ঢাকা ০৬:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানসিক রোগের তালিকায় ভিডিও গেম আসক্তি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২০
  • ২২৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  রাজধানীতে বসবাস করছেন এমন অনেকের বাড়িতে দেখা গিয়েছে তাদের শিশুরা ভিডিও গেম খেলছে। একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুইটি শিশু ছুটির দিনের অবসরে ভিডিও গেম খেলতে ব্যস্ত। এ বিষয়ে শিশু দুইটির মা জানান, স্কুল শেষে অবস পেলেই তারা ঝুঁকে পড়ে প্লে-স্টেশন না হলে স্মার্টফোন বা ট্যাবের স্ক্রিনে।

শিশুদের মা মনে করেন, যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়া এবং সেই সঙ্গে বাইরে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় ভিডিও গেমেই সন্তানরা অবসরের আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে। ‘আমি আমাদের ছেলেদের অনেক ভালো ভালো লেখকদের বই কিনে দেই। আমি চাই ওরা বই পড়ে শিখুক। কিন্তু না, তাদের কথা হলো—তাদের সব বন্ধুরা গেম খেলছে, তারাও খেলবে।’

সেই সঙ্গে শহরগুলোয় পর্যাপ্ত বিনোদনের অভাবকেও এই গেমে আসক্তির জন্য দায়ী করেন তিনি। ‘এখনকার অ্যাপার্টমেন্টগুলোয় খেলার কোনো জায়গা নেই। আমরা তো গ্রামে খোলামেলা পরিবেশে বড়ো হয়েছি। কিন্তু আমার বাচ্চারা তো সেই জায়গাটা পাচ্ছে না। এই ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের যতটা না উপকার করছে তার চেয়ে বাচ্চাদের পিছিয়ে ফেলছে বেশি।’

ভিডিও গেমের প্রতি শিশু-কিশোরদের আগ্রহ নতুন কিছু নয়। তবে এই আসক্তিকে সম্প্রতি ‘মানসিক রোগের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বহু দিন ধরে বলছিলেন, ভিডিও গেমের অতিরিক্ত আসক্তিতে এক দিকে যেমন শিশু-কিশোরদের সামাজিকীকরণ বাধাগ্রস্ত হয়, তেমনি মেধা বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিষয়টিকে নজরে নিয়ে ব্রিটেনসহ কয়েকটি দেশ বিশেষ ক্লিনিক স্থাপনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত মনিটরিং শুরু করলেও এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ। প্লে-স্টেশনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা একটা গেমের প্রায় পুরোটা জুড়েই দেখা যায়, যুদ্ধ সহিংসতা আর রক্তপাত। এই খেলাগুলো আসলে শিশুদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরিন ওয়াদুদ বিবিসিকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত এসব ভিডিও গেম খেললে শরীরে এক ধরনের হরমোন নিঃসারণ হয়। এতে শিশু সবকিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক রোগ শ্রেণিকরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সবকিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এছাড়া কারো সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই।

গেমিং ডিজঅর্ডারের লক্ষণ

‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ এর এমন বিভিন্ন লক্ষণের ব্যাপারে ড. ওয়াদুদ বলেন, ‘লক্ষ্য রাখতে হবে শিশু কতটুকু সময় ধরে গেম খেলছে। মা-বাবা খেলা বন্ধ করতে বললে সে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিছু কিছু বাচ্চা আছে যাদের গেম খেলতে নিষেধ করলে তারা ভীষণ রেগে যায়, ভীষণ চ্যাঁচামেচি করে। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে সে হয়তো গেমে আসক্ত।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে গেমারদের দুই থেকে তিন শতাংশ ‘গেমিং ডিজঅর্ডারে’ ভোগে। শতাংশের হিসেবে সংখ্যাটি কম মনে হলেও বিশ্বের অনেক দেশই গেমিংয়ের আসক্তি নিয়ে চিন্তিত। দক্ষিণ কোরিয়ায় তো সরকার এমন আইন করেছে যাতে ১৬ বছরের কম বয়সি শিশুরা মধ্যরাত থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত অনলাইন গেম খেলতেই না পারে। জাপানে কেউ যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি গেম খেলে তাকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। চীনের ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট শিশুরা কতক্ষণ গেম খেলতে পারে তার সময় বেঁধে দিয়েছে।

বাংলাদেশে এখনো এমন কোনো উদ্যোগ নেই। মিসেস মতিন বলেন, সেই সঙ্গে সংকুচিত হচ্ছে বাইরে খেলাধুল বা বিনোদনের সুযোগ। ‘সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা আছেন তারা যদি এই বাচ্চাদের কথা ভেবে কিছু উদ্যোগ নেন তাহলে হয়তো পরিস্থিতি বদলে যাবে। এই যে আশেপাশে কিছু মাঠ আছে সেগুলো যদি সংস্কারের সুযোগ করে দেয়। সিনেমা হলগুলোতে যেন বাচ্চাদের নিয়ে ভালো ছবি দেখতে পারি।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মানসিক রোগের তালিকায় ভিডিও গেম আসক্তি

