ঢাকা ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উন্নয়ন কাজে বড় ধাক্কা জি কে শামীম গ্রেপ্তারে সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪২:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০১৯
  • ২২৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘সচিবালয়ে নতুন ২০তলা বিল্ডিং নির্মাণে ২৭৫টি পাইলিংয়ের মধ্যে ২০৬টির কাজ হয়েছে। বাকিগুলো শেষ না করেই মেশিন নিয়ে চলে যেতে হচ্ছে। খুবই খারাপ লাগছে।’ এভাবেই আমার সংবাদকে নিজের খেদোক্তির কথা জানান জিআইএ পাইলিং কোম্পানির মিঠুন শেখ।

আর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক কাদের বলেন, ‘স্যার (জি কে শামীম) গ্রেপ্তারের পর তার নিজের, স্ত্রী ও মার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে। লেনদেন করতে না পারায় লেবারের টাকা দেয়া যাচ্ছে না। তাই সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ইনি (জি কে শামীম) এককভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাই গ্রেপ্তার হওয়ায় কেউ কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। গণপূর্ত অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেনে শামীম সিন্ডিকেট এসব কাজ পাওয়ায় উন্নয়ন কাজে এভাবেই বড় ধাক্কা লাগা শুরু হয়েছে। যদিও গত অর্থবছরে ৯৪ শতাংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হওয়ায় এবার আরও বেশি করে বাস্তবায়নের জন্য দুই লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু তা ব্যয় করা তো দূরের কথা শামীম সিন্ডিকেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অসংখ্য প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেলো।

সম্প্রতি নিজ কার্যালয়ে অনেক টাকা ও অবৈধ অস্ত্রসহ কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামীম আটক হন। এরপরই সরকার পরিচালনার প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে নতুন ভবন, রাজস্ব আদায়ের প্রাণকেন্দ্র জাতীয় রাজস্ব ভবন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত র্যাব হেডকোয়ার্টারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

এর জন্য দায়ী কারা জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলছে, যা হওয়ার পূর্ত ভবন থেকে হয়েছে। অপরদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, আমরা শুধু কাগজ তৈরি করেছি। অনুমোদন সিস্টেম অনুযায়ী কম বরাদ্দের অনুমোদন পূর্ত ভবন, ১০০ কোটি টাকা সচিবালয় এবং বেশি হলে মন্ত্রিসভার ক্রয় কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন প্রকৌশলীরা বলছেন, এটা একার কারো কাজ নয়। এটা পুরো টিমওয়ার্ক। কাজেই কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে পূর্ত ভবন পুরো দায়ী নয়। তবে এ ঘটনার পর সবাই দৌড়ের মধ্যে ও আতঙ্কে রয়েছেন। প্রায় দিনই প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে মিটিং করতে হচ্ছে। গত রোববার পূর্ত ভবনে মিটিং হয়েছে। গতকালও সচিবালয়ে সমন্বয় সভা হয়েছে। কখন কি তথ্য লাগে সেই দৌড়ে আছেন সবাই।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে গতকাল যোগাযোগ করা হলে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম আমার সংবাদকে বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তি শামীমকে কাজ দিইনি। কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। তাই সে গ্রেপ্তার হলেও কোম্পানির সাথে হিসাব হবে।

অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কাজ বন্ধ থাকতে পারে না। কাজেই জিকেবি কোম্পানি কাজ বন্ধ করলে বিকল্প পথ দেখা হবে। হিসাব করে দেখা হবে কত শতাংশ কাজ হয়েছে। সে অনুযায়ী তাদের বিল পরিশোধ করে অন্য কোম্পানিকে কাজ দেয়া হবে। এডিপিতে ধাক্কা লাগার ব্যাপারে বলেন, বর্তমানে এসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ হলেও পরে পুষিয়ে নেয়া হবে।

মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার এ প্রতিবেদককে বলেন, জি কে শামীমের সার্বিক দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ তারা যেকোনো প্রকল্পের স্টিমেট ও টেন্ডার আহ্বান করে কাজও দেয় ঠিকাদারকে। কাজেই গণপূর্ত অধিদপ্তরই বলতে পারবে আসলে কি হয়েছে, পরবর্তীতে কি করতে হবে। তাদের সুপারিশেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাদত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মিটিংয়ে আছি, শেষ হতে অনেক সময় লাগবে, রাত হয়ে যাবে। কথা বলা সম্ভব না।

তবে এর আগে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ব্যক্তি শামীমকে কাজ দেয়া হয়নি। জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেই কাজ দেয়া হয়েছে। কাজেই শর্ত ভঙ্গ করলে বিকল্প পথ দেখা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনিয়ম হলে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিলে গণপূর্ত অধিদপ্তর সহযোগিতা করবে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৯৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। তার আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাস্তবায়িত হয়েছিল ৯৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এ বছর বেশি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এ জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বেশি করে অর্থও বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু তা হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

কারণ হিসেবে তারা বলেন, জি কে শামীমকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কাজ দিলেও অনেক সময় চলে যাবে। এ জন্য কাজের ব্যাঘাত ঘটবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাগিয়ে নিয়েছেন।

ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ র্যারের হাতে গ্রেপ্তারের পরই গত ২০ সেপ্টেম্বর নিকেতনের নিজ কার্যালয়ে অবৈধ অস্ত্রসহ আটক হন জি কে শামীম।

এসময় র্যাবের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম গণমাধ্যমকে জানান, অভিযানে শামীমের কার্যালয় থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ১৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি টাকা ও ২৫ কোটি টাকা তার নামে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবেই পরিচিত এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। তার বাবা মো. আফসার উদ্দিন মাস্টার হলেও নিকেতনে শামীম জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে ঠিকাদারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিএনপির সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের ছত্রছায়ায় ঠিকাদারি পেশায় একক আধিপত্য বিস্তার করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতার পালাবদলে ২০০৮ সালের পরে তিনি ভোল্ট পাল্টে যুবলীগ নেতা বনে যান।

এরপর শুধু কাজ আর কাজ পেতে থাকে জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি। গণপূর্তেও শত শত ঠিকাদার কোনো কাজ না পেলেও তার কাজের অভাব হয়নি। তবে শামীমের প্রভাব এতই বেশি যে তার ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে চান না।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার জালাল গত রোববার বলেন, ‘হায়রে শামীম তুমি তো আমাগো কাছে ধরনা দিতা। বর্তমানে হাইফাই গাড়ি, বডিগার্ডে ঘুরো। আর আমাগো দুই চাকার মোটরসাইকেলই ভরসা।’ তিনি আরও বলেন, শামীমের মতো ঠিকাদারদের দাপট নিয়ে মানুষ বলাবলি করায় লজ্জা লাগে। অথচ এক সময় শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষরাই ঠিকাদারি করতো বলে জানান তিনি।

শামীমের জোরালো কানেকশন থাকায় সরকারের বড় বড় সব কাজই পেয়েছে। রাজস্ব আহরণের জন্য যে আধুনিক ও অত্যাধুনিক জাতীয় রাজস্ব ভবন সেই বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শামীমের হাতে নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে এর কাজ শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে মাঝপথে আটকে যায়।

এরপর ১৪১ কোটি টাকা থেকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর ব্যয় ৪৯৫ কোটি টাকায় নিয়ে গেছে। আর জি কে বিল্ডার্স চুক্তিপত্রে ৩০ মাস সময় নিয়ে ২০১৫ সালের মার্চে কাজ শুরু করলেও তা এখনো শেষ করতে পারেনি। বরং জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে কাজ।

শুধু এটিরই যে দুরাবস্থা তাই নয়, ‘বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২০তলা বিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি শুরু না করার আগে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ‘ঢাকার শেরে বাংলানগরে জাতীয় সচিবালয় নির্মাণ’ না হওয়ায় সরকার গত বছর এখানেই অনুমোদন দেয়। জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে ৩২৩ কোটি টাকায় দুই বছরের মধ্যে কাজ করার জন্য গত ২৮ মার্চ চুক্তি করে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

গত জানুয়ারি থেকে আগামী বছরের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ করার কথা। তা দ্রুত শেষ করতে চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে সরকার। অত্যাধুনিক এ ভবনে কেবিনেট অর্থাৎ মন্ত্রিপরিষদের সব কাজ এ ভবনেই হওয়ার কথা। কাজের গতি বাড়াতে ২৫ কোটি টাকা অবমুক্তিও করা হয়েছে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু শুরু না হতেই বন্ধ হয়ে গেলো প্রায় চার লাখ বর্গফুটের ২০তলা এ বিল্ডিং নির্মাণের কাজ।

গত রোববার পাইলিং কোম্পানির মিঠুন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ভাই কি করার আছে। শামীম গ্রেপ্তার হওয়ায় কাজ বন্ধ করে মেশিন নিয়ে চলে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, টাকা ছাড়া তো কাজ করা যায় না। কয়েকদিন হয়ে গেছে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছে না। তাহলে টাকা ছাড়া কিভাবে কাজ করি।

এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জি কে শামীম কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২৭৫টি পাইলিংয়ের মধ্যে ২০৬টির কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু স্যার জেলে থাকায় কেউ কোনো তথ্য দিতে না পারায় টাকার অভাবে কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’

প্রায় ৪৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে র্যাব হেডকোয়ার্টার নির্মাণ প্রকল্পের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৯০ শতাংশ পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে এর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। এ জন্য চলতি অর্থবছরে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে সরকার।

অপরদিকে ঢাকাস্থ মিরপুর ৬নং সেকশনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১০৬৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সব ভবনের ফিনিশিং কাজ চলামান ছিলো। সেপ্টেম্বরে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা। টুকরো কিছু কাজ শেষ করতে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তারপরও এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

