ঢাকা ০৫:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলার খোসা যখন বানানা আর্টিস্ট শিল্পীর ক্যানভাস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:১১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯
  • ২২৪ বার

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সব থেকে সস্তা ও সহজলভ্য ফলগুলোর মধ্যে কলা অন্যতম। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ কলার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্যগুণ। এসব তো আমরা প্রায়ই শুনে থাকি।

তবে স্টেফান ব্রুশের কাছে কলার পাশাপাশি কলার খোসাই বেশি মূল্যবান। নিজের নেশা এবং পেশার দুটোরই মূল ভিত্তি কলার খোসা। নেদারল্যান্ড এর এই ব্যক্তি ‘বানানা আর্টিস্ট’ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে বেশ নাম করেছেন।

কলার খোসায় শিল্প

সাধারণ কলম দিয়ে তিনি কলার খোসার উপর ছবি আঁকেন। তারপর ছুরির সাহায্যে কলার খোসার বাকি অংশ কেটে বাদ দিতে হয়। স্টেফান বলেন, কলার মধ্যে সাদা রঙ অক্ষত রাখতে খুবই দ্রুত কাটতে হয়। কারণ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ধূসরের প্রলেপ ফুটে ওঠে। প্রথম অংশগুলোর চেহারা খারাপ হবার আগেই তিনি তার সৃষ্টির ছবি তুলে ফেলেন। এরপর তিনি ইন্টারনেটে সেই ছবি পোস্ট করেন।

ভাবছেন কলাটা তিনি কি করেন? এতো কলা কি নষ্ট করে ফেলেন? না, খোসার উপর আঁকা ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট করার পর সেই কলা তিনি খেয়ে ফেলেন। কখনো এমনিতে আবার কখনো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে।

এখন পর্যন্ত স্টেফান ব্রুশে আনুমানিক এক হাজার কলার খোসা এঁকেছেন। এরমধ্যে সবকটি তার পছন্দ হয়নি। বেশ কয়েকটি কলার ছবি পোস্ট না করেই শেক তৈরি করে খেয়ে ফেলেছেন। অনেক ছবিই খোসার উপর মানানসই হয় না। স্টেফান বলেন, ‘‘কখনো আমি একেবারে ধার পর্যন্ত এঁকে ফেলি। তারপর সেই অংশ কিছুটা কেটে সামনে টেনে আনি। এভাবে আমার ক্যানভাস কিছুটা বড় হয়। তাছাড়া একটির বেশি কলাও ব্যবহার করতে পারি।’’

কলার খোসায় শিল্প

স্টেফান ব্রুশে বর্তমানে থাকেন আমস্টারডাম শহরে। চার বছর ধরে গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর এক এজেন্সিতে কাজ শুরু করেন তিনি। সে সময়ে এক মোবাইল ফটো অ্যাপ পরীক্ষা করতে কোনো কিছু একটা বস্তুর খোজ করছিলেন। স্টেফান ব্রুশে বলেন, ‘‘খেয়াল করলাম, বাসা থেকে আনা কলা তখনো খাওয়া হয়নি। মনে হলো, তার উপর একটা মুখ আঁকলে মন্দ হয় না। আঁকার পর মনে হলো, দেখতে সত্যি ভালো লাগছে। সাধারণ বল পেন দিয়ে আচড় টানলে অনায়াসে কলম চালানো যায়।’’

এর মধ্যে ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ বিশ হাজার ছুয়েছে। ফলে বিশ্বের অনেক নামীদামী কোম্পানিও তার সম্পর্কে জানতে পেরেছে। স্টেফান বলেন, ‘‘কোম্পানিগুলো আমাকে বিশেষ বানানা আর্ট তৈরি করার অনুরোধ করে। যা তারা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে পারে। কোনো ইভেন্ট, বাণিজ্য শো অথবা মনোরঞ্জনের কোনো অনুষ্ঠানে তাদের বুথে আমি কলার উপর আঁকতে পারি।’’

কলার খোসায় শিল্প

এখনো পর্যন্ত শিল্পের জগতে কলার ব্যবহারের কোনো সীমা ছিল বলে মনে হয় না। কখনো প্রতীকী অর্থে, কখনো বিশাল আকারে কলা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। স্টেফান বলেন, অ্যান্ডি ওয়ারহোল বা অন্যরা তাকে প্রেরণা জোগাননি। প্রথমদিকে তিনি আপেল ও নাশপাতির উপরেও আঁকতেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কলার নাকি কোনো তুলনা হয় না। স্টেফান ব্রুশে বলেন, ‘‘কখনো আমার অনুগামীরাও কারো মন জয় করতে কলার উপর কিছু আঁকে। সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’’