আপডেট টাইম : ০৮:০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  রাজধানীতে বসবাস করছেন এমন অনেকের বাড়িতে দেখা গিয়েছে তাদের শিশুরা ভিডিও গেম খেলছে। একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুইটি শিশু ছুটির দিনের অবসরে ভিডিও গেম খেলতে ব্যস্ত। এ বিষয়ে শিশু দুইটির মা জানান, স্কুল শেষে অবস পেলেই তারা ঝুঁকে পড়ে প্লে-স্টেশন না হলে স্মার্টফোন বা ট্যাবের স্ক্রিনে।

শিশুদের মা মনে করেন, যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়া এবং সেই সঙ্গে বাইরে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় ভিডিও গেমেই সন্তানরা অবসরের আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে। ‘আমি আমাদের ছেলেদের অনেক ভালো ভালো লেখকদের বই কিনে দেই। আমি চাই ওরা বই পড়ে শিখুক। কিন্তু না, তাদের কথা হলো—তাদের সব বন্ধুরা গেম খেলছে, তারাও খেলবে।’

সেই সঙ্গে শহরগুলোয় পর্যাপ্ত বিনোদনের অভাবকেও এই গেমে আসক্তির জন্য দায়ী করেন তিনি। ‘এখনকার অ্যাপার্টমেন্টগুলোয় খেলার কোনো জায়গা নেই। আমরা তো গ্রামে খোলামেলা পরিবেশে বড়ো হয়েছি। কিন্তু আমার বাচ্চারা তো সেই জায়গাটা পাচ্ছে না। এই ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের যতটা না উপকার করছে তার চেয়ে বাচ্চাদের পিছিয়ে ফেলছে বেশি।’

ভিডিও গেমের প্রতি শিশু-কিশোরদের আগ্রহ নতুন কিছু নয়। তবে এই আসক্তিকে সম্প্রতি ‘মানসিক রোগের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বহু দিন ধরে বলছিলেন, ভিডিও গেমের অতিরিক্ত আসক্তিতে এক দিকে যেমন শিশু-কিশোরদের সামাজিকীকরণ বাধাগ্রস্ত হয়, তেমনি মেধা বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিষয়টিকে নজরে নিয়ে ব্রিটেনসহ কয়েকটি দেশ বিশেষ ক্লিনিক স্থাপনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত মনিটরিং শুরু করলেও এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ। প্লে-স্টেশনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা একটা গেমের প্রায় পুরোটা জুড়েই দেখা যায়, যুদ্ধ সহিংসতা আর রক্তপাত। এই খেলাগুলো আসলে শিশুদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরিন ওয়াদুদ বিবিসিকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত এসব ভিডিও গেম খেললে শরীরে এক ধরনের হরমোন নিঃসারণ হয়। এতে শিশু সবকিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক রোগ শ্রেণিকরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সবকিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এছাড়া কারো সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই।

গেমিং ডিজঅর্ডারের লক্ষণ

‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ এর এমন বিভিন্ন লক্ষণের ব্যাপারে ড. ওয়াদুদ বলেন, ‘লক্ষ্য রাখতে হবে শিশু কতটুকু সময় ধরে গেম খেলছে। মা-বাবা খেলা বন্ধ করতে বললে সে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিছু কিছু বাচ্চা আছে যাদের গেম খেলতে নিষেধ করলে তারা ভীষণ রেগে যায়, ভীষণ চ্যাঁচামেচি করে। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে সে হয়তো গেমে আসক্ত।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে গেমারদের দুই থেকে তিন শতাংশ ‘গেমিং ডিজঅর্ডারে’ ভোগে। শতাংশের হিসেবে সংখ্যাটি কম মনে হলেও বিশ্বের অনেক দেশই গেমিংয়ের আসক্তি নিয়ে চিন্তিত। দক্ষিণ কোরিয়ায় তো সরকার এমন আইন করেছে যাতে ১৬ বছরের কম বয়সি শিশুরা মধ্যরাত থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত অনলাইন গেম খেলতেই না পারে। জাপানে কেউ যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি গেম খেলে তাকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। চীনের ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট শিশুরা কতক্ষণ গেম খেলতে পারে তার সময় বেঁধে দিয়েছে।

বাংলাদেশে এখনো এমন কোনো উদ্যোগ নেই। মিসেস মতিন বলেন, সেই সঙ্গে সংকুচিত হচ্ছে বাইরে খেলাধুল বা বিনোদনের সুযোগ। ‘সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা আছেন তারা যদি এই বাচ্চাদের কথা ভেবে কিছু উদ্যোগ নেন তাহলে হয়তো পরিস্থিতি বদলে যাবে। এই যে আশেপাশে কিছু মাঠ আছে সেগুলো যদি সংস্কারের সুযোগ করে দেয়। সিনেমা হলগুলোতে যেন বাচ্চাদের নিয়ে ভালো ছবি দেখতে পারি।’