হাওর বার্তা ডেস্কঃ আধুনিক নাগরিক জীবনে অতিরিক্ত কাজের চাপ, দুশ্চিন্তার কারণে যেকোনো সময় রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। যা থেকে ঘটে যেতে পারে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
সাধারণত রক্তচাপ বৃদ্ধির হার বোঝা কঠিন। ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণে হৃদরোগ বা স্ট্রোক হতে পারে। এ কারনে চিকিৎসকরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাকে ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’ হিসেবেই গণ্য করে থাকেন।
চিকিৎসকদের মতে, অতীতে বয়স্কদের মধ্যেই রক্তচাপজনিত সমস্যা বেশি হতো। কিন্তু বর্তমানে তরুণদের মধ্যেও রক্তচাপজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি মোকাবেলায় বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণদেরও মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
কত থাকলে বিপদ নেই?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পূর্বে এক জন সুস্থ ব্যক্তির রক্তচাপের স্বাভাবিক হার ছিল ১২০/৮০। কিন্তু বর্তমানে রক্তচাপের স্বাভাবিক হার ১৩০। সম্প্রতি আমেরিকার হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশকায়ও একই মত পোষণ করা হয়। এছাড়া হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তচাপ বৃদ্ধির হার ১৪০ হলেও শঙ্কার কোনোও কারণ নেই। বরং এর চেয়ে বেশি হলেই তা উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে পরিগণিত হবে।
ভাবনা কোথায়?
বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই রক্তচাপ মাপার যন্ত্র রয়েছে। ফলে কষ্ট করে ডাক্তারের নিকট যেতে হয় না। অনেক সময় দেখা যায়, বাড়িতে প্রেশার নিয়ন্ত্রণে ছিল কিন্তু চিকিৎসকের যাওয়ার পরে প্রেশার কিছুটা বেড়ে যায়। এই প্রবণতার নাম ‘হোয়াইট কোট হাইপার টেনশন’।
কোনো ব্যক্তির এ ধরনের সমস্যা হলে ওই অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে পোর্টেবল ব্লাড প্রেশার মেশিন দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়।
আবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়ার পরেও তা সহজে নিয়ন্ত্রণে আসে না। বয়স্ক ও হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক বেশি হয়।
এছাড়া থাইরয়েড, কোলেস্টেরল বা কিডনিজনিত সমস্যায় রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। সেক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসার জন্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
রক্তচাপ বেশি মানেই লবণ বন্ধ?
প্রচলিত বিশ্বাস মতে, অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসক গৌতম বরাটের মতে, যেকোনো সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ২.৩ গ্রাম সোডিয়াম খাওয়া উচিত। একেক দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন ভিন্ন। ফলে লবণ খাওয়ার পরিমাণ একেক অঞ্চলের জন্যে কিছুটা ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিদিন খাবারে যে পরিমাণ লবণ মেশানো হয়, তার চেয়ে বরং ৫ থেকে ১০ গ্রাম লবণ কম মেশানো উচিত। আর কাঁচা লবণ খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর পরিবর্তে অল্প পরিমাণে সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
যেসব সাবধানতা মেনে চলতে হবে:
৩০ বছর থেকেই নিয়মিত রক্তচাপ মেপে চলাফেরা করা উচিত।
১. অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান, চা-কফি পান পরিহার করতে হবে।
২. বিরিয়ানির মাংস খাওয়ায় বেশি ক্ষতি নেই। কারণ বিরিয়ানি বা ভাত বা মাংসের ঝোলে মাংসে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। তবে বিরিয়ানির মাংস খাওয়ার সময় নিজেকে সংযত রাখতে হবে।
৩. নিয়মিত সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। এছাড়া পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফলমূল খাওয়ার ওপর বেশি জোর দিতে হবে।
৪. অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার পরিমাণ বাদ দিতে হবে। কিন্তু শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি পূরণের জন্যে যতটুকু লবণ খাওয়া উচিত, তা নিয়মিত খেতে হবে।