ঢাকা ০৫:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘন কুয়াশায় গাছে মড়ক দিশেহারা আলুচাষি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৪৩:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২০
  • ২২৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  কনকনে শীত আর লাগাতার ঘন কুয়াশায় আলু আবাদ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের কৃষকেরা। পঁচন আর পোকা দমনে বিষ প্রয়োগ করেও লাভ হচ্ছে না। ফলে চলতি মওসুমের আলু’র উৎপাদন শংকিত হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। তবে দাম ভাল থাকায় আগাম আলু আবাদকারী কৃষকেরা খুশি। কিন্তু দাম বেশী হওয়ায় ক্ষেত থেকে আলু চুরি হওয়ার ভয়ে কৃষকেরা রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছে। চুরি ঠেকালেও কৃষকেরা গাছের পচন ঠেকাতে পারছে না। তাই পরিপক্ক না হওয়ার আগেই আলু তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে। আগেভাগে তুলে নেয়ার কারণে ফলনও কম হয়েছে। তবে দাম ভাল পাওয়ায় ফলন কম হওয়ার পরও আগাম আলু আবাদকারী কৃষকেরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। ধানের বাজারের বেহাল অবস্থায় কৃষকেরা ধানের চেয়ে আলুসহ বিভিন্ন সবজি আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তাদের মতে আগে মূল আবাদ ধানের পাশাপাশি আলুসহ সবজির আবাদ ছিল অতিরিক্ত বা বোনাস আবাদ। কিন্তু ধানের দাম কম হওয়ায় এখন আলুসহ সবজি মূল আবাদ হয়ে ধান অতিরিক্ত বা বোনাস আবাদে পরিণত হচ্ছে।
ধানের দাম না পাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষকেরা আগাম আলু রোপন করে আসছে। বোরো ধান রোপনের আগে আগাম আলু চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগাম আলু উঠিয়েই বোরো আবাদে মনযোগী হয়ে পড়ে কৃষক। অনেকেই আবার আগাম আলু মৌসুমের নিয়মিত আলু আবাদ করে থাকে। একের ভেতর দুই এ কারণে আগাম আলু আবাদ কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এদিকে পেঁয়াজের পাশাপাশি বাজারে সকল ধরনের সবজির দামের সাথে আলুর দামও অনেক বেশী হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেছে। তবে দাম ভাল থাকায় কৃষকেরা খুশি হলেও পড়েছে বিপাকে। কেননা ক্ষেত থেকে আলু চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে ঘন কুয়াশায় কৃষকেরা রাত জেগে ক্ষেত পাহাড়া দিতে থাকে। এর মধ্যেই ঘন কুয়াশায় গাছে পঁচন দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে কৃষকেরা পরিপক্ক না হতেই আলু তুলে নিতে শুরু করে। এতে ফলন কিছুটা কমে যায়। তবে ফলন কম হলেও দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকেরা সন্তুষ্ট। নিয়মিত মৌসুমের আলু গাছেও পঁচন ধরতে শুরু করেছে। এই আলু উঠতে আরো দেড় থেকে দু’মাস লেগে যাবে। পঁচন ঠেকাতে কৃষকেরা নিয়মিত বিষ ও ভিটামিন প্রয়োগ করছে। তবে কুয়াশা অব্যাহত থাকলে আলু’র ফলন নিয়ে কৃষকেরা শংকায় রয়েছে।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মাঝাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মোস্তফা কামালের সাথে আলাপ হলে তিনি জানান। নিজের জমি অল্প হলেও চুক্তির ভিত্তিতে প্রায় সাত বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছিল। তিন বন্ধু মিলে আবাদ করার পর আলু গাছের চেহারা দেখে মন ভরে গেছে। কিন্তু ক্ষেত থেকে আলু চুরি হওয়ার ভয়ে দিনে পেশাগত কাজ আর রাতে ক্ষেত পাহাড়া দিতে হয়েছে। তারপরেও একেবারে কাঁচা অবস্থায় জমি থেকে তুলেই ফড়েয়াদের কাছে বিক্রি করে যে লাভ হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট। তার মতে যে আলু গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে। সেই আলু বিক্রি হয়েছে সর্বশেষ ২৩ টাকা কেজি দরে। তাদের মতে আগে মূল আবাদ ধানের পাশাপাশি আলুসহ সবজির আবাদ ছিল অতিরিক্ত বা বোনাস আবাদ। কিন্তু ধানের দাম কম হওয়ায় এখন আলুসহ সবজি মূল আবাদ হয়ে ধান অতিরিক্ত বা বোনাস আবাদে পরিণত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইকবাল আলুর ক্ষেতে পঁচন ধরার বিষয়টি স্বীকার করে বললেন এর প্রতিকারের জন্য নিয়মিতভাবে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এবার দিনাজপুর ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। ধানের দাম না থাকায় প্রতিবছর আলুসহ সবজি জাতীয় অন্যান্য আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঘন কুয়াশায় গাছে মড়ক দিশেহারা আলুচাষি

আপডেট টাইম : ০৮:৪৩:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  কনকনে শীত আর লাগাতার ঘন কুয়াশায় আলু আবাদ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের কৃষকেরা। পঁচন আর পোকা দমনে বিষ প্রয়োগ করেও লাভ হচ্ছে না। ফলে চলতি মওসুমের আলু’র উৎপাদন শংকিত হয়ে পড়েছে কৃষকেরা। তবে দাম ভাল থাকায় আগাম আলু আবাদকারী কৃষকেরা খুশি। কিন্তু দাম বেশী হওয়ায় ক্ষেত থেকে আলু চুরি হওয়ার ভয়ে কৃষকেরা রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছে। চুরি ঠেকালেও কৃষকেরা গাছের পচন ঠেকাতে পারছে না। তাই পরিপক্ক না হওয়ার আগেই আলু তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে। আগেভাগে তুলে নেয়ার কারণে ফলনও কম হয়েছে। তবে দাম ভাল পাওয়ায় ফলন কম হওয়ার পরও আগাম আলু আবাদকারী কৃষকেরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। ধানের বাজারের বেহাল অবস্থায় কৃষকেরা ধানের চেয়ে আলুসহ বিভিন্ন সবজি আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে। তাদের মতে আগে মূল আবাদ ধানের পাশাপাশি আলুসহ সবজির আবাদ ছিল অতিরিক্ত বা বোনাস আবাদ। কিন্তু ধানের দাম কম হওয়ায় এখন আলুসহ সবজি মূল আবাদ হয়ে ধান অতিরিক্ত বা বোনাস আবাদে পরিণত হচ্ছে।
ধানের দাম না পাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষকেরা আগাম আলু রোপন করে আসছে। বোরো ধান রোপনের আগে আগাম আলু চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগাম আলু উঠিয়েই বোরো আবাদে মনযোগী হয়ে পড়ে কৃষক। অনেকেই আবার আগাম আলু মৌসুমের নিয়মিত আলু আবাদ করে থাকে। একের ভেতর দুই এ কারণে আগাম আলু আবাদ কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এদিকে পেঁয়াজের পাশাপাশি বাজারে সকল ধরনের সবজির দামের সাথে আলুর দামও অনেক বেশী হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেছে। তবে দাম ভাল থাকায় কৃষকেরা খুশি হলেও পড়েছে বিপাকে। কেননা ক্ষেত থেকে আলু চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে ঘন কুয়াশায় কৃষকেরা রাত জেগে ক্ষেত পাহাড়া দিতে থাকে। এর মধ্যেই ঘন কুয়াশায় গাছে পঁচন দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে কৃষকেরা পরিপক্ক না হতেই আলু তুলে নিতে শুরু করে। এতে ফলন কিছুটা কমে যায়। তবে ফলন কম হলেও দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকেরা সন্তুষ্ট। নিয়মিত মৌসুমের আলু গাছেও পঁচন ধরতে শুরু করেছে। এই আলু উঠতে আরো দেড় থেকে দু’মাস লেগে যাবে। পঁচন ঠেকাতে কৃষকেরা নিয়মিত বিষ ও ভিটামিন প্রয়োগ করছে। তবে কুয়াশা অব্যাহত থাকলে আলু’র ফলন নিয়ে কৃষকেরা শংকায় রয়েছে।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মাঝাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মোস্তফা কামালের সাথে আলাপ হলে তিনি জানান। নিজের জমি অল্প হলেও চুক্তির ভিত্তিতে প্রায় সাত বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছিল। তিন বন্ধু মিলে আবাদ করার পর আলু গাছের চেহারা দেখে মন ভরে গেছে। কিন্তু ক্ষেত থেকে আলু চুরি হওয়ার ভয়ে দিনে পেশাগত কাজ আর রাতে ক্ষেত পাহাড়া দিতে হয়েছে। তারপরেও একেবারে কাঁচা অবস্থায় জমি থেকে তুলেই ফড়েয়াদের কাছে বিক্রি করে যে লাভ হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট। তার মতে যে আলু গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে। সেই আলু বিক্রি হয়েছে সর্বশেষ ২৩ টাকা কেজি দরে। তাদের মতে আগে মূল আবাদ ধানের পাশাপাশি আলুসহ সবজির আবাদ ছিল অতিরিক্ত বা বোনাস আবাদ। কিন্তু ধানের দাম কম হওয়ায় এখন আলুসহ সবজি মূল আবাদ হয়ে ধান অতিরিক্ত বা বোনাস আবাদে পরিণত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইকবাল আলুর ক্ষেতে পঁচন ধরার বিষয়টি স্বীকার করে বললেন এর প্রতিকারের জন্য নিয়মিতভাবে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এবার দিনাজপুর ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। ধানের দাম না থাকায় প্রতিবছর আলুসহ সবজি জাতীয় অন্যান্য আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।