বছরের মতো হ্রাস পেয়েছে, যেখানে গড়
আয়ু সবচেয়ে কম হ্রাস পেয়েছে ওশেনিয়াতে। আবার কলম্বিয়াতে কমেছে চার মাসের কিছু বেশি সময়। এছাড়া আফ্রিকার
চাঁদে বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছে সাত বছরের বেশি।
মনুষ্যসৃষ্ট নির্গমন
গবেষকরা মানুষের কারণে হওয়া দূষণ এবং প্রাকৃতিক কারণে হওয়া বায়ু দূষণ- যেমন মরুর লু হাওয়া এবং দাবানলের কারণে হওয়া দূষণ- দুটোই পরীক্ষা করে দেখেছেন। তাতে দেখা গেছে পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ অকাল মৃত্যুর কারণ যে দূষণ তা মূলত মানুষের সৃষ্টি।
অধ্যাপক মুনজেল বলেন, ‘এ হার উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তার মানে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর বিশ্ব জুড়ে ৫৫ লাখের মতো মৃত্যু পুরোপুরি এড়ানো যেত যদি বায়ু দূষণ না থাকতো।’
এছাড়া বায়ু দূষণের সঙ্গে ছয় ধরনের রোগ, যেমন উচ্চ রক্তচাপ ও ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো রোগের সংযোগ নিরীক্ষা করে দেখেছে বিজ্ঞানীদের এই দলটি। তারা দেখেছেন, এর মধ্যে হৃদরোগের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়। এরপরেই রয়েছে ফুসফুসের সংক্রমণ। আর বায়ু দূষণের কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন বয়স্ক ব্যক্তিরা।
আরেক গবেষক হোসে লেলিভেল্ড বলেন, বায়ু দূষণ অক্সিডেটিভ চাপ বাড়িয়ে মানুষের হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর ক্ষতি করে, যা পরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক হার্ট-অ্যাটাক এবং হার্ট-ফেলের কারণ হয়ে ওঠে।
বয়স্ক মানুষ বেশি ঝুঁকিতে
গবেষকরা দেখেছেন, বায়ু দূষণের কারণে সবচেয়ে বিপদে পড়েন বয়স্ক ব্যক্তিরা। সারা দুনিয়ায় এ কারণে যত মৃত্যু হয়
তার ৭৫ শতাংশই ঘটে যাদের বয়স ৬০ এর ওপরে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রোগ-তত্ত্ববিদ স্যামুয়েল চাই বলেছেন, বায়ু দূষণ যে নতুন ধূমপান এ তো আর গোপন কথা নয়, সুতরাং জনস্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের এখন এ নিয়ে সিরিয়াস হবার সময় এসেছে।
এখন বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নীতি তৈরি করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।
সূত্র: বিবিসি