ঢাকা ০৩:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক রাজার ১০০ বউ, সন্তান কত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩২:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৫
  • ৪১৮ বার

দু’চার-পাঁচটা নয় এক রাজার বউ ১০০ জন। আর সন্তান ৫০০। এমন কথা শুনলে যে কারো চোখ কপালে উঠার কথা। কিন্তু ঘটনা বেমালুম মিথ্যা নয়, তাদের নিয়েই সুখের সংসার ক্যামেরুনের বাফুট প্রদেশের রাজা আবুম্বির। অবশ্য এতগুলো বিয়ে করেননি তিনি৷ সিংহাসনে বসার পরই বেড়ে গেছে তার সংসার৷ স্থানীয় রীতি মেনে ১০০ জন স্ত্রীর সঙ্গলাভ করেছেন তিনি৷ ঘটনা হলো, ক্যামেরুনের এই প্রদেশে কোনো রাজার মৃত্যু হলে তার স্ত্রীদের দায়িত্ব নিতে হয় পরবর্তী রাজাকেই৷ সেই রীতি মানতেই ক্যামেরুনের বাফুট প্রদেশের ১১তম রাজা আবুম্বিরও স্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০ জনে৷ যখন তিনি রাজ্যাভিষেক হয়েছিলেন তখন তার মাত্র দু’টি স্ত্রী ছিল৷ রাজার প্রত্যেক স্ত্রীই শিক্ষিত৷ পাশাপাশি তারা বেশ কয়েকটি ভাষাতেও কথা বলতে পারেন। ১৯৬৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর রাজ্যাসন হন আবুম্বি৷ ক্যামেরুনে বহুবিবাহকে এখনো বেআইনি ঘোষণা করা হয়নি৷ স্থানীয় রীতি, সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাই তার উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন রাজা আবুম্বি৷ আফ্রিকা মহাদেশের ক্যামেরুনের একটি অঞ্চল বাফুট। বাফুটের রাজাদের বলা হয় ফন। বর্তমান রাজার নাম দ্বিতীয় আবুম্বি, যিনি বাফুটের ১১তম রাজা। বাস্তবে রূপকথায় রাজ্য। ১৯৬৮ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার রেখে যাওয়া ৭২ স্ত্রীকে গ্রহণ করে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে হয় আবুম্বিকে। রাজার প্রকৃত মা বা বোন রাজার সহায়িকা এবং প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করে থাকেন। রাজার বড় ভাইকে মুমা এবং ছোট ভাইকে নিমফর বলা হয়, যারা রাজ্য পরিচালনায় ফনকে সহায়তা করে থাকেন। কিন্তু ফনের হঠাৎ মৃত্যু বা পদত্যাগে তার ভাইয়েরা রাজ্য শাসনের ক্ষমতা পান না। রাজা আবুম্বির মতে, তার রাজ্যের জনগণের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি লালন করা ও রক্ষার দায়িত্ব তার। এ জন্য তার স্ত্রীরা তাকে সহযোগিতা করেন। এসবের বাইরেও একজন রাজার বেশকিছু দায়িত্ব রয়েছে। তিনি বহির্বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে থাকেন। রাজ্যের সব ধরনের বিচারকাজ তার নামে পরিচালিত হয়। কেননা তিনিই সেখানকার চূড়ান্ত আদালত এবং তারই সিদ্ধান্তে অপরাধীকে শাস্তি দেয়া বা মওকুফ করা হয়। রাজাই এই রাজ্যের প্রধান যাজক। তিনি পূর্বপুরুষদের শান্তি প্রার্থনা করে বলি দেন। ক্যামেরুনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ‘আবিন-ই-মফর’-এ সবার মধ্যমণি হিসেবে সব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ক্যামেরুনের বাফুট রাজ্যটি ঐতিহ্যবাহী এবং একই সঙ্গে আধুনিক শাসনব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া বাফুট রাজ্যের একটি অন্যতম আকর্ষণ হলো- রাজা দ্বিতীয় আবুম্বির রাজবাড়ি। রাজপ্রাসাদ বলতে যেমন বড় বড় অট্টালিকা বুঝি আমরা, আবুম্বির রাজবাড়ি কিন্তু তা নয়। তার এই রাজবাড়িকে ‘টহ’ নামে ডাকা হয়ে থাকে। এটি তৈরি হয়েছে কাঠ এবং পুষ্পলতা দিয়ে। ২০০৬ সালে এটিকে ক্যামেরুনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন পর্যটন এলাকা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। রাজবাড়ি ঘিরে রয়েছে একটি ‘পবিত্র বন’। উত্তর-পশ্চিম ক্যামেরুনের বাফুট প্রাসাদটি ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজ্যের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। বাফুটের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আচার এবং প্রথাগত অনুষ্ঠান সবকিছুই এটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। রাজবাড়িতে ৫০টির বেশি ঘর রয়েছে। এগুলো বাফুটের ফন ও তার স্ত্রীদের বসবাস এবং রাজার দরবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রাজবাড়িতে অবস্থিত তালপাতায় ঘেরা কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি উপাসনালয়টি ভক্তিমূলক স্থাপনার দারুণ এক নিদর্শন। এখানে বাফুটের প্রথম তিন রাজা ফিরলো, নেবাসি শু ও আম্বেবির সমাধি রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এক রাজার ১০০ বউ, সন্তান কত

