ডুমুর অনেকের কাছেই খুব পরিচিত একটি নাম। ডুমুর দামে সস্তা, কিন্তু তরকারি খুবই পুষ্টিকর। বাড়ির আশেপাশে বেশ অবহেলায় বড় হতে দেখা যায় এই গাছটিকে। অনেকেই ডুমুর খান, তবে বেশিরভাগই এর গুণাগুণ সম্পর্কে জানেন না।
ডুমুর নরম ও মিষ্টিজাতীয় ফল। ফলের আবরণ ভাগ খুবই পাতলা এবং এর অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ রয়েছে। এর ফল শুকনো ও পাকা অবস্থায় ভক্ষণ করা যায়। উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এ প্রজাতির গাছ জন্মে। কখনো কখনো জ্যাম হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও, স্ন্যাকস জাতীয় খাবারেও ডুমুরের প্রয়োগ হয়ে থাকে।
ডুমুর আদিকাল থেকেই ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আমাদের দেশে সাধারণত দু’ধরনের ডুমুর দেখা যায়। কাকডুমুর ও যজ্ঞ ডুমুর। চলুন জেনে নেয়া যাক ডুমুরের অবিশ্বাস্য গুণাগুণ সম্পর্কে-
> অনেকেরই বার বার খুদা লাগার প্রবণতা দেখা যায়। যা দেহের ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী। যা একসময় অনেক মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করে। এ রোগ হলে কাকডুমুরের ফলের রস ২ চা চামচ করে প্রতিদিন এক থেকে দুই বার পান করুন। দুই থেকে তিন দিনেই ফল দেখতে পাবেন।
> অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগলে পাকা কাকডুমুর কেটে রোদে শুকিয়ে নিন। এরপর প্রতি ৫ গ্রাম মাত্রায় আধাকাপ দুধ ও ২ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে আধা কাপ করে নিন। তারপর ডুমুরসহ সে পানি পান করুন।
> ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডুমুরের রস খুবই উপকারী। নিয়ম করে ডুমুরের রস কিংবা ডুমুর খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কিছুদিন খাওয়ার পরই ফলাফল দেখতে পারবেন।
> প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ টি ডুমুর খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
> নারীদের পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তস্রাব হলে কচি ডুমুরের রসের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
> ডুমুর পিত্ত ও আমাশয় রোগে উপকারী।
> এতে অধিক পরিমাণে লোহা বিদ্যমান (অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে)।
> রক্তপিত্ত, রক্তপড়া এবং রক্তহীনতা রোগে উপকারী।
> জ্বরের পর ডুমুর রান্না করে খেলে এটি টনিকের কাজ করে।
> দুধ ও চিনির সঙ্গে ডুমুরের রস খেলেও অধিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়।
> আমাশয় হলে ৩ দিন কচি ডুমুরের পাতা আতপ চালের সঙ্গে চিবিয়ে খেলে ভালো হয়।
> সাদা ও রক্ত আমাশয় হলে ডুমুর গাছের ছালের ২ চামচ রস এবং মধু মিশিয়ে দুই বেলা খেলে উপকার হয়।
> মাথা ঘোরা রোগে ডুমুর ভাজি করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
> অতিরিক্ত হেঁচকি উঠলে ডুমুরের বাইরের অংশ কেটে পানিতে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ঐ পানি ছেঁকে এক চা চামচ করে খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়।
> ডুমুর গাছের ছাল পানিসহ সিদ্ধ করে সেই পানি দ্বারা ত্বক ধৌত করলে চর্মের বিবর্ণতা এবং ক্ষত রোগে উপকার হয়।
> দুধের সঙ্গে ডুমুর সিদ্ধ করে প্রলেপ দিলে ফোঁড়া পাকে।
> ক্ষুধামন্দা রোগে ১ চা চামচ কাঁচা ডুমুরের রস খাওয়ার পর সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
সতর্কতা
ডুমুর খাওয়া যেমন উপকারী তেমনি রয়েছে এর কিছু অপকারিতাও। যেমন অতিরিক্ত ডুমুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাছাড়া যকৃৎ, পাকস্থলী ও দাঁতের জন্যও অতিরিক্ত ডুমুর খাওয়া ক্ষতিকর।