ঢাকা ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভৌতিক কাণ্ড

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৪:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৬৬ বার

বাসায় আজ মিজান চাচ্চু এসেছে। মিজান চাচ্চু আসলেই আমাদের তিন ভাই বোনকে নিয়ে দেশ বিদেশের গল্প করে । তাঁর গল্পের মূল বিষয়বস্তু হয় বিজ্ঞান বিষয়ক। কোন রকম কুসংস্কারে চাচ্চুর বিশ্বাস নাই। সব কিছুকে বিজ্ঞান দিয়ে বিবেচনা করেন।
চাচ্চু খুব স্বাধীনচেতা মানুষ।  ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরিতে মন বসাতে পারেননি।তবে এখন একজন সফল ব্যবসায়ী।  ব্যবসার সুবাদে বিভিন্ন দেশ বিদেশে ঘুরেন।তাই চাচ্চুর জ্ঞানের ভান্ডারও বিশাল।তবে,আজ চাচ্চু অন্য ধাঁচের গল্প শুনাবেন। যার পুরোটাই রহস্যময় থেকে গেছে চাচ্চুর কাছে।যার উত্তর চাচ্চু এখনো গোপনে খুঁজেবেড়ায়। যা বিজ্ঞান বহির্ভূত।তাই কিছুটা  ইতস্তত করতে করতে আমাদের জোরাজোরিতে  শুরু করলেন।
চারিদিকে স্তব্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে।

তিনি চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন,  যদিও ভূতে আমার বিশ্বাস নাই কোন।তবুও,আমার সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার অন্তত একটি আজ আমি শেয়ার করলাম।যার কোন সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা আমি আজোও পাইনি।আমার কিছু সাইন্টিস্ট বন্ধুদের কাছে বলেছিলাম,কিন্তু তারা কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।জগতে অনেক কিছু এখনও রহস্যময় থেকে গেছে।যার সঠিক ব্যাখ্যা এখনও কেউ জানে না।
তোমরা যদি জানতে পারো তাহলে আমাকে জানাবে।

আমি তখন ছোট। ক্লাস সিক্সে পড়ি।আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল লক্ষীপুর সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১৬ কি.মি ভিতরে শ্যমগঞ্জের এক অজপাড়া গ্রামে।তখনকার জীবন যাত্রা ছিল খুব সাধারণ। খুব ভোরে উঠে  খই মুড়ি দিয়ে নাস্তা করতাম আর বেলা ১১টায় দুপুরের ভাত খেয়ে স্কুল চলে যেতাম।একেবারে সন্ধ্যারাতে রাতের ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পরতাম।এই ছিল আমাদের তিনবেলা খাবার নিয়ম।
আমাদের বাড়ির পিছনে প্রায় ২০ গজ দূরে একটা জঙ্গল ছিল।সেখানে ডালপালা ছড়ানো একটা বিশাল আকৃতির গাব গাছ সহ ডাব গাছ, সুপারি গাছ ও আরও বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালি ছিল। ছোটবেলা থেকে শুনে আসতাম সেই গাব গাছে নাকি ভূত থাকে।ভূতের ভয়ে কেউ যেত না সেদিকে গাব গাছে গাব ধরত, পেকে নিচে পরে থাকত ,  কেউ সেগুলো তুলে নিয়ে আসার সাহস করত না,পেরে খাওয়াতো দূরের কথা।
কিন্তু,আমি ছিলাম ডানপিটে স্বভাবের।ভূতের ভয় ডর আমার ছিল না।শুধুমাত্র মার নিশেধের কারণে কখনো যাওয়া হয়নি সেদিকে।
কিন্তু আমি ছেড়ে দেয়ার ছেলে ছিলাম না। আমি আর আমার চাচাতো ভাই  কবির মিলে বুদ্ধি করেছিল, একদিন আমরা গিয়ে ভূত মামার সাথে দেখা করে আসবো।আর সালাম জানিয়ে আসবো।এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায় আর যাওয়া হয়না সেইদিকে।
একদিন স্কুলে যাবো বলে মায়ের কাছে ভাত খাওয়ার বায়না ধরি।মা স্বভাবতই বসতে বলে, কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে।সেইদিন ভাত দিতে দেরী হওয়ায় মায়ের উপর অভিমান করে ভাত না খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পরি।এরপর কবিরকে নিয়ে মায়ের সকল নিষেধ অমান্য করে সেই গাব গাছের কাছে যায়। গিয়ে দেখি ভয় পাবার মতো কিছুই নেই সেখানে।শান্ত শিষ্ট পরিবেশ।মাঝে মাঝে পাখি ডেকে উঠছে, আর এই ডাল থেকে ওই ডাল উড়ে বেড়াচ্ছে।সেখানে বিশাল আকৃতির গাব গাছ তার বিশালাকার ডালপালা ছড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।  নিচে অনেক পাকা পাকা গাব পরে আছে।কিছু কিছু পেকে পচে গেছে।আমি আর কবির পাল্লা দিয়ে  দুইজন দুই ডালে চড়ে বসলাম।দুজনেই পাশাপাশি ডালে  প্রায় মাটি থেকে ৪০/৫০ ফুট উপরে উঠে গেছিলাম।আমি ভূত মামাকে ভেঙচি কেটে বল্লমা,মামা তুমি কই।তোমার গাছে উঠে বসে আছি।সাহস থাকলে আমার সামনে ধরা দাও দেখি।
এর কিছুক্ষণ পরেই আমার চোখ মুখ টেনে আসতে লাগলো।মনে হলো কেউ যেন আমাকে পিছন থেকে টেনে ধরছে।হাত দুটো দিয়ে যত ডাল আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছি ততি হাত দুটো ডিলা হয়ে আসতে লাগলো। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।
চোখ খুলে দেখি আমি ঘরে বিছানায় শুয়ে।পাশে বসে মা অঝোরে কাঁদছে। গ্রামের অনেক লোকজন আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
পরে কবিরের থেকে শুনলাম,আমি এই ডাল ওই ডাল থেকে বারি খেয়ে খেয়ে মাটিতে পরে গ্যান হারিয়ে ফেলি। কিন্তু অবাক করার বিষয় আমার শরীরে কোন ব্যাথা ছিল না। আমার কাছে মনে হচ্ছিল সদ্য ঘুম ভেঙে চোখ মেলে দেখি এত মানুষ।
পঞ্চাশ ফিট উপর থেকে পরে ব্যাথা পাইনি। শরীরের হাড্ডি-গুড্ডি যথাস্থানেই আছে।  তাই মা আমাকে পুকুরে সাঁতার কেটে দেখাতে বললেন।মা আর গ্রামের মানুষের কথা মত তাই হলো।আমি অনিমেষেই পুকুরের ওপার থেকে এপারে  সাঁতার কেটে এলাম।
আমি আজও ভাবি,এত উপর থেকে পরে যেখানে আমার বাঁচার আশা ছিলো না।সেখানে বিন্দু মাত্র ব্যাথা পেলাম না।সত্যি কি ভুত আছে তাহলে।কিন্তু…
আমরা তিনজন চেচিয়ে উঠলাম, কিন্তু কী চাচ্চু?
কিন্তু,কে যেন কানে এসে বলে গেলো,এরপর আসলে ঠ্যাং ভেঙে গাছে ঝুলিয়ে রাখবো।