প্রতিদিন তিনি একটি মাত্র কলা কেনেন। আশা করা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি এমনটা করে যাবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কলার খোসা যখন বানানা আর্টিস্ট শিল্পীর ক্যানভাস

আপডেট টাইম : ০৯:১১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সব থেকে সস্তা ও সহজলভ্য ফলগুলোর মধ্যে কলা অন্যতম। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ কলার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্যগুণ। এসব তো আমরা প্রায়ই শুনে থাকি।

তবে স্টেফান ব্রুশের কাছে কলার পাশাপাশি কলার খোসাই বেশি মূল্যবান। নিজের নেশা এবং পেশার দুটোরই মূল ভিত্তি কলার খোসা। নেদারল্যান্ড এর এই ব্যক্তি ‘বানানা আর্টিস্ট’ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে বেশ নাম করেছেন।

কলার খোসায় শিল্প

সাধারণ কলম দিয়ে তিনি কলার খোসার উপর ছবি আঁকেন। তারপর ছুরির সাহায্যে কলার খোসার বাকি অংশ কেটে বাদ দিতে হয়। স্টেফান বলেন, কলার মধ্যে সাদা রঙ অক্ষত রাখতে খুবই দ্রুত কাটতে হয়। কারণ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ধূসরের প্রলেপ ফুটে ওঠে। প্রথম অংশগুলোর চেহারা খারাপ হবার আগেই তিনি তার সৃষ্টির ছবি তুলে ফেলেন। এরপর তিনি ইন্টারনেটে সেই ছবি পোস্ট করেন।

ভাবছেন কলাটা তিনি কি করেন? এতো কলা কি নষ্ট করে ফেলেন? না, খোসার উপর আঁকা ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট করার পর সেই কলা তিনি খেয়ে ফেলেন। কখনো এমনিতে আবার কখনো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে।

এখন পর্যন্ত স্টেফান ব্রুশে আনুমানিক এক হাজার কলার খোসা এঁকেছেন। এরমধ্যে সবকটি তার পছন্দ হয়নি। বেশ কয়েকটি কলার ছবি পোস্ট না করেই শেক তৈরি করে খেয়ে ফেলেছেন। অনেক ছবিই খোসার উপর মানানসই হয় না। স্টেফান বলেন, ‘‘কখনো আমি একেবারে ধার পর্যন্ত এঁকে ফেলি। তারপর সেই অংশ কিছুটা কেটে সামনে টেনে আনি। এভাবে আমার ক্যানভাস কিছুটা বড় হয়। তাছাড়া একটির বেশি কলাও ব্যবহার করতে পারি।’’

কলার খোসায় শিল্প

স্টেফান ব্রুশে বর্তমানে থাকেন আমস্টারডাম শহরে। চার বছর ধরে গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর এক এজেন্সিতে কাজ শুরু করেন তিনি। সে সময়ে এক মোবাইল ফটো অ্যাপ পরীক্ষা করতে কোনো কিছু একটা বস্তুর খোজ করছিলেন। স্টেফান ব্রুশে বলেন, ‘‘খেয়াল করলাম, বাসা থেকে আনা কলা তখনো খাওয়া হয়নি। মনে হলো, তার উপর একটা মুখ আঁকলে মন্দ হয় না। আঁকার পর মনে হলো, দেখতে সত্যি ভালো লাগছে। সাধারণ বল পেন দিয়ে আচড় টানলে অনায়াসে কলম চালানো যায়।’’

এর মধ্যে ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ বিশ হাজার ছুয়েছে। ফলে বিশ্বের অনেক নামীদামী কোম্পানিও তার সম্পর্কে জানতে পেরেছে। স্টেফান বলেন, ‘‘কোম্পানিগুলো আমাকে বিশেষ বানানা আর্ট তৈরি করার অনুরোধ করে। যা তারা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে পারে। কোনো ইভেন্ট, বাণিজ্য শো অথবা মনোরঞ্জনের কোনো অনুষ্ঠানে তাদের বুথে আমি কলার উপর আঁকতে পারি।’’

কলার খোসায় শিল্প

এখনো পর্যন্ত শিল্পের জগতে কলার ব্যবহারের কোনো সীমা ছিল বলে মনে হয় না। কখনো প্রতীকী অর্থে, কখনো বিশাল আকারে কলা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। স্টেফান বলেন, অ্যান্ডি ওয়ারহোল বা অন্যরা তাকে প্রেরণা জোগাননি। প্রথমদিকে তিনি আপেল ও নাশপাতির উপরেও আঁকতেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কলার নাকি কোনো তুলনা হয় না। স্টেফান ব্রুশে বলেন, ‘‘কখনো আমার অনুগামীরাও কারো মন জয় করতে কলার উপর কিছু আঁকে। সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’’

প্রতিদিন তিনি একটি মাত্র কলা কেনেন। আশা করা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি এমনটা করে যাবেন।