হাওর বার্তা ডেস্কঃ অবশেষে উৎপাদনশীল খাতের ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। শিল্পের মেয়াদি এবং চলতি ঋণের গ্রাহকরা এই সুবিধা পাবেন। আসছে ১ জানুয়ারি থেকে এ সুবিধা কার্যকর হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পর্ষদ সভায় এসংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিল্প খাতে এক অঙ্কের সুদহার অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ খাতের মেয়াদি ও চলতি ঋণগ্রহীতারা এ সুবিধা পাবেন। শিগগিরই সার্কুলার জারি করা হবে। এটি কার্যকর হবে ১ জানুয়ারি থেকে।’
জানা গেছে, বিকেল ৪টায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কোরাম সংকটের কারণে ৫টায় শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে রুদ্ধদ্বার এই সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, সাবেক সচিব মাহবুব আহমেদ, এ কে এম আফতাব উল ইসলাম ও বোর্ড সচিব কাজী ছাইদুর রহমান।
জানা গেছে, শিল্পঋণের সুদহার এক অঙ্কের বেঁধে দেওয়া ছাড়াও বেশ কিছু সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে এসংক্রান্ত গঠিত কমিটি। কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল গত ১০ ডিসেম্বর। কিন্তু ভাষাগত কিছু জটিলতার কারণে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার সময় দুই দিন পেছানো হয়। ফলে সুদহার কমানোর সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদনটি গত ১২ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন তিনি। এর আগে ১ ডিসেম্বর রাতে ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই দিন দুপুরে এ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। কমিটিকে কিভাবে ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে একটি সুপারিশ উপস্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সমপ্রতি এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন ‘নয়-ছয় ফর্মুলা ভুলে যান। এখন থেকে ব্যাংকিং খাতে আমানতে ৬ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের ফর্মুলা থাকবে না। নতুন পদ্ধতিতে সুদের হার কমানো হবে। এখানে ব্যবসা করতে হলে শিল্পঋণে সুদের হার ৯ শতাংশের বেশি এক পয়সাও নেওয়া যাবে না।’
ব্যাংক সূত্র জানায়, শুধু শিল্পঋণে ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরের বিষয়ে শিগগিরই সার্কুলার জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে চলতি মূলধন ঋণ, প্রকল্প ঋণসহ শিল্পখাতের বড় ঋণগুলো থাকবে। তবে ভোক্তা ঋণ এর আওতায় পড়বে না।
জানা গেছে, ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে বা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এখনো মানছেন না বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মালিকরা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সাতবার এবং বর্তমান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ১১ বার নির্দেশনা দিয়েছেন।
সূত্র মতে, সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত দেড় বছরে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক দফায় দফায় ৯টি সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু সরকারি ব্যাংক এবং কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক ছাড়া বাকিগুলো ঋণে সুদহার এক অঙ্কে নামায়নি। সুদহার এক অঙ্কে না এলেও ৯টি সুবিধার চারটিতেই ব্যাংকগুলো প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পেয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি তহবিল জমার হার বৃদ্ধি, পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকার মেয়াদ ও একক পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল এবং ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা শিথিলকরণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দেড় বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি এক অঙ্কের সুদহার। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একপ্রকার বাধ্য হয়েই সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে কমিটি গঠন করে দেন। সে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই শিল্পঋণের সুদহার এক অঙ্কে বেঁধে দিয়ে সার্কুলার জারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।