হাওর বার্তা ডেস্কঃ চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর-সংস্থাগুলোও এ ব্যাপারে তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে আসছে। সেই প্রস্তুতিরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে খোলা হয়েছে ‘করোনাভাইরাস আইসোলেশন ইউনিট’। এটিকে রেফারেল হাসপাতাল হিসেবে নির্দিষ্ট করে আইসোলেশন ইউনিট এজন্য খোলা হয়েছে, যেন বিদেশ থেকে, বিশেষ করে চীন থেকে আগত কোনো যাত্রী ‘নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত’ বলে চিহ্নিত হলে তাকে দ্রুত এখানে এনে চিকিৎসা দেয়া যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নির্দেশনা অনুসারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর তাকে আলাদাভাবে রেখে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়াই তড়িঘড়ি করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ‘করোনাভাইরাস আইসোলেশন ইউনিট’ খোলা হয়েছে! করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হলে তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীর কিছুই নেই। যারা স্বাস্থ্যসেবা দেবেন তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যে পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) প্রয়োজন, তারও সরবরাহ নেই।
একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে চীনের এক নাগরিক জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে যান। চিকিৎসকরা তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তিনি গত ২২ জানুয়ারি (বুধবার) চীন থেকে এসেছেন। সম্ভাব্য করোনাভাইরাসের রোগী হিসেবে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। নমুনা হিসেবে লালা দিয়ে বাসায় ফিরে যান ওই রোগী।
সরকারিভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে রেফারেল হাসপাতাল হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রেজা জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল নয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় রাজধানীসহ সারাদেশের মেডিকেল কলেজ ও সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুসারে এ হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে।’
আইসোলেশন ইউনিট পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নট অ্যাট অল। এমনিতেই এ হাসপাতালে বরাদ্দকৃত জনগণের চেয়ে কম সংখ্যক জনবল রয়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো ডাক্তার-নার্স নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে সীমিত জনবল থেকেই ম্যানেজ করে আইসোলেশন ইউনিট পরিচালনা করা হবে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার সাথে জড়িত ডাক্তার-নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) অত্যাবশ্যক। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পর্যাপ্ত পিপিই রয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে পিপিই সরবরাহ নেই। তবে আজ (মঙ্গলবার) প্রয়োজনীয় সংখ্যক পিপিই সরবরাহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।’
হাসপাতালে সম্ভাব্য কোনো করোনাভাইরাসের রোগী ভর্তি হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। তবে আজ (মঙ্গলবার) সকালে একজন চীনা নাগরিক সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসকরা তার সঙ্গে কথা বলে আইইডিসিআরের পাঠান। সেখানে তিনি নমুনা পরীক্ষা করতে দিয়েছেন।’
এদিকে, চীনে করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সবশেষ দেশটিতে করোনাভাইরাসে ১০৬ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। নতুন করে আরও এক হাজার ৩০০ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত মোট চার হাজার ১৯৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলো।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (২৭ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এ ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে করণীয় বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে বিমানবন্দর, নৌ ও স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে আগতদের করোনাভাইরাস স্ক্রিনিং (শনাক্ত) কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিমানবন্দরের কোয়ারেন্টাইন (আক্রান্তকে আলাদাকরণ) ওয়ার্ড।
আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আপাতত দেশের আটটি বিভাগের সকল জেলা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ইউনিট খোলা হবে।