শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন,কৃষকের জীবন-জীবিকা সবজি ওপর নির্ভরশীল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্ষা পরবর্তী সময়ে চাষ করা আগাম শীতকালীন সবজি মুলা ও শরৎকালীন বরবটির বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে উৎপাদিত সবজির বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে ফুটে উঠেছে খুশির ঝিলিক। উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শীতলক্ষ্যা নদীর উভয় তীরের ১০ ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকা সবজি চাষের ওপর নির্ভরশীল।

উপজেলার সবজি ভান্ডার হিসেবে পরিচিত ইছাপুরা, বাঘবেড়, দক্ষিণবাগ, ভোলান, পলহান বর্তমান পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের উর্বর ভূমিতে চাষাবাদ করে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করেন তারা। কিন্তু বিগত কয়েক দিনের টানা অবিরাম বৃষ্টি কারণে চাষিদের ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শরৎকালীন সবজি বরবটি ও আগাম শীতকালীন সবজি মুলা চাষাবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন রূপগঞ্জের চাষিরা।

সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় কথা হয় দক্ষিণবাঘ এলাকার কৃষক নায়েবালী, আলম মিয়া, জসিম উদ্দীনের সঙ্গে। তারা জানান, লাগাতার বৃষ্টিতে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই পচে গেছে। পরবর্তী সময়ে সবজি চাষাবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন তারা।

কৃষক নায়েবালী জানান, ৩০ শতক জমিতে মুলা চাষ করে প্রায় ৮০ হাজার টাকার মুলা বিক্রি করেছেন তিনি। সার, বীজ, বালাইনাশক ও শ্রমিক বাবদ তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। আরেক কৃষক জসিম উদ্দিন ৪০ শতক জমিতে মুলা চাষ করে বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা।

অপর কৃষক আলম বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, ৮০ শতক জমিতে শরৎকালীন সবজি বরবটি চাষ করেছেন তিনি। ৯০ হাজার টাকার মতো খরচ হলেও বিক্রি করেছেন প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার বরবটি। রূপগঞ্জ উপজেলার নহগরপাড়া, খামারপাড়া, কামসাইর, আলমপুরা, বসুলিয়া, বরুনা, বড়ালু, পূর্বাচলসহ প্রায় ১০ হাজার কৃষক সবজি চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

কৃষকরা জানান, মাটি উর্বর হওয়ায় এখানে সব ধরনের সবজি চাষ হয়। উপজেলার বিভিন্ন চরে উৎপাদিত বীষমুক্ত বেগুন ও মুলার আলাদা কদর রয়েছে সারা দেশব্যাপী। এছাড়া শিম, ঢেঁড়শ, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, তিত করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ ও পেঁপেসহ বিভিন্ন ধরনের শাক উৎপাদিত হয় এখানে। রূপগঞ্জে উৎপাদিত সবজি গুণেমানে ও স্বাদে ভালো হওয়ায় ভোজন রসিকদের কাছে এখানকার সবজির চাহিদা বেশি।

কৃষকরা ভ্যান, রিকশা, ট্রলি, নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত বোটে করে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে নিয়ে আসেন সবজি বিক্রির জন্য। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকার রামপুরা, গোলশান, মেরুল, বাড্ডা, মাদারটেক, বাসাব, নদ্দীপাড়া, ডেমড়া ও সারলিয়ার বাজারেও যাচ্ছে রূপগঞ্জে সবজি।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব বাজার থেকে সবজি সংগ্রহ করে ট্রাকযোগে আশপাশের এলাকা ও ঢাকাসহ সারেদেশে সরবরাহ করেন। তবে সবজি সংরক্ষণের জন্য রূপগঞ্জে কোনো হিমাগার না থাকায় সবজি চাষীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে কৃষকরা দাবি জানিয়ে আসলেও হিমাগার নির্মাণ হচ্ছে না। ফলে পাইকারদের বেঁধে দেওয়া দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, রূপগঞ্জে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষাবাদ হয়। আগাম শীতকালীন শাক-সবজি রোপণ কেবল শুরু হয়েছে। ফুলকপি, বাধাকপি ও টমেটোর চারা তৈরি করা হচ্ছে। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ সহায়তা দেওয়ার কারণে আশানুরূপ ফলন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম  জানান, আগাম শীতকালীন সবজি মুলা ও শরৎকালীন বরবটির বাম্পার ফলন হয়েছে রূপগঞ্জে। ভালো দাম পেয়ে কৃষকেরাও খুশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরো ভালো ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর