হাওর বার্তা ডেস্কঃ অবশেষে ভৈরবের শিমুলকান্দি বিদ্যুৎ অফিসের আবাসিক সহকারী প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের বদলির আদেশ দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সহকারী প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানকে ঢাকা রেঞ্জের বাইরে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বদলি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সহকারী প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে চলতি বছরের ১৬ মার্চ “আর নয় দুর্নীতি, আলোর মধ্যে কালো” শীর্ষক শিরোনামে অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবরের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও মফিজ উদ্দিনের দুর্নীতির প্রমাণ মেলে বলে নির্ভর সূত্রে জানা যায়। পরবর্তীতে অবৈধ উপায়ে তার অর্জিত সম্পদের হিসাব চেয়ে এবং তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। পরে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মফিজ উদ্দিন খানের বদলির খবরে স্বস্তি ফিরেছে এলাকাবাসীর মনে। বদলির খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শিমুলকান্দি ও শ্রীনগর দুটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক শ বিদ্যুৎ গ্রাহক সন্তোষ প্রকাশ করে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন।
এ বিষয়ে শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান সার্জেন্ট (অব.) তাহের জানান, মফিজ উদ্দিন খানের বদলির খবরে ইউনিয়নের শত শত গ্রাহক মিষ্টি বিতরণ করেছেন, আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তার মতো দুর্নীতিবাজ এমন প্রকৌশলী যেন আমাদের ভৈরবে আর না আসে।
এ ছাড়া শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহের মিয়া বলেন, তার অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে বার বার এলাকাবাসী তার অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। অবশেষে দীর্ঘ ৭/৮ মাস পর হলেও তার বদলিতে এলাকাবাসী খুশি।
প্রসঙ্গত, ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি বিদ্যুৎ অফিসের প্রধান কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খান যোগদানের পর থেকেই তার নেতৃত্বে অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরা বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আর তাদের এসব কর্মকাণ্ডে বিপাকে পড়েন ওই বিদ্যুৎ অফিসের আওতাভুক্ত উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার আবাসিক বিদ্যুৎ গ্রাহকসহ আরো দুইশতাধিক সেচ পাম্প ব্যবহাকারী। তবে বিভিন্ন সময়ের অভিযোগে একাধিকবার বদলি হয়েও কোনো এক অদৃশ্য কারণে বার বার একই অফিসে ফিরে এসে বিগত এক যুগ ধরে এসব অনিয়মের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন অফিসটির কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন খান।
সমস্যার মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েও মেলেনি কোনো প্রতিকার। প্রতিকার না পেয়ে মফিজ উদ্দিন খানের অপসারণের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। পরে তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রচার হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভৈরব বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ময়মনসিংহের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. শাকিব হোসেন ও কিশোরগঞ্জের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান সুমন।
এ বিষয়ে ভৈরব বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক আদেশের ভিত্তিতে তাকে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় বদলি করা হয়েছে। অচিরেই শিমুলকান্দি আবাসিক বিদ্যুৎ অফিসে ওই পদে অন্য ১ জন যোগদান করবেন।
কালের কণ্ঠ