মানব জমিন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভৌতিক কাণ্ড

আপডেট টাইম : ১০:৪৪:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০১৯

বাসায় আজ মিজান চাচ্চু এসেছে। মিজান চাচ্চু আসলেই আমাদের তিন ভাই বোনকে নিয়ে দেশ বিদেশের গল্প করে । তাঁর গল্পের মূল বিষয়বস্তু হয় বিজ্ঞান বিষয়ক। কোন রকম কুসংস্কারে চাচ্চুর বিশ্বাস নাই। সব কিছুকে বিজ্ঞান দিয়ে বিবেচনা করেন।
চাচ্চু খুব স্বাধীনচেতা মানুষ।  ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরিতে মন বসাতে পারেননি।তবে এখন একজন সফল ব্যবসায়ী।  ব্যবসার সুবাদে বিভিন্ন দেশ বিদেশে ঘুরেন।তাই চাচ্চুর জ্ঞানের ভান্ডারও বিশাল।তবে,আজ চাচ্চু অন্য ধাঁচের গল্প শুনাবেন। যার পুরোটাই রহস্যময় থেকে গেছে চাচ্চুর কাছে।যার উত্তর চাচ্চু এখনো গোপনে খুঁজেবেড়ায়। যা বিজ্ঞান বহির্ভূত।তাই কিছুটা  ইতস্তত করতে করতে আমাদের জোরাজোরিতে  শুরু করলেন।
চারিদিকে স্তব্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে।

তিনি চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন,  যদিও ভূতে আমার বিশ্বাস নাই কোন।তবুও,আমার সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার অন্তত একটি আজ আমি শেয়ার করলাম।যার কোন সাইন্টিফিক ব্যাখ্যা আমি আজোও পাইনি।আমার কিছু সাইন্টিস্ট বন্ধুদের কাছে বলেছিলাম,কিন্তু তারা কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।জগতে অনেক কিছু এখনও রহস্যময় থেকে গেছে।যার সঠিক ব্যাখ্যা এখনও কেউ জানে না।
তোমরা যদি জানতে পারো তাহলে আমাকে জানাবে।

