ঢাকা ০৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাভের আশায় একই জমিতে একাধিক সবজি চাষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৯:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২১১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  ২০ শতক জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন কৃষক আব্দুল লতিফ। একই জমিতে তিনি রোপণ করেছেন মরিচের চারাও। একসঙ্গে একই জমিতে দুই ধরনের সবজি চাষ করলেও ফলনে কোনো প্রভাব পড়েনি। বেগুন আর মরিচ দুটোরই ফলন ভাল হয়েছে। প্রতিদিনই বাজারে বিক্রি করছেন সেই সবজি।

লতিফ ছাড়াও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা গ্রামের কৃষক ফরিদুল, মন্টু মিয়া, জয়েনপুর গ্রামের ফটিক শেখও একই জমিতে একাধিক ফসল চাষ করছেন।

 

জয়েনপুর গ্রামের কৃষক ফটিক বলেন, অন্যান্য সবজির চেয়ে বেগুন বেশ লাভজনক। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও বিঘা প্রতি ৬০/৭০ মণ বেগুন উৎপাদন হয়। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতিমণ বেগুন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকায়। বেগুনের সঙ্গে মরিচ চাষ করলে বাড়তি কিছু আয় হয়। বেগুন গাছের ফাঁকে ফাঁকে যদি মরিচের আবাদ করা যায় তাতে প্রতি বিঘাতে ৬/৭ মণ কাঁচা মরিচ উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা।মরিচের সঙ্গে ফুলকপি কিংবা বাঁধাকপি, বেগুনের সঙ্গে মরিচ, আলুর সঙ্গে মরিচ, মুলা, পালংক শাক ও ধনিয়া পাতা ইত্যাদি একযোগেই চাষাবাদ করছে এসব অঞ্চলের কৃষক। অপরদিকে আলুর ক্ষেতে মাচায় শিম বা লাউ চাষও করা হচ্ছে।

এছাড়াও সদর উপজেলার জগৎগাঁতী, বাগবাটি, রতনকান্দি ও বহুলী এলাকাতেও একইভাবে একসঙ্গে একাধিক সবজি চাষের দিকে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। এতে একটা ফসলে লোকসান হলেও দ্বিতীয় ফসলে লাভ হবেই। এ কারণে কৃষকের লোকসানের সম্ভাবনা নেই।

জয়েনপুরের কৃষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমার ১৭ বিঘা জমির মধ্যে ৪ থেকে ৫ বিঘাতেই সবজি চাষ করেছি। প্রথম মৌসুমে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। তবে ফলন ভাল না হলেও মৌসুমের শুরুতে বিক্রি করায় দিগুণ লাভ হয়েছে। এবার আবারও ফুলকপি ও বাঁধাকপি একসঙ্গে আবাদ করেছি। এছাড়াও বেগুন-মরিচ, আলু, লাউ, মিস্টি কুমড়া চাষ করেছি। বেশ কয়েকদিন আগেই বেশিরভাগ ফসল বিক্রি শুরু করেছি।

দাদপুর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ মতে এক বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল বেগুন চাষ করেছিলাম। মৌসুমের শুরুতেই বেগুন বিক্রি করতে পেরেছি। একেকটি বেগুন আধা কেজি থেকে শুরু করে এক কেজি পর্যন্ত হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল বেগুন চাষে বেশ লাভ হয়েছে। একই জমিতে মরিচও চাষ করেছি। তাও পরিপক্ক হতে শুরু করেছে।কথা হয় ঘুড়কা এলাকার কৃষক হযরত আলী, ময়না খাতুন, রোকেয়া বেগম, জাকির হোসেন, জগৎগাঁতী গ্রামের ইয়াকুব আলী, সোলেমান, কয়েলগাঁতীর আইয়ুব আলীসহ অনেকের সঙ্গে।

এসব কৃষকেরা বলেন, জমিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানলে চাষাবাদে লাভ আসবেই। আগের দিনে কৃষকেরা এক ধরনের ফসল চাষে অভ্যস্ত ছিল। বর্তমানে সেটা আর নেই। বেশিরভাগ চাষিই একাধিক ফসল চাষে লাভবান হচ্ছে।

তবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষ করা সবজির ন্যায্যমূল্য অনেক সময় কৃষকের ঘরে পৌঁছায় না বলে অভিযোগ করেন তারা। বাজারে বেগুনের দাম ৩০/৪০ টাকা হলেও চাষিদের কাছ থেকে তা ১৫/২০ টাকায় কিনছেন পাইকাররা। একইভাবে ফুলকপি বিক্রি করতে হচ্ছে ২০/২৫ টাকা কেজিতে। যার বাজার মূল্য ৪০/৫০ টাকা। মুনাফার বেশিরভাগ অংশই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে চলে যাচ্ছে বলেও জানান কৃষকেরা।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. হাবিবুর হক জানান, শীতকালীন সবজির মৌসুমে সিরাজগঞ্জের অধিকাংশ একইসঙ্গে একাধিক ফসল চাষ করছে। সেক্ষেত্রে কৃষি বিভাগও তাদের উৎসাহ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে। একাধিক ফসল চাষে কৃষকের যেমন বেশি মুনাফা হয় তেমনি জমির উর্বরতা শক্তিও বাড়ে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

