বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাত ও ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন সফররত নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা জরিগুয়েতা সেরুতি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি’ বিষয়ক উদ্যোগের উপদেষ্টা ও বিশেষ দূত হিসেবে ঢাকায় তিনদিনের সফর শেষে বুধবার (১৮ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রশংসা করেন।
ইউএনডিপি আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে ডাচ রানি বলেন, আজকের বিশ্ব অর্থনীতিতে উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) শেষে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও অর্ন্তভুক্তিমূলক অর্থনীতিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেশে দেশে জাতীয় কৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এক্ষেত্রে শুধু ঋণদান নয়; সঞ্চয়, বিমার মতো বিষয়গুলো অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। যাতে মানুষ সব ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও সেবাগুলো পায়।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিংস, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহাম্মদ বেলাল, ঢাকায় নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেটা কুয়েলানায়েরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ম্যাক্সিমা জরিগুয়েতা সেরুতি জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও আর্থিক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে এটুআই প্রোগ্রামের ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেখে খুবই খুশি হয়েছেন তিনি।
‘ভিশন-২০২১’ এর প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই লক্ষ্য বাস্তবায়নেও অর্ন্তভুক্তিমূলক অর্থনীতি প্রয়োজন।
সফরকালে বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনের সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে ডাচ রানি বলেন, মোবাইল অর্থনীতির সেবার আওতায় মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষকে আনা গেছে। এই হার আরও বাড়াতে হবে। শতভাগ মানুষকে টার্গেট করে কৌশল প্রণয়ন করতে হবে।
এ সময় ড. আতিউর রহমান বলেন, এই হার ৬৭ শতাংশ।
ম্যাক্সিমা জানান, ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে অর্ন্তভুক্তিমূলক অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ইতোমধ্যে তিনি অনেক দেশ সফর করে এ বিষয়ে সেসব দেশের অভিজ্ঞতা দেখেছেন। এবার বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রয়াসে বিশ্ব ব্যাংক ও ইউএনডিপি’র মতো বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, দেশে দেশে অর্ন্তভুক্তিমূলক অর্থনীতির কৌশলগুলো একেক রকম। ভারত, কেনিয়া ও তানজানিয়া ভিন্ন মডেল অনুসরণ করেও বেশ ভালো করেছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র অর্থনীতির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে বলেও প্রশংসা করেন ডাচা রানি।
তিনি বলেন, পরবর্তী ধাপ অর্ন্তভুক্তিমূলক অর্থনীতিতেও সফল হবে বলে বিশ্বাস করি। তবে এক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয় পত্র, মোবাইল সিম নিবন্ধন, ডিজিটাল অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন ম্যাক্সিমা।
তিনদিনের সফরে বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন উল্লেখ করে ডাচ রানি বলেন, অর্ন্তভুক্তিমূলক অর্থনীতির ক্ষেত্রেও ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছি আমি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর বলেন, রাণীর পরামর্শগুলো নিয়ে বর্তমান সরকার আগেই কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করছে।
‘বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হলে রেমিটেন্স প্রেরণের খরচও কমে যাবে। তখন সরাসরি মোবাইলের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করা সম্ভব হবে। বর্তমানে বিভিন্ন এজেন্সির সহায়তা নিতে হয় বলে খরচ বেশি পড়ছে,’ উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে বান কি মুনের বিশেষ দূত হিসেবে সোমবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকায় আসেন ডাচ রানি ম্যাক্সিমা।
সফরকালে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী ড. আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন। গাজীপুরে ডিজিটাল অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পও পরিদর্শন করেন তিনি। অংশ নেন বেশ কিছু সেমিনারেও। বুধবার রাতেই তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।