শুধু ওই তিনটি প্রকল্পই নয়, সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জিকেবি কোম্পানি। সার্বিক ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে জি কে শামীম কোম্পানির প্রকল্প ম্যানেজার মো. কাদের এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘স্যার গ্রেপ্তারের দুই দিন পরই টাকার অভাবে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। সবার ব্যাংক হিসাব নম্বর জব্দ করা হয়েছে। কোনো লেনদেন করা যাচ্ছে না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্যারই সব নিয়ন্ত্রণ করতেন। কাজেই তার অবর্তমানে কেউ কোনো তথ্যও দিতে পারছে না। কিন্তু ম্যাডামের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা চাইলেও কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আমরা কয়েকজন অফিসে নতুন। তাই বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

তবে শামীম র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর গণমাধ্যমকে জি কে শামীমের পিএস বলে দাবি করা দিদারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, র্যাবের হাতে জব্দ এ বিপুল অর্থ সবই জি কে শামীমের। সচিবালয়, র‍্যাব হেডকোয়ার্টার, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালসহ বড় বড় ১৭টি প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন শামীম। তার মালিকানাধীন জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে তিনি এসব কাজ পেয়েছেন।

দিদারুল ইসলাম জানান, জি কে শামীমের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৫০০ কোটি টাকার র্যাব হেডকোয়ার্টারের কাজ পেয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ৪০০ কোটি টাকা এবং পঙ্গু হাসপাতালের ৩৫০ কোটি টাকার কাজ।

এছাড়া শামীমের হাতে রয়েছে- সচিবালয়ে ১৫০ কোটি টাকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন, ১৫০ কোটি টাকার কেবিনেট ভবন, ৪০০ কোটি টাকার এনবিআর, ২০০ কোটি টাকার মহাখালী ডাইজেস্টিভ এবং বেইলি রোডে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প।

এছাড়া ২০-২৫ কোটি টাকার অ্যাজমা, ক্যান্সার, সেবা মহাবিদ্যালয়, নিউরোসায়েন্স, বিজ্ঞান জাদুঘর, পিএসসি, ৩০-৬০ কোটি টাকার র্যাব ফোর্স, ৬৫ কোটি টাকার এনজিও ফাউন্ডেশন এবং মিরপুর-৬ তে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ রয়েছে।

আমার সংবাদ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

উন্নয়ন কাজে বড় ধাক্কা জি কে শামীম গ্রেপ্তারে সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ

আপডেট টাইম : ০৭:৪২:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘সচিবালয়ে নতুন ২০তলা বিল্ডিং নির্মাণে ২৭৫টি পাইলিংয়ের মধ্যে ২০৬টির কাজ হয়েছে। বাকিগুলো শেষ না করেই মেশিন নিয়ে চলে যেতে হচ্ছে। খুবই খারাপ লাগছে।’ এভাবেই আমার সংবাদকে নিজের খেদোক্তির কথা জানান জিআইএ পাইলিং কোম্পানির মিঠুন শেখ।

আর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক কাদের বলেন, ‘স্যার (জি কে শামীম) গ্রেপ্তারের পর তার নিজের, স্ত্রী ও মার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে। লেনদেন করতে না পারায় লেবারের টাকা দেয়া যাচ্ছে না। তাই সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ইনি (জি কে শামীম) এককভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাই গ্রেপ্তার হওয়ায় কেউ কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। গণপূর্ত অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেনে শামীম সিন্ডিকেট এসব কাজ পাওয়ায় উন্নয়ন কাজে এভাবেই বড় ধাক্কা লাগা শুরু হয়েছে। যদিও গত অর্থবছরে ৯৪ শতাংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হওয়ায় এবার আরও বেশি করে বাস্তবায়নের জন্য দুই লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু তা ব্যয় করা তো দূরের কথা শামীম সিন্ডিকেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অসংখ্য প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেলো।

সম্প্রতি নিজ কার্যালয়ে অনেক টাকা ও অবৈধ অস্ত্রসহ কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামীম আটক হন। এরপরই সরকার পরিচালনার প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে নতুন ভবন, রাজস্ব আদায়ের প্রাণকেন্দ্র জাতীয় রাজস্ব ভবন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত র্যাব হেডকোয়ার্টারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

এর জন্য দায়ী কারা জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলছে, যা হওয়ার পূর্ত ভবন থেকে হয়েছে। অপরদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, আমরা শুধু কাগজ তৈরি করেছি। অনুমোদন সিস্টেম অনুযায়ী কম বরাদ্দের অনুমোদন পূর্ত ভবন, ১০০ কোটি টাকা সচিবালয় এবং বেশি হলে মন্ত্রিসভার ক্রয় কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন প্রকৌশলীরা বলছেন, এটা একার কারো কাজ নয়। এটা পুরো টিমওয়ার্ক। কাজেই কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে পূর্ত ভবন পুরো দায়ী নয়। তবে এ ঘটনার পর সবাই দৌড়ের মধ্যে ও আতঙ্কে রয়েছেন। প্রায় দিনই প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে মিটিং করতে হচ্ছে। গত রোববার পূর্ত ভবনে মিটিং হয়েছে। গতকালও সচিবালয়ে সমন্বয় সভা হয়েছে। কখন কি তথ্য লাগে সেই দৌড়ে আছেন সবাই।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে গতকাল যোগাযোগ করা হলে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম আমার সংবাদকে বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তি শামীমকে