মেয়াদোত্তীর্ণ ২৩৪টি পৌরসভার ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর। যাচাই-বাছাই ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৩ ডিসেম্বর।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা জানান।
সিইসি বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়ররা নির্বাচনী প্রচারণা বা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।’
সিইসি জানান, সারাদেশের ৩২৩টি পৌরসভার মধ্যে ২৩৪টি পৌরসভার ভোটগ্রহণ করা হবে ৩০ ডিসেম্বর। আশা করছি, সবাই নতুন আইন ও আচরণবিধি মেনে চলবেন।
সিইসি বলেন, ‘সারাদেশে মোট ৩২৩টি পৌরসভার মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত যে সব পৌরসভার মেয়াদোত্তীর্ণ হবে এ রূপ ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাকিগুলোর আইনি জটিলতা থাকায় নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।’
২৩৪টি পৌরসভায় সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ২ হাজার ৯৫২টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ৭৩৮টি। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৮২টি। এ সব পৌরসভায় মোট ভোটার ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৯৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৬ জন। আর নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪০ জন।
তিনি জানান, নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপালন করবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ৪১ জন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ৬০ জন ও ১৩৩ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।
সিইসি জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার প্রক্রিয়াটি আগের থেকে আরও সহজ করা হয়েছে, ‘আগে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেওয়ার বিধান ছিল। কিন্তু এবার মেয়র প্রার্থীদের জন্য ১০০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেওয়া বিধান রাখা হচ্ছে। তবে কেউ আগে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে থাকলে তার সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষর লাগবে না।
কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় হওয়ার সেখানে আগের মতোই নির্বাচন হবে। কাউন্সিলরদের কোনো ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে না।
তিনি জানান, পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না। পৌরসভর নির্বাচনী বিধিমালায় শুধু দলীয়ভাবে মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে দলের প্রাথমিক মনোনয়নে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবেন। তবে চূড়ান্তভাবে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বাকিদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে প্রস্তাবিত বিধিমালার ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক দল নির্বাচনী এলাকার মেয়র পদে প্রাথমিকভাবে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন প্রদান করলে, উক্ত রাজনৈতিক দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের স্বাক্ষরিত লিখিত পত্রের মাধ্যমে তিনি নিজে বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বা তার পূর্বে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারকে অবহিত করবেন এবং সেই ক্ষেত্রে উক্ত দলের মেয়র পদে অন্যান্য মনোনীত প্রার্থী আর প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবেন না।’ প্রস্তাবিত বিধিমালায় প্রার্থী চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার পর কোনো অবস্থায় তা প্রত্যাহারের বা বাতিল করা যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
সিইসি জানান, রাজনৈতিক দলের পক্ষে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের স্বাক্ষরিত এই মর্মে প্রত্যায়ন থাকতে হবে যে, প্রার্থীকে ওই দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক দল মেয়র পদে প্রাথমিকভাবে একাধিক মনোনয়নপত্র প্রদান করতে পারবে। রাজনৈতিক দল ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যযনির্বাহকের নাম, পদবী ও নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি তফসিল ঘোষণার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করবে এবং তার অনুলিপি নির্বাচন কমিশনেও দাখিল করতে হবে।
পৌরসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলে প্রতি পৌরসভায় সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে। প্রার্থীদের ব্যয়ের ক্ষেত্রে আগের বিধানেই বহাল থাকবে। পৌরসভায় এ লাখের উপর ভোটার হলে প্রার্থীরা ৫০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার ভোটার হলে ২০ হাজার টাকা এবং ২৫ ভোটার হলে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবে।
নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল বিধি ভঙ্গ করলে তার জন্য অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা দণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে।