ঢাকা ০৯:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাল্টা চাষে দেশসেরা খ্যাতি অর্জন করে পরিচতি মানুষ হয়ে উঠেছেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৬:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯
  • ২২৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের সাখাওয়াত। গ্রামের সাদামাটা এই মানুষটি মাল্টা চাষে দেশসেরা খ্যাতি অর্জন করে এখন স্যেশাল মিডিয়ায় পরিচতি মানুষ হয়ে উঠেছেন। এলাকায় অনেকে তাকে গাছ পাগল সাখাওয়াত বলেও ডাকে। সরকারী চাকুরিজীবি হলেও নিজের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে গ্রামে গড়ে তুলেছেন ৪০ বিঘা জমির উপরে মাল্টার বাগান। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে সাখাওয়াতের মাল্টার বাগানটি এখন দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টার বাগান।

গ্রামের শিক্ষক আব্দুর রহমানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন বাবুল। শুরুতে কোন কিছুই সহজ ছিল না মাল্টা চাষী সাখাওয়াতের কাছে। এমনকি মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোন মাঠকর্মীর সহযোগিতাও পায়নি সে। ছোটবেলা থেকে সাখাওয়াতের বুকে গাছের প্রতি ভালবাসার জন্ম। সেই সুবাদে ২০১৩ সালে খুলনা কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট থেকে মাল্টার চারা কেনেন। স্বল্প পুঁজি দিয়ে গাছ লাগানোর এক বছরের মাথায় গাছগুলো কলম করে চারা গাছ তৈরি করেন সাখাওয়াত। এরপর গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে ২৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে প্রায় চার হাজার কলম মাল্টার চারা গাছ রোপণ করেন। বর্তমানে একই দাগে ৪০ বিঘা মাল্টা আছে কৃষক সাখাওয়াতের। গাছ লাগানোর দুই বছর পর ফুল আসতে শুরু করে মাল্টার চারাগুলোতে। বর্তমানে সাখাওয়াতের মাল্টার বাগানে ডালে ডালে মাল্টা ফলে ভরা।

মাল্টা চাষী সাখাওয়াত জানান, মাল্টা বাগান করতে ৫ বছরে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ২৯ লাখ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৬০-৭০ মণ মাল্টা ফল পাওয়া যাবে। যা বাজারে বিক্রি হবে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকায়। এছাড়া সমস্ত মাল্টার বাগানে মাল্টা বিক্রি হবে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার মতো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মাল্টার ফলন ভাল হয়। প্রতি কেজি মাল্টা ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বর্তমান বাজারে। উঁচু জমিতে মাল্টার চারা রোপণ করতে হয়। বাগানে রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সার বেশি ব্যবহার করা হয়। প্রথমে গ্রামে যখন মাল্টার বাগান করি তখন প্রতিবেশীরা বলতেন সাখাওয়াত গাছ পাগল। তারা টিটকারি করে বলতো টাকা বেশী হয়েছে তাই কাঁচা পয়সা পানিতে ফেলছে। আজ সেসব প্রতিবেশীরাই আমাকে উৎসাহ দেয় বেশী।

মাল্টা বাগান করে সাখাওয়াত একাই যে লাভবান হয়েছে এমনটা না। তারা বাগানে কাজ করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন ১২ জন শ্রমিক।

গ্রামের চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, সাখাওয়াতের ৪০ বিঘা জমিতে চার হাজার মাল্টার চারা রয়েছে। প্রতিটি গাছে মাল্টা ঝুলে মাটিতে নুয়ে পড়ে আছে। তার এই সাফল্য দেখে গ্রামের অন্য বেকার যুবকরাও মাল্টার বাগান তৈরি করছে।

সাখাওয়াতের প্রতিবেশী আকতার হোসেন জানান, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাখাওয়াতের মাল্টার বাগান দেখতে আসেন বিভিন্ন ফল ব্যবসায়ীরা। এদের ভিতর বেশীর ভাগই সাখাওয়াতের কাছে থেকে মাল্টার চারা কিনে নিয়ে যান। অনেকে আবার মাল্টা বাগান তৈরীর পরামর্শ নিতে আসেন। সবকিছু মিলে ছোট্ট গ্রামের সাখাওয়াত এখন বাংলাদেশের মাল্টা বাগানের আইডল সকলের কাছে।

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাখাওয়াতের মাল্টার বাগান দেখতে আসেন বাগান চাষীরা। কৃষি বিভাগ থেকে মাল্টা চাষী সাখাওয়াতকে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মাল্টা চাষে দেশসেরা খ্যাতি অর্জন করে পরিচতি মানুষ হয়ে উঠেছেন

আপডেট টাইম : ১২:২৬:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের সাখাওয়াত। গ্রামের সাদামাটা এই মানুষটি মাল্টা চাষে দেশসেরা খ্যাতি অর্জন করে এখন স্যেশাল মিডিয়ায় পরিচতি মানুষ হয়ে উঠেছেন। এলাকায় অনেকে তাকে গাছ পাগল সাখাওয়াত বলেও ডাকে। সরকারী চাকুরিজীবি হলেও নিজের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে গ্রামে গড়ে তুলেছেন ৪০ বিঘা জমির উপরে মাল্টার বাগান। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে সাখাওয়াতের মাল্টার বাগানটি এখন দেশের সর্ববৃহৎ মাল্টার বাগান।

গ্রামের শিক্ষক আব্দুর রহমানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন বাবুল। শুরুতে কোন কিছুই সহজ ছিল না মাল্টা চাষী সাখাওয়াতের কাছে। এমনকি মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোন মাঠকর্মীর সহযোগিতাও পায়নি সে। ছোটবেলা থেকে সাখাওয়াতের বুকে গাছের প্রতি ভালবাসার জন্ম। সেই সুবাদে ২০১৩ সালে খুলনা কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট থেকে মাল্টার চারা কেনেন। স্বল্প পুঁজি দিয়ে গাছ লাগানোর এক বছরের মাথায় গাছগুলো কলম করে চারা গাছ তৈরি করেন সাখাওয়াত। এরপর গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে ২৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে প্রায় চার হাজার কলম মাল্টার চারা গাছ রোপণ করেন। বর্তমানে একই দাগে ৪০ বিঘা মাল্টা আছে কৃষক সাখাওয়াতের। গাছ লাগানোর দুই বছর পর ফুল আসতে শুরু করে মাল্টার চারাগুলোতে। বর্তমানে সাখাওয়াতের মাল্টার বাগানে ডালে ডালে মাল্টা ফলে ভরা।

মাল্টা চাষী সাখাওয়াত জানান, মাল্টা বাগান করতে ৫ বছরে এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ২৯ লাখ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৬০-৭০ মণ মাল্টা ফল পাওয়া যাবে। যা বাজারে বিক্রি হবে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকায়। এছাড়া সমস্ত মাল্টার বাগানে মাল্টা বিক্রি হবে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার মতো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মাল্টার ফলন ভাল হয়। প্রতি কেজি মাল্টা ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বর্তমান বাজারে। উঁচু জমিতে মাল্টার চারা রোপণ করতে হয়। বাগানে রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সার বেশি ব্যবহার করা হয়। প্রথমে গ্রামে যখন মাল্টার বাগান করি তখন প্রতিবেশীরা বলতেন সাখাওয়াত গাছ পাগল। তারা টিটকারি করে বলতো টাকা বেশী হয়েছে তাই কাঁচা পয়সা পানিতে ফেলছে। আজ সেসব প্রতিবেশীরাই আমাকে উৎসাহ দেয় বেশী।

মাল্টা বাগান করে সাখাওয়াত একাই যে লাভবান হয়েছে এমনটা না। তারা বাগানে কাজ করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন ১২ জন শ্রমিক।

গ্রামের চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, সাখাওয়াতের ৪০ বিঘা জমিতে চার হাজার মাল্টার চারা রয়েছে। প্রতিটি গাছে মাল্টা ঝুলে মাটিতে নুয়ে পড়ে আছে। তার এই সাফল্য দেখে গ্রামের অন্য বেকার যুবকরাও মাল্টার বাগান তৈরি করছে।

সাখাওয়াতের প্রতিবেশী আকতার হোসেন জানান, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাখাওয়াতের মাল্টার বাগান দেখতে আসেন বিভিন্ন ফল ব্যবসায়ীরা। এদের ভিতর বেশীর ভাগই সাখাওয়াতের কাছে থেকে মাল্টার চারা কিনে নিয়ে যান। অনেকে আবার মাল্টা বাগান তৈরীর পরামর্শ নিতে আসেন। সবকিছু মিলে ছোট্ট গ্রামের সাখাওয়াত এখন বাংলাদেশের মাল্টা বাগানের আইডল সকলের কাছে।

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাখাওয়াতের মাল্টার বাগান দেখতে আসেন বাগান চাষীরা। কৃষি বিভাগ থেকে মাল্টা চাষী সাখাওয়াতকে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।