হাওর বার্তা ডেস্কঃ সবুজ পাহাড়ে ঘেরা হাটহাজারী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপূর্ব লীলাভূমি। প্রকৃতি যেন তার অপার মহিমায় সাঁজিয়েছে। সবুজ বৃক্ষসারির ওপর বিচিত্র রঙের পাখি, সবুজ পাহাড়ের কোলে থাকা হরিণ, যেন প্রকৃতির কোলে গড়ে উঠা এক অপরূপ ও অনন্য নৈস্বর্গে নাম হাটহাজারী। এখানে আসলে আপনি পাহাড়ের সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি দেখতে পাবেন দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; যা প্রকৃতি আর মানব প্রাণের মেলবন্ধন। হাটহাজারী উপজেলায় ভ্রমণ পিপাসুদের পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে, ফতেয়াবাদ ঠা-াছড়ি, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও পাশাপাশি হটিকালচার সেন্টার, কৃষি ইন্সটিটিউট ও নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম ভেটরনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্ফাম বেইস ক্যাম্পাস এবং এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী ও নির্মাণাধীন ইকোর্পাক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : ষড়ঋতুর পালাবদল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায় চবি ক্যাম্পাসে। গ্রীষ্মের আগমনে রুক্ষ প্রকৃতি। হঠাৎ সবুজ পাহাড় ঘিরে কালো মেঘের আনাগোনা আর কালবৈশাখী ঝড়, বর্ষার আগমনে প্রকৃতির সতেজতা লাভ, শরতের কাশফুল, হেমন্তের সোনালী ধান কিংবা ঋতুরাজ বসন্তে ফোঁটা ফুল সবই দেখা যায় চবি ক্যাম্পাসে থেকে কিংবা গিয়ে। চবি ঝর্ণা, ঝুলন্ত সেতু, কাটাপাহাড়সহ মানবসৃষ্ট স্থাপনাগুলোও যে কাউকে আকৃষ্ট করবে।
চবি আরো দৃষ্টিনন্দন করেছে ফরেস্ট্রি এরিয়া। কাটা পাহাড়ে, বাণিজ্য অনুষদের পেছনে কিংবা ফরেস্টিতে দেখতে পাওয়া যায় বাদামী রংয়ের হরিণ। হরিণগুলো বেশ লাজুক ও মায়াবী। অগণিত লুকায়িত আকর্ষণের ভিড়ে চবি ক্যাম্পাসে রয়েছে রহস্যময় চালন্দা গিরিপথ। প্রাকৃতিক ঝরনা, পাহাড়ের প্রাণজুড়ানো রূপে বহুদিন ঢাকা পড়েছিল চালন্দা গিরিপথের সৌন্দর্য্য। মুরাদপুর হতে ২০ টাকা বাস যোগে চবির ১নং গেইট নেমে রিকশা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাওয়া যায়।
কৃষি গবেষণাগার : সুজলা, সুফলা, শষ্য শ্যামলা এই প্রাকৃতিক দৃশ্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণ পিপাসুদের। পাহাড় ঘেরা হাটহাজারী আঞ্চলিক কৃষি গবেষণাগার ও কৃষি ইনিস্টিটিউট এই এলাকায় নানা প্রজাতীর ফল, ফুল, ফলাদি ও ঔষধি গাছের বীজ হতে চারা উৎপন্ন করা হয়। এই খানে পড়ন্ত বিকালে শত শত পর্যটক ঘুরতে আসে। এটি একটি মিলিপার্কে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি পিকনিক স্পটও রয়েছে। চট্টগ্রাম মুরাদপুর হতে বাস যোগে ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে হাটহাজারী বাসস্টেশন আসতে হয়। স্টেশন থেকে মাত্র ২০ থেকে ৩০ টাকা রিকশা নিয়ে যাওয়া যায় এই গবেষণাগারে।
হালদা পার্ক : এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র পার্বত্য জেলার খাগাড়াছড়ি মানিক ছড়ি থেকে নেমে আসা নদীটি ফটিকছড়ি হাটহাজারী রাউজান উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গপোসাগরের সাথে সংযুক্ত কর্ণফুলীর সাথে মিশে গেছে। প্রতি বছর চৈত্র থেকে আষাড় মাস পর্যন্ত যে কোন অমাবশ্যা ও পূর্ণিমা এবং অষ্টমী তিথিতে মা মাছ এ নদীতে ডিম ছাড়ে। অসংখ্য মানুষ নদীথেকে ডিম সংগ্রহ করে রেণু পোনা উৎপাদন করে থাকে। বর্ষার মৌসমে পাহাড়ী ঢলের বজ্রপাতসহ বৃষ্টির মধ্যে মা মাছ ডিম ছেড়ে থাকে।
এখানে পড়ন্ত বিকালে বেড়ি বাঁধের উপরে বসে নদীর সৌন্দর্য্য খুব মনোমুগ্ধকরভাবে দেখা যায়। জ্যোৎস্না রাতে নদী দেখতে অপূর্ব মনে হয়। নৌকা ভ্রমণে সেই দৃশ্য যেন ভোলার মত নয়। তাই প্রকৃতি প্রেমিকরা নদীর পাড়ে এসে প্রতিনিয়ত বিনোদন উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে। বহুল আলোচিত এই হালদা নদীকে নিয়ে প্রখ্যাত সংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব তৌকির আহম্মদ পরিচালিত হালদা নদীকে নিয়ে একটি বাংলা ছবি ও নির্মাণ করেছেন। এই ছবিটি বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সিনেমা হল গুলোতে প্রর্দশন করা হচ্ছে। এই ছবির মাধ্যমে হালদা নদীর বাস্তবতায় ফুটে উঠেছে এবং দেশে এই ছবি প্রশংসিতও হয়েছে।