ঢাকা ০২:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্তিত্ব সঙ্কটে তিতাস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫৩:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২৩২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে তিতাস নদীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নাম। সেই নদী এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। অবৈধ দখল আর দূষণের ফলে রুপ লাবন্য হারিয়ে নদীটি এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে।
তিতাস নদীকে ঘিরে একসময় সমৃদ্ধ ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিসহ স্থানীয় অর্থনীতি। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই তিতাসই এখন পরিণত হয়েছে সরু খালে।
ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ তিতাস নদীকে নিয়ে (১৯৫৬ সালে) বিখ্যাত একটি উপন্যাস রচনা করেন। কালজয়ী এ উপন্যাসে তিনি লিখেছেন, তার ক‚লজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ¡াস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। কিন্তু এখনকার তিতাসের দিকে তাকালে এসবের কিছুই মেলে না। নদীটি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া দিয়ে প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানাঘেঁষে আরও দক্ষিণ দিকে ভৈরব-আশুগঞ্জ হয়ে মুরাদনগর, হোমনা ও তিতাস উপজেলার ওপর দিয়ে মেঘনায় গিয়ে মিশেছে।

১১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নদীটির ১০৩ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ও চর পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। সেই সাথে প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্যে পৌর এলাকার আনন্দবাজার, মেড্ডা, শিমরাইল কান্দি, সদর উপজেলার উজানিশারসহ বিভিন্ন জায়গায় নদীর দুপাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ফলে নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নদীকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহীরা বিপাকে পড়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংস্কৃতিক সংগঠন সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, হয়তো একদিন তিতাসের নামটিই থাকবে শুধু। নদীর তলদেশে চাষ করা হচ্ছে বোরো ধান। দেখে মনে হবে নদীতে জেগে ওঠা চরে যেন সবুজের সমারোহ। এছাড়া বিভিন্ন নালার পানিতে নদী দূষিত হয়ে পড়ছে। জেলে স¤প্রদায়ে চরম দুর্দিন নেমে এসেছে।

হরিণবেড় গ্রামের জেলে দীপক দাস বলেন, বছরের ছয় মাসই নদীতে পানি থাকে না। মাছ একেবারে নেই বললেই চলে। গত প্রায় ৫ বছর ধরে কৈ, মাগুর, বেদা, টাকি, বোয়াল, চিংড়িথ এসব মাছ নদীতে দেখাই যায় না। এখন পুঁটি, বাইম, গুতুম আর বেলে মাছই পাওয়া যায়। তবে পরিমাণে খুবই অল্প। একই গ্রামের রিপন দাস বলেন, সারা বাজারে এখন দুই ভাগা মাছও ওঠে না। হরিণবেড়, হরিপুর, ও হাসানপুরথ এ তিন গ্রামের দুই হাজারেরও বেশি লোক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন সবাই বেকার। অপর জেলে হরিপদ দাস বলেন, আগে জাল ফেললেই মাছ পেতাম। কিন্তু এখন তেমন একটা মাছ পাওয়া যায় না।

নদী পথে চলাচলকারী আবিদ আলী, মনির হোসেন, কেরামত সর্দার জানান, পানি কমে যাওয়ায় নৌ চলাচলে বেশি সময় লাগছে। তাছাড়া খনন কাজ শুরু হলেও তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। লঞ্চ চালক মো. কামাল হোসেন বলেন, ৪০ বছর ধরে লঞ্চ চালাই। তিতাসের বুকে পানির যে উত্তাল ঢেউ ছিল তা এখন আর চোখে পড়ে না। তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, নদী দখলের মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে নদীর দুই পাড়ে বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা ফেলে তাতে অবৈধভাবে ছোট ছোট স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই সাথে নদীর মাঝখানে তৈরি করা হচ্ছে বড় বড় ভবন। এছাড়া দখল আর দূষণের কবলে পড়ে বিভিন্ন স্থানে তিতাসের গতিপথ সঙ্কীর্ণ হয়ে গেছে। তিতাসের বুকজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেওয়ায় নদীর গতিপথ আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খনন কাজ দ্রæতই শুরু হবে বলে জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অস্তিত্ব সঙ্কটে তিতাস

