হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন রাজধানীর ধানমন্ডি, শুক্রবাদ বাসিন্দারা। শনিবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে ভোট শুরুর পর দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখানকার কেন্দ্রেগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি এখনো কম দেখা যাচ্ছে।
সকাল থেকে ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কলাবাগানসহ বেশকিছু কেন্দ্র ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের থেকে প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের আনাগোনা বেশি দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ধানমন্ডির বাসিন্দা হাসনাত বলেন, ‘ভোটারদের মধ্যে আগের মতো আর উৎসাহ উদ্দীপনা নেই। আগে দেখতাম, ভোটের আগেই ভোট দিতে মানুষের দীর্ঘ লাইন হয়ে যেত। আর এখন ভোট শুরু হয়ে যাওয়ার পরও ভোটারদের দেখা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে রামপুরার বাসিন্দা আব্বাস বলেন, ‘ভোটারদের মধ্যে আগের মতো আর উৎসাহ উদ্দীপনা নেই। আগে দেখতাম, ভোটের আগেই ভোট দিতে মানুষের দীর্ঘ লাইন হয়ে যেত। আর এখন ভোট শুরু হয়ে যাওয়ার পরও ভোটারদের দেখা যাচ্ছে না।’
সোহেল নামের একজন বলেন, ‘সকাল হওয়ার কারণে এখন ভোটারদের উপস্থিতি কম। আমাদের ধারণা, ১০টার পর থেকে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে। এখন আমার মতো কর্মী-সমর্থকদের ভিড় বেশি থাকলেও দুপুরে ভোটারদের ভিড় বেশি দেখতে পাবেন।’
এদিকে, ইভিএমে ভোট দিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ভোটাররা। এ মেশিনে ভোট দেয়া খুব সহজ বলেও অভিমত তাদের।
তাহসান নামের এক ভোটার বলেন, ‘ইভিএমে ভোট দেয়া এত সহজ আগে জানতাম না। ভোটকক্ষে কীভাবে ভোট দিতে হবে তাও দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলে দিচ্ছেন। আগের থেকে ভোটের এই পদ্ধতি ভালো।’
শুক্রাবাদ সরকারি প্রাথমিক কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, ‘সকাল থেকেই ভোটাররা ভোট দিতে আসছেন। কয়টি ভোট পড়ল তা সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারের মনিটরে ভেসে উঠছে। তবে কে কোন প্রতীকের ভোট দিচ্ছেন তা মনিটরে দেখা যাবে না। শুধু ভোট সংখ্যা দেখা যাবে। আমাদের এখানে ভোটের পরিবেশ খুব ভালো।’
প্রসঙ্গত, এবারের সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৭৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উত্তর সিটিতে ওয়ার্ড রয়েছে ৫৪টি। ঢাকা দক্ষিণে ৭ জন মেয়র পদের জন্য লড়ছেন। কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী প্রার্থী হয়েছেন ৮২ জন। দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড। ঢাকায় ভোটারসংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। ঢাকা উত্তর সিটির ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮। এসব কেন্দ্রে ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি। দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র এবং ভোট কক্ষ রয়েছে ৬ হাজার ৫৮৮টি।
এবার ঢাকা উত্তরে ৮২৬ আর দক্ষিণে ৭২১টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও নজরদারি।
ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভেটের ফলাফল ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ৪ ঘন্টার মধ্যে জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অবশ্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল ঘোষণার জন্য এক ঘন্টাই যথেষ্ট বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
ভোটকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে রয়েছে কড়া নিরাপত্তা। যানবাহন চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। তবে কিছু যানবাহন চলতে পারবে অনুমতি সাপেক্ষে। জরুরি বাহন এর আওতামুক্ত থাকবে।
সদরঘাটে নৌ চলাচলও শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার থাকছে ভোটের নিরাপত্তায়।
সিটি নির্বাচন এবার নানান দিক থেকে ছিল আলোচিত। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা সমানতালে প্রচার চালিয়েছেন। ব্যাপক ধরনের ধরপাকড়, হামলার অভিযোগ অন্যবারের চেয়ে কম ছিল।
বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনের গণসংযোগে হামলার ঘটনা ছাড়া বিএনপি থেকেও বড় কোনো অভিযোগ ছিল না। দুই দলের কর্মীদের মধ্যেই উৎসবের আমেজ ছিল।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও বলেছেন, এবারের নির্বাচনে তাদের বড় পাওয়া সবাইকে নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারা।
প্রধান চার প্রতিদ্বন্দ্বী আতিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল, শেখ ফজলে নূর তাপস, ইশরাক হোসেন তাদের প্রচারে অকপটে স্বীকার করেছেন, ঢাকার অবস্থা খুব ভালো নয়। তাঁরা ঢাকাকে বাঁচাতে চান।
এ ছাড়া গত বছরের ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা নিয়ে চারজনই কথা বলেছেন। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে তারা মশা নিধনের কার্যক্রমকে নিজেদের ইশতেহারে প্রাধান্য দিয়েছেন।