হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইসলামের ইতিহাস ভক্তি ও আন্তরিকতা নিয়ে পাঠ করলে এর সূচনা, সুরক্ষা, শুদ্ধতা, সাধনা, আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ, সততা, পবিত্রতা, বিশ্বস্ততা, আন্তুরিকতা ও কঠোর সাধনার যে পরিচয় পাওয়া যাবে এর কোনো নজির দুনিয়ার আর কোনো ধর্ম, দর্শন, মতবাদ ও বিজ্ঞানের বেলায় পাওয়া যাবে না।
ইতিহাসে যদি ইসলামের সুফিসাধক, এর অন্তর্নিহিত শিক্ষার ধারক-বাহক, মানুষের কল্যাণে ইসলামের প্রীতি-ভালোবাসা, মায়া-মমতায় পূর্ণ ইসলাহী ভাবনা নিয়ে মানবতার জন্য আত্মৎসর্গকারী ধর্মপ্রচারক ও দীনি শিক্ষার সাধক মনীষীদের জীবন, কর্ম, অবদান ও প্রভাব নিয়ে কেউ চিন্তা করে তা হলে সে মুগ্ধ ও বিস্মিত না হয়ে পারবে না। ইসলামের কাক্সিক্ষত মানবসমাজ যুগে যুগে এসব মনীষীর সংস্পর্শেই গড়ে উঠেছে।
ইসলাম শুরুতে আরবের পিছিয়ে থাকা একটি বহু দোষে দুষ্ট সম্প্রদায়কে তাদের ব্যক্তি জীবনে আধ্যাত্মিক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে যেভাবে পৃথিবীর সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ মানবসমাজে রূপান্তরিত করেছিল এ সুন্দরতম কাজটি এবং সাধনাপূর্ণ অবদানটি বিশে^র প্রতিটি সমাজে নিষ্ঠার সাথে ইসলাম প্রচারকগণ, সুফি-সাধকগণ যুগে যুগে করে গিয়েছেন। মুসলিম জীবনে মানুষের বিশ্বাস, চেতনা, মনন, সংস্কৃতি ও আচরণ নিয়ন্ত্রণের পেছনে সবচেয়ে বড় যে শক্তিটি কাজ করে তার নাম খোদাভীতি বা তাকওয়া।
এখানে আল্লাহর ভয়ে, আখেরাতে জবাবদীহিতার ভয়ে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের আশায় মানুষ নিজের জীবনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, সর্বদা তাঁর স্মরণ, তাঁর নৈকট্যের সুধা পান, তাঁর ঘনিষ্টতা ও সাক্ষাৎ লাভের অপার্থিব আনন্দের ধারা মানুষকে পৃথিবীর সংকীর্ণতা, আবিলতা ও সকল নেতিবাচকতা থেকে রক্ষা করে। এজন্য ইসলামের মনোনীত মনীষীরা মানবসমাজের নৈতিক ও চারিত্রিক দোষ- টি থেকে মানুষকে মুক্ত করে তাদের ভেতর মানবিক সৎ গুণ ও আত্মিক উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টা করে থাকেন।
ইসলামে ঈমান-আকীদা, আত্মিক, দৈহিক, আর্থিক ও আচরণগত সব ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যও এটাই। মানুষের আত্মাকে সমৃদ্ধ করা, তাঁর অন্তরকে পবিত্র ও কলুষমুক্ত করা। কোনো পাঠক ইসলামকে অধ্যয়ন করতে চাইলে তার পক্ষে ইসলামকে সঠিকরূপে ততক্ষণ খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না, যতক্ষণ না সে ইসলামের সেই অতুলনীয় প্রজন্মকে অধ্যয়ন না করবে। যারা দীনের বেলা অক্লান্ত বীর যোদ্ধা আবার তারাই রাতের বেলা দুনিয়াত্যাগী সুফি-সাধকের দল।
সেই পাঠক এমন বিশাল জামাত খুঁজে পাবেন যারা দুনিয়ার নানা ভূখন্ডে ন্যায়বিচারক, প্রতাপশালী শাসকরূপে ইতিহাসে স্থান দখল করে রেখেছেন পাশাপাশি একজন অতুলনীয় ঈমানদার, মুত্তাকী, সুফি-সাধক হিসাবেও ইতিহাসের পাতায় সমভাবে নিজের নামটি অঙ্কন করাতে সক্ষম হয়েছেন। যিনি একদিকে অর্ধ পৃথিবীর শাসক কিংবা পূর্ণ পৃথিবীর শাসক তিনিই আবার তার যুগের অন্যতম সেরা জ্ঞানেরও সাধক। কোরআন-সুন্নাহর সর্বোচ্চ জ্ঞানী সমাজ তাকে নিজেদের সমগোত্রীয় মনীষী বলে মনে করেন এমন শাসক, এমন সাধক, এমন জ্ঞানী একই সাথে আর কোন ধর্ম বা দর্শনের ইতিহাসে পাওয়া যাবে।
একই সাথে কোরআন-সুন্নাহ ও বিচিত্র জ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশিষ্টজন এমনকি যুগের সেরা জ্ঞানের সাধক কিন্তু প্রায় সবাইকে দেখা যাবে কোনো একজন মর্মজ্ঞানী বা আধ্যাত্মিক নিবিষ্টতায় বিশিষ্ট শায়খের নিকট নিজেকে সোপর্দ করে রেখেছেন তথ্য, জ্ঞান, মেধা ও মননের পরিশুদ্ধি ধরে রাখার জন্য। নিজ আত্মার, নৈতিকতার, আচরণের, অন্তরের আবর্তন-বিবর্তনের পাহারাদারির জন্য।