আপডেট টাইম : ০৭:৫৩:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে তিতাস নদীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নাম। সেই নদী এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। অবৈধ দখল আর দূষণের ফলে রুপ লাবন্য হারিয়ে নদীটি এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে।
তিতাস নদীকে ঘিরে একসময় সমৃদ্ধ ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিসহ স্থানীয় অর্থনীতি। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই তিতাসই এখন পরিণত হয়েছে সরু খালে।
ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ তিতাস নদীকে নিয়ে (১৯৫৬ সালে) বিখ্যাত একটি উপন্যাস রচনা করেন। কালজয়ী এ উপন্যাসে তিনি লিখেছেন, তার ক‚লজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ¡াস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। কিন্তু এখনকার তিতাসের দিকে তাকালে এসবের কিছুই মেলে না। নদীটি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া দিয়ে প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানাঘেঁষে আরও দক্ষিণ দিকে ভৈরব-আশুগঞ্জ হয়ে মুরাদনগর, হোমনা ও তিতাস উপজেলার ওপর দিয়ে মেঘনায় গিয়ে মিশেছে।

১১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নদীটির ১০৩ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ও চর পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। সেই সাথে প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্যে পৌর এলাকার আনন্দবাজার, মেড্ডা, শিমরাইল কান্দি, সদর উপজেলার উজানিশারসহ বিভিন্ন জায়গায় নদীর দুপাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ফলে নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নদীকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহীরা বিপাকে পড়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংস্কৃতিক সংগঠন সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, হয়তো একদিন তিতাসের নামটিই থাকবে শুধু। নদীর তলদেশে চাষ করা হচ্ছে বোরো ধান। দেখে মনে হবে নদীতে জেগে ওঠা চরে যেন সবুজের সমারোহ। এছাড়া বিভিন্ন নালার পানিতে নদী দূষিত হয়ে পড়ছে। জেলে স¤প্রদায়ে চরম দুর্দিন নেমে এসেছে।

হরিণবেড় গ্রামের জেলে দীপক দাস বলেন, বছরের ছয় মাসই নদীতে পানি থাকে না। মাছ একেবারে নেই বললেই চলে। গত প্রায় ৫ বছর ধরে কৈ, মাগুর, বেদা, টাকি, বোয়াল, চিংড়িথ এসব মাছ নদীতে দেখাই যায় না। এখন পুঁটি, বাইম, গুতুম আর বেলে মাছই পাওয়া যায়। তবে পরিমাণে খুবই অল্প। একই গ্রামের রিপন দাস বলেন, সারা বাজারে এখন দুই ভাগা মাছও ওঠে না। হরিণবেড়, হরিপুর, ও হাসানপুরথ এ তিন গ্রামের দুই হাজারেরও বেশি লোক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন সবাই বেকার। অপর জেলে হরিপদ দাস বলেন, আগে জাল ফেললেই মাছ পেতাম। কিন্তু এখন তেমন একটা মাছ পাওয়া যায় না।

নদী পথে চলাচলকারী আবিদ আলী, মনির হোসেন, কেরামত সর্দার জানান, পানি কমে যাওয়ায় নৌ চলাচলে বেশি সময় লাগছে। তাছাড়া খনন কাজ শুরু হলেও তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। লঞ্চ চালক মো. কামাল হোসেন বলেন, ৪০ বছর ধরে লঞ্চ চালাই। তিতাসের বুকে পানির যে উত্তাল ঢেউ ছিল তা এখন আর চোখে পড়ে না। তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, নদী দখলের মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে নদীর দুই পাড়ে বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা ফেলে তাতে অবৈধভাবে ছোট ছোট স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই সাথে নদীর মাঝখানে তৈরি করা হচ্ছে বড় বড় ভবন। এছাড়া দখল আর দূষণের কবলে পড়ে বিভিন্ন স্থানে তিতাসের গতিপথ সঙ্কীর্ণ হয়ে গেছে। তিতাসের বুকজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেওয়ায় নদীর গতিপথ আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খনন কাজ দ্রæতই শুরু হবে বলে জানান।