আপডেট টাইম : ১১:৩২:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৫

দু’চার-পাঁচটা নয় এক রাজার বউ ১০০ জন। আর সন্তান ৫০০। এমন কথা শুনলে যে কারো চোখ কপালে উঠার কথা। কিন্তু ঘটনা বেমালুম মিথ্যা নয়, তাদের নিয়েই সুখের সংসার ক্যামেরুনের বাফুট প্রদেশের রাজা আবুম্বির। অবশ্য এতগুলো বিয়ে করেননি তিনি৷ সিংহাসনে বসার পরই বেড়ে গেছে তার সংসার৷ স্থানীয় রীতি মেনে ১০০ জন স্ত্রীর সঙ্গলাভ করেছেন তিনি৷ ঘটনা হলো, ক্যামেরুনের এই প্রদেশে কোনো রাজার মৃত্যু হলে তার স্ত্রীদের দায়িত্ব নিতে হয় পরবর্তী রাজাকেই৷ সেই রীতি মানতেই ক্যামেরুনের বাফুট প্রদেশের ১১তম রাজা আবুম্বিরও স্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০ জনে৷ যখন তিনি রাজ্যাভিষেক হয়েছিলেন তখন তার মাত্র দু’টি স্ত্রী ছিল৷ রাজার প্রত্যেক স্ত্রীই শিক্ষিত৷ পাশাপাশি তারা বেশ কয়েকটি ভাষাতেও কথা বলতে পারেন। ১৯৬৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর রাজ্যাসন হন আবুম্বি৷ ক্যামেরুনে বহুবিবাহকে এখনো বেআইনি ঘোষণা করা হয়নি৷ স্থানীয় রীতি, সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাই তার উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন রাজা আবুম্বি৷ আফ্রিকা মহাদেশের ক্যামেরুনের একটি অঞ্চল বাফুট। বাফুটের রাজাদের বলা হয় ফন। বর্তমান রাজার নাম দ্বিতীয় আবুম্বি, যিনি বাফুটের ১১তম রাজা। বাস্তবে রূপকথায় রাজ্য। ১৯৬৮ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার রেখে যাওয়া ৭২ স্ত্রীকে গ্রহণ করে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে হয় আবুম্বিকে। রাজার প্রকৃত মা বা বোন রাজার সহায়িকা এবং প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করে থাকেন। রাজার বড় ভাইকে মুমা এবং ছোট ভাইকে নিমফর বলা হয়, যারা রাজ্য পরিচালনায় ফনকে সহায়তা করে থাকেন। কিন্তু ফনের হঠাৎ মৃত্যু বা পদত্যাগে তার ভাইয়েরা রাজ্য শাসনের ক্ষমতা পান না। রাজা আবুম্বির মতে, তার রাজ্যের জনগণের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি লালন করা ও রক্ষার দায়িত্ব তার। এ জন্য তার স্ত্রীরা তাকে সহযোগিতা করেন। এসবের বাইরেও একজন রাজার বেশকিছু দায়িত্ব রয়েছে। তিনি বহির্বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে থাকেন। রাজ্যের সব ধরনের বিচারকাজ তার নামে পরিচালিত হয়। কেননা তিনিই সেখানকার চূড়ান্ত আদালত এবং তারই সিদ্ধান্তে অপরাধীকে শাস্তি দেয়া বা মওকুফ করা হয়। রাজাই এই রাজ্যের প্রধান যাজক। তিনি পূর্বপুরুষদের শান্তি প্রার্থনা করে বলি দেন। ক্যামেরুনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ‘আবিন-ই-মফর’-এ সবার মধ্যমণি হিসেবে সব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ক্যামেরুনের বাফুট রাজ্যটি ঐতিহ্যবাহী এবং একই সঙ্গে আধুনিক শাসনব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া বাফুট রাজ্যের একটি অন্যতম আকর্ষণ হলো- রাজা দ্বিতীয় আবুম্বির রাজবাড়ি। রাজপ্রাসাদ বলতে যেমন বড় বড় অট্টালিকা বুঝি আমরা, আবুম্বির রাজবাড়ি কিন্তু তা নয়। তার এই রাজবাড়িকে ‘টহ’ নামে ডাকা হয়ে থাকে। এটি তৈরি হয়েছে কাঠ এবং পুষ্পলতা দিয়ে। ২০০৬ সালে এটিকে ক্যামেরুনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন পর্যটন এলাকা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। রাজবাড়ি ঘিরে রয়েছে একটি ‘পবিত্র বন’। উত্তর-পশ্চিম ক্যামেরুনের বাফুট প্রাসাদটি ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজ্যের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। বাফুটের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আচার এবং প্রথাগত অনুষ্ঠান সবকিছুই এটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। রাজবাড়িতে ৫০টির বেশি ঘর রয়েছে। এগুলো বাফুটের ফন ও তার স্ত্রীদের বসবাস এবং রাজার দরবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রাজবাড়িতে অবস্থিত তালপাতায় ঘেরা কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি উপাসনালয়টি ভক্তিমূলক স্থাপনার দারুণ এক নিদর্শন। এখানে বাফুটের প্রথম তিন রাজা ফিরলো, নেবাসি শু ও আম্বেবির সমাধি রয়েছে।