ঢাকা ০২:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্মকর্তারা বলছে স্ট্রোকে মৃত্যু, ভিডিও ফুটেজে অন্যকথা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৩১:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৯
  • ২০২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  কুষ্টিয়ার মিরপুরে ‘সমর্পণ’ মাদকাসক্তি মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে এক মানসিক ভারসাম্যহীন কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত ওই কলেজছাত্রের নাম কামরুজ্জামান ইমন। ২০ নভেম্বর ওই কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমনকে মিরপুর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

মঙ্গলবার সকালে সিসি টিভির ফুটেজে কলেজছাত্র হত্যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। তবে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দাবি ওই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। এমন দাবি করা হলেও সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে ওই ছাত্রকে পিটিয়ে ও ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হচ্ছে

নিহত ইমন উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদেরপুর গ্রামের এজাজুল আজিম রিপনের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে কলেজছাত্র ইমন আলীকে ভর্তি করা হয় মিরপুর বিজিবি সেক্টর এলাকার সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

মানসিক সমস্যাজনিত কারণে ভর্তি শেষে পরিবারের সদস্যরা ফিরে যান বাড়িতে। পরদিন ২০ নভেম্বর সকালে ইমনের পরিবারকে জানানো হয় ইমনকে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে। সেখানে ইমনের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন গিয়ে দেখতে পান তাদের ইমন আর বেঁচে নেই। ইমনের শরীরে বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। তবে ইমনের মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয়, তাকে নির্যাতন করেই মেরে ফেলা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে।

ক্যামেরায় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন ইমনকে হাত-পা বেঁধে মারধর করছে, শরীরে পুশ করা হচ্ছে ইনজেকশনও। নিহত ইমনের পিতা এজাজুল আজিম রিপন বলেন, কোনো নেশার সাথে জড়িত ছিল না ইমন। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। এ কথা বলেছিল ডাক্তার। তাই মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

চিকিৎসকরা বলেছিল কয়েকদিন পর আসেন ভর্তি করে নেয়া যাবে। বাড়িতে ফিরে এসে ইমন খুব ঝামেলা সৃষ্টি করে। ওইদিন সবাই আমাকে কোথাও রেখে আসতে বলে, তখন আমি কোনো কিছু না ভেবেই পৌরসভার যোগীপুল মহল্লায় অবস্থিত ‘সমর্পণ’ নামের একটি বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে দিয়ে আসি। ছেলেকে সুস্থ করার জন্য। তারপর ২০ নভেম্বর বুধবার সকালে শুনছি আমার ইমন মারা গেছে। মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে না রেখে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে কেনো রাখলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কেঁদে কেঁদে বলেন, কি থেকে কি হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না।

অভিযুক্ত মাদক নিরাময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, না আমার কোনো অভিযোগ নেই। যা হয়েছে সবই আমার কপালে লেখা ছিল। তবে ইমনের মা কামরুন্নাহারের অভিযোগ, ইমনকে সুস্থ অবস্থায় ওখানে রেখে আসা হয়েছিল। পরে তাকে নির্যাতন করেই হত্যা করা হয়।

ইমনের কয়েকজন বন্ধু জানান, কোনো নেশার সাথে জড়িত ছিল না ইমন। আমরা কখনই নেশা করতে দেখিনি। মৃত্যুর প্রায় ১৫ দিন থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। প্রথম দিকে না বুঝলেও কয়েকদিন পর বিষয়টি বুঝতে পারে ইমনের পরিবার। তারপর ইমনের বাবা তাকে ডাক্তারও দেখিয়ে ছিলেন। ডাক্তার বলেছিলেন অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ঘুম কম হওয়ায় এমন সমস্যা হয়েছে। কয়েকদিন বিশ্রাম করলেই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।

যে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ইমনকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে সেখানে গিয়ে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া না গেলেও ঘটনার সময় ওই নির্যাতনের সাথে জড়িত রুবেল নামে ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, উশৃঙ্খলা ঠেকাতে হাত বেঁধে চড় থাপ্পড় মারা হয় ইমনকে।

সমর্পণ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উদ্দিন জানান, নির্যাতনে নয়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ায় মারা যায় ইমন। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম।

মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন ফারাজি বলেন, ইমনের শরীরের আঘাতের চিহ্ন ছিল কিন্তু কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে ময়না তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কর্মকর্তারা বলছে স্ট্রোকে মৃত্যু, ভিডিও ফুটেজে অন্যকথা

