ঢাকা ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ভারতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার কবরের পাশে দিন-রাত বসে থাকি, ছেলে ফিরে আসে না সংস্কার না করলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে অন্যায় করা হবে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত কাকে ‘ননসেন্স’ বললেন বুবলী ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আপত্তি বিএনপি মহাসচিবের সচিবালয়ে প্রবেশে অস্থায়ী পাসের ব্যাপারে বিশেষ সেল গঠন জর্জিনাকে ‘স্ত্রী’ সম্বোধন, তবে কি বিয়েটা সেরেই ফেলেছেন রোনালদো ৩১ ডিসেম্বর আসছে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা মহাখালীতে আবাসিক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২ ইউনিট ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আপত্তি বিএনপি মহাসচিবের

নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে বাজার ব্যবস্থাপনা: সমন্বিত কার্যক্রমের বিকল্প নেই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৮:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৩৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  হঠাৎ কোনো একটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করা এবং সেটি আকাশচুম্বী হওয়া যেন মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর পেছনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে ব্যবস্থাপনাকেন্দ্রিক দুর্বলতা, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, পরিস্থিতির আগাম পর্যালোচনা না করা, ব্যবসায়ীদের মাত্রাতিরিক্ত লোভ, সর্বোপরি প্রয়োজনের সময় সরকারের নীতিনির্ধারণী নির্দেশনা দ্রুত না পাওয়া।

এসব কারণে কোনোমতে একটি পণ্যের মূল্যস্ফীতি জোড়াতালি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও পরক্ষণেই অন্য একটি পণ্য নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে ভোক্তাদের, এমনকি খোদ সরকারকে। চলমান পেঁয়াজের দামের রেকর্ডকেই বিবেচনায় নেয়া যায় এ ক্ষেত্রে।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এসে আমাদের বাজারে মসলাটির দাম কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা ঠেকেছিল। প্রশ্ন হল, প্রায় দুই মাসের মতো সময়ে কেন আমরা বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে পারলাম না।

আরেকটি বিষয়, বাজারে দাম চড়া হলেও পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না, এমনটি কিন্তু হয়নি। এ দুটি বিষয় বিবেচনায় নিলে যে সিদ্ধান্তে আসা যায় তা হল, ব্যবসায়ীরা সরকারের নির্দেশনা মানেনি এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো দায়দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি। বর্তমান সময়ে বিকল্প বাজার খোঁজা ও সেখান থেকে কম সময়ে পণ্য নিয়ে আসা বড় কোনো সমস্যার বিষয় নয়।

পেঁয়াজের দাম এখন কমতে শুরু করেছে; কিন্তু যে কোনো সময় যে কোনো পণ্য নিয়ে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হবে, তা বিবেচনায় নিয়ে আগাম প্রস্তুতির বিকল্প নেই। গুজবে কান দিয়ে লবণ নিয়ে কামড়াকামড়ি অন্তত সে কথাই বলে। কতটা অর্বাচীন হলে মানুষ গুজবে কান দিয়ে ৫-১০ কেজি লবণ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তে পারে, ভাবা যায়! অথচ এক থেকে দই কেজি লবণে এক-দেড় মাস সংসার চালানো সম্ভব।

যা হোক, সরকার দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে অভিযান চালানো ও সতর্কতা তৈরি করায় লবণ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধেনি। এখন প্রশ্ন হল, একই ধরনের উদ্যোগ পেঁয়াজের বেলায় কেন আগে থেকে নেয়া হয়নি। আমরা মনে করি, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া ও ভবিষ্যতের জন্য এ থেকে শিক্ষা নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

অন্যথায় কিছুদিন পরপরই মানুষের ভোগান্তি, সুবিধাবাদী অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক মানুষের গলা কাটার পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হবে।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো কড়া নেড়েছে তা হল- বাজার মনিটরিংয়ের সংস্থাগুলো যেমন- টিসিবি, ক্যাব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে সমন্বয় না থাকা এবং এসব সংস্থার গবেষণা ও বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাথা কম ঘামানো; সর্বোপরি ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়-মতবিনিময় না থাকা।

অনেক ক্ষেত্রে এক সংস্থা আগাম তথ্য দিলেও অন্যরা সেগুলোকে আমলে না নেয়ার কারণে সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করে। যেমন- পেঁয়াজের পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে দু’মাস আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ব্যবসায়ীরা কথা বললেও তখন মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ থাকার কথা জানানো হয়।

মূলত, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা, উৎপাদন ও মজুদ নিয়ে একেক কর্তৃপক্ষের একেক ধরনের তথ্যের কারণে এমনটি হচ্ছে। এ অবস্থায় যে কোনো নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের তদারকি জোরদার করতে হবে।