আমি তখন ছোট। ক্লাস সিক্সে পড়ি।আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল লক্ষীপুর সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১৬ কি.মি ভিতরে শ্যমগঞ্জের এক অজপাড়া গ্রামে।তখনকার জীবন যাত্রা ছিল খুব সাধারণ। খুব ভোরে উঠে  খই মুড়ি দিয়ে নাস্তা করতাম আর বেলা ১১টায় দুপুরের ভাত খেয়ে স্কুল চলে যেতাম।একেবারে সন্ধ্যারাতে রাতের ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পরতাম।এই ছিল আমাদের তিনবেলা খাবার নিয়ম।
আমাদের বাড়ির পিছনে প্রায় ২০ গজ দূরে একটা জঙ্গল ছিল।সেখানে ডালপালা ছড়ানো একটা বিশাল আকৃতির গাব গাছ সহ ডাব গাছ, সুপারি গাছ ও আরও বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালি ছিল। ছোটবেলা থেকে শুনে আসতাম সেই গাব গাছে নাকি ভূত থাকে।ভূতের ভয়ে কেউ যেত না সেদিকে গাব গাছে গাব ধরত, পেকে নিচে পরে থাকত ,  কেউ সেগুলো তুলে নিয়ে আসার সাহস করত না,পেরে খাওয়াতো দূরের কথা।
কিন্তু,আমি ছিলাম ডানপিটে স্বভাবের।ভূতের ভয় ডর আমার ছিল না।শুধুমাত্র মার নিশেধের কারণে কখনো যাওয়া হয়নি সেদিকে।
কিন্তু আমি ছেড়ে দেয়ার ছেলে ছিলাম না। আমি আর আমার চাচাতো ভাই  কবির মিলে বুদ্ধি করেছিল, একদিন আমরা গিয়ে ভূত মামার সাথে দেখা করে আসবো।আর সালাম জানিয়ে আসবো।এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায় আর যাওয়া হয়না সেইদিকে।
একদিন স্কুলে যাবো বলে মায়ের কাছে ভাত খাওয়ার বায়না ধরি।মা স্বভাবতই বসতে বলে, কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে।সেইদিন ভাত দিতে দেরী হওয়ায় মায়ের উপর অভিমান করে ভাত না খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পরি।এরপর কবিরকে নিয়ে মায়ের সকল নিষেধ অমান্য করে সেই গাব গাছের কাছে যায়। গিয়ে দেখি ভয় পাবার মতো কিছুই নেই সেখানে।শান্ত শিষ্ট পরিবেশ।মাঝে মাঝে পাখি ডেকে উঠছে, আর এই ডাল থেকে ওই ডাল উড়ে বেড়াচ্ছে।সেখানে বিশাল আকৃতির গাব গাছ তার বিশালাকার ডালপালা ছড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।  নিচে অনেক পাকা পাকা গাব পরে আছে।কিছু কিছু পেকে পচে গেছে।আমি আর কবির পাল্লা দিয়ে  দুইজন দুই ডালে চড়ে বসলাম।দুজনেই পাশাপাশি ডালে  প্রায় মাটি থেকে ৪০/৫০ ফুট উপরে উঠে গেছিলাম।আমি ভূত মামাকে ভেঙচি কেটে বল্লমা,মামা তুমি কই।তোমার গাছে উঠে বসে আছি।সাহস থাকলে আমার সামনে ধরা দাও দেখি।
এর কিছুক্ষণ পরেই আমার চোখ মুখ টেনে আসতে লাগলো।মনে হলো কেউ যেন আমাকে পিছন থেকে টেনে ধরছে।হাত দুটো দিয়ে যত ডাল আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছি ততি হাত দুটো ডিলা হয়ে আসতে লাগলো। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।
চোখ খুলে দেখি আমি ঘরে বিছানায় শুয়ে।পাশে বসে মা অঝোরে কাঁদছে। গ্রামের অনেক লোকজন আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
পরে কবিরের থেকে শুনলাম,আমি এই ডাল ওই ডাল থেকে বারি খেয়ে খেয়ে মাটিতে পরে গ্যান হারিয়ে ফেলি। কিন্তু অবাক করার বিষয় আমার শরীরে কোন ব্যাথা ছিল না। আমার কাছে মনে হচ্ছিল সদ্য ঘুম ভেঙে চোখ মেলে দেখি এত মানুষ।
পঞ্চাশ ফিট উপর থেকে পরে ব্যাথা পাইনি। শরীরের হাড্ডি-গুড্ডি যথাস্থানেই আছে।  তাই মা আমাকে পুকুরে সাঁতার কেটে দেখাতে বললেন।মা আর গ্রামের মানুষের কথা মত তাই হলো।আমি অনিমেষেই পুকুরের ওপার থেকে এপারে  সাঁতার কেটে এলাম।
আমি আজও ভাবি,এত উপর থেকে পরে যেখানে আমার বাঁচার আশা ছিলো না।সেখানে বিন্দু মাত্র ব্যাথা পেলাম না।সত্যি কি ভুত আছে তাহলে।কিন্তু…
আমরা তিনজন চেচিয়ে উঠলাম, কিন্তু কী চাচ্চু?
কিন্তু,কে যেন কানে এসে বলে গেলো,এরপর আসলে ঠ্যাং ভেঙে গাছে ঝুলিয়ে রাখবো।

মানব জমিন