আপডেট টাইম : ০৮:৩১:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  কুষ্টিয়ার মিরপুরে ‘সমর্পণ’ মাদকাসক্তি মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে এক মানসিক ভারসাম্যহীন কলেজছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত ওই কলেজছাত্রের নাম কামরুজ্জামান ইমন। ২০ নভেম্বর ওই কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমনকে মিরপুর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

মঙ্গলবার সকালে সিসি টিভির ফুটেজে কলেজছাত্র হত্যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। তবে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দাবি ওই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। এমন দাবি করা হলেও সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে ওই ছাত্রকে পিটিয়ে ও ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হচ্ছে

নিহত ইমন উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের কাদেরপুর গ্রামের এজাজুল আজিম রিপনের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে কলেজছাত্র ইমন আলীকে ভর্তি করা হয় মিরপুর বিজিবি সেক্টর এলাকার সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

মানসিক সমস্যাজনিত কারণে ভর্তি শেষে পরিবারের সদস্যরা ফিরে যান বাড়িতে। পরদিন ২০ নভেম্বর সকালে ইমনের পরিবারকে জানানো হয় ইমনকে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে। সেখানে ইমনের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন গিয়ে দেখতে পান তাদের ইমন আর বেঁচে নেই। ইমনের শরীরে বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। তবে ইমনের মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয়, তাকে নির্যাতন করেই মেরে ফেলা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে।

ক্যামেরায় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বেশ কয়েকজন ইমনকে হাত-পা বেঁধে মারধর করছে, শরীরে পুশ করা হচ্ছে ইনজেকশনও। নিহত ইমনের পিতা এজাজুল আজিম রিপন বলেন, কোনো নেশার সাথে জড়িত ছিল না ইমন। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। এ কথা বলেছিল ডাক্তার। তাই মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

চিকিৎসকরা বলেছিল কয়েকদিন পর আসেন ভর্তি করে নেয়া যাবে। বাড়িতে ফিরে এসে ইমন খুব ঝামেলা সৃষ্টি করে। ওইদিন সবাই আমাকে কোথাও রেখে আসতে বলে, তখন আমি কোনো কিছু না ভেবেই পৌরসভার যোগীপুল মহল্লায় অবস্থিত ‘সমর্পণ’ নামের একটি বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে দিয়ে আসি। ছেলেকে সুস্থ করার জন্য। তারপর ২০ নভেম্বর বুধবার সকালে শুনছি আমার ইমন মারা গেছে। মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীকে মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে না রেখে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে কেনো রাখলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কেঁদে কেঁদে বলেন, কি থেকে কি হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না।

অভিযুক্ত মাদক নিরাময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, না আমার কোনো অভিযোগ নেই। যা হয়েছে সবই আমার কপালে লেখা ছিল। তবে ইমনের মা কামরুন্নাহারের অভিযোগ, ইমনকে সুস্থ অবস্থায় ওখানে রেখে আসা হয়েছিল। পরে তাকে নির্যাতন করেই হত্যা করা হয়।

ইমনের কয়েকজন বন্ধু জানান, কোনো নেশার সাথে জড়িত ছিল না ইমন। আমরা কখনই নেশা করতে দেখিনি। মৃত্যুর প্রায় ১৫ দিন থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। প্রথম দিকে না বুঝলেও কয়েকদিন পর বিষয়টি বুঝতে পারে ইমনের পরিবার। তারপর ইমনের বাবা তাকে ডাক্তারও দেখিয়ে ছিলেন। ডাক্তার বলেছিলেন অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ঘুম কম হওয়ায় এমন সমস্যা হয়েছে। কয়েকদিন বিশ্রাম করলেই সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।

যে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ইমনকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে সেখানে গিয়ে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া না গেলেও ঘটনার সময় ওই নির্যাতনের সাথে জড়িত রুবেল নামে ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, উশৃঙ্খলা ঠেকাতে হাত বেঁধে চড় থাপ্পড় মারা হয় ইমনকে।

সমর্পণ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উদ্দিন জানান, নির্যাতনে নয়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ায় মারা যায় ইমন। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম।

মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন ফারাজি বলেন, ইমনের শরীরের আঘাতের চিহ্ন ছিল কিন্তু কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে ময়না তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।