লাভের আশায় একই জমিতে একাধিক সবজি চাষ

আপডেট টাইম : ১১:৪৯:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  ২০ শতক জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন কৃষক আব্দুল লতিফ। একই জমিতে তিনি রোপণ করেছেন মরিচের চারাও। একসঙ্গে একই জমিতে দুই ধরনের সবজি চাষ করলেও ফলনে কোনো প্রভাব পড়েনি। বেগুন আর মরিচ দুটোরই ফলন ভাল হয়েছে। প্রতিদিনই বাজারে বিক্রি করছেন সেই সবজি।

লতিফ ছাড়াও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা গ্রামের কৃষক ফরিদুল, মন্টু মিয়া, জয়েনপুর গ্রামের ফটিক শেখও একই জমিতে একাধিক ফসল চাষ করছেন।

 

জয়েনপুর গ্রামের কৃষক ফটিক বলেন, অন্যান্য সবজির চেয়ে বেগুন বেশ লাভজনক। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও বিঘা প্রতি ৬০/৭০ মণ বেগুন উৎপাদন হয়। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতিমণ বেগুন পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকায়। বেগুনের সঙ্গে মরিচ চাষ করলে বাড়তি কিছু আয় হয়। বেগুন গাছের ফাঁকে ফাঁকে যদি মরিচের আবাদ করা যায় তাতে প্রতি বিঘাতে ৬/৭ মণ কাঁচা মরিচ উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা।মরিচের সঙ্গে ফুলকপি কিংবা বাঁধাকপি, বেগুনের সঙ্গে মরিচ, আলুর সঙ্গে মরিচ, মুলা, পালংক শাক ও ধনিয়া পাতা ইত্যাদি একযোগেই চাষাবাদ করছে এসব অঞ্চলের কৃষক। অপরদিকে আলুর ক্ষেতে মাচায় শিম বা লাউ চাষও করা হচ্ছে।

এছাড়াও সদর উপজেলার জগৎগাঁতী, বাগবাটি, রতনকান্দি ও বহুলী এলাকাতেও একইভাবে একসঙ্গে একাধিক সবজি চাষের দিকে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। এতে একটা ফসলে লোকসান হলেও দ্বিতীয় ফসলে লাভ হবেই। এ কারণে কৃষকের লোকসানের সম্ভাবনা নেই।

জয়েনপুরের কৃষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমার ১৭ বিঘা জমির মধ্যে ৪ থেকে ৫ বিঘাতেই সবজি চাষ করেছি। প্রথম মৌসুমে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। তবে ফলন ভাল না হলেও মৌসুমের শুরুতে বিক্রি করায় দিগুণ লাভ হয়েছে। এবার আবারও ফুলকপি ও বাঁধাকপি একসঙ্গে আবাদ করেছি। এছাড়াও বেগুন-মরিচ, আলু, লাউ, মিস্টি কুমড়া চাষ করেছি। বেশ কয়েকদিন আগেই বেশিরভাগ ফসল বিক্রি শুরু করেছি।

দাদপুর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ মতে এক বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল বেগুন চাষ করেছিলাম। মৌসুমের শুরুতেই বেগুন বিক্রি করতে পেরেছি। একেকটি বেগুন আধা কেজি থেকে শুরু করে এক কেজি পর্যন্ত হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল বেগুন চাষে বেশ লাভ হয়েছে। একই জমিতে মরিচও চাষ করেছি। তাও পরিপক্ক হতে শুরু করেছে।কথা হয় ঘুড়কা এলাকার কৃষক হযরত আলী, ময়না খাতুন, রোকেয়া বেগম, জাকির হোসেন, জগৎগাঁতী গ্রামের ইয়াকুব আলী, সোলেমান, কয়েলগাঁতীর আইয়ুব আলীসহ অনেকের সঙ্গে।

এসব কৃষকেরা বলেন, জমিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানলে চাষাবাদে লাভ আসবেই। আগের দিনে কৃষকেরা এক ধরনের ফসল চাষে অভ্যস্ত ছিল। বর্তমানে সেটা আর নেই। বেশিরভাগ চাষিই একাধিক ফসল চাষে লাভবান হচ্ছে।

তবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষ করা সবজির ন্যায্যমূল্য অনেক সময় কৃষকের ঘরে পৌঁছায় না বলে অভিযোগ করেন তারা। বাজারে বেগুনের দাম ৩০/৪০ টাকা হলেও চাষিদের কাছ থেকে তা ১৫/২০ টাকায় কিনছেন পাইকাররা। একইভাবে ফুলকপি বিক্রি করতে হচ্ছে ২০/২৫ টাকা কেজিতে। যার বাজার মূল্য ৪০/৫০ টাকা। মুনাফার বেশিরভাগ অংশই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে চলে যাচ্ছে বলেও জানান কৃষকেরা।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. হাবিবুর হক জানান, শীতকালীন সবজির মৌসুমে সিরাজগঞ্জের অধিকাংশ একইসঙ্গে একাধিক ফসল চাষ করছে। সেক্ষেত্রে কৃষি বিভাগও তাদের উৎসাহ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে। একাধিক ফসল চাষে কৃষকের যেমন বেশি মুনাফা হয় তেমনি জমির উর্বরতা শক্তিও বাড়ে।