মুক্তবাজার নীতির দোহাই দিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনায় ঢিল দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতার পাশাপাশি নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করে এবং মানুষের মাঝে গুজবের ডালপালা গজানোর সুযোগ রোধ করে সমন্বিতভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভারতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার

নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে বাজার ব্যবস্থাপনা: সমন্বিত কার্যক্রমের বিকল্প নেই

আপডেট টাইম : ১১:৩৮:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  হঠাৎ কোনো একটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করা এবং সেটি আকাশচুম্বী হওয়া যেন মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর পেছনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে ব্যবস্থাপনাকেন্দ্রিক দুর্বলতা, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, পরিস্থিতির আগাম পর্যালোচনা না করা, ব্যবসায়ীদের মাত্রাতিরিক্ত লোভ, সর্বোপরি প্রয়োজনের সময় সরকারের নীতিনির্ধারণী নির্দেশনা দ্রুত না পাওয়া।

এসব কারণে কোনোমতে একটি পণ্যের মূল্যস্ফীতি জোড়াতালি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও পরক্ষণেই অন্য একটি পণ্য নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে ভোক্তাদের, এমনকি খোদ সরকারকে। চলমান পেঁয়াজের দামের রেকর্ডকেই বিবেচনায় নেয়া যায় এ ক্ষেত্রে।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এসে আমাদের বাজারে মসলাটির দাম কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা ঠেকেছিল। প্রশ্ন হল, প্রায় দুই মাসের মতো সময়ে কেন আমরা বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে পারলাম না।

আরেকটি বিষয়, বাজারে দাম চড়া হলেও পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না, এমনটি কিন্তু হয়নি। এ দুটি বিষয় বিবেচনায় নিলে যে সিদ্ধান্তে আসা যায় তা হল, ব্যবসায়ীরা সরকারের নির্দেশনা মানেনি এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো দায়দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি। বর্তমান সময়ে বিকল্প বাজার খোঁজা ও সেখান থেকে কম সময়ে পণ্য নিয়ে আসা বড় কোনো সমস্যার বিষয় নয়।

পেঁয়াজের দাম এখন কমতে শুরু করেছে; কিন্তু যে কোনো সময় যে কোনো পণ্য নিয়ে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হবে, তা বিবেচনায় নিয়ে আগাম প্রস্তুতির বিকল্প নেই। গুজবে কান দিয়ে লবণ নিয়ে কামড়াকামড়ি অন্তত সে কথাই বলে। কতটা অর্বাচীন হলে মানুষ গুজবে কান দিয়ে ৫-১০ কেজি লবণ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তে পারে, ভাবা যায়! অথচ এক থেকে দই কেজি লবণে এক-দেড় মাস সংসার চালানো সম্ভব।

যা হোক, সরকার দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে অভিযান চালানো ও সতর্কতা তৈরি করায় লবণ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধেনি। এখন প্রশ্ন হল, একই ধরনের উদ্যোগ পেঁয়াজের বেলায় কেন আগে থেকে নেয়া হয়নি। আমরা মনে করি, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া ও ভবিষ্যতের জন্য এ থেকে শিক্ষা নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

অন্যথায় কিছুদিন পরপরই মানুষের ভোগান্তি, সুবিধাবাদী অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক মানুষের গলা কাটার পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হবে।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো কড়া নেড়েছে তা হল- বাজার মনিটরিংয়ের সংস্থাগুলো যেমন- টিসিবি, ক্যাব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে সমন্বয় না থাকা এবং এসব সংস্থার গবেষণা ও বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাথা কম ঘামানো; সর্বোপরি ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়-মতবিনিময় না থাকা।

অনেক ক্ষেত্রে এক সংস্থা আগাম তথ্য দিলেও অন্যরা সেগুলোকে আমলে না নেয়ার কারণে সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করে। যেমন- পেঁয়াজের পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে দু’মাস আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ব্যবসায়ীরা কথা বললেও তখন মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ থাকার কথা জানানো হয়।

মূলত, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা, উৎপাদন ও মজুদ নিয়ে একেক কর্তৃপক্ষের একেক ধরনের তথ্যের কারণে এমনটি হচ্ছে। এ অবস্থায় যে কোনো নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের তদারকি জোরদার করতে হবে।

মুক্তবাজার নীতির দোহাই দিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনায় ঢিল দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতার পাশাপাশি নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করে এবং মানুষের মাঝে গুজবের ডালপালা গজানোর সুযোগ রোধ করে সমন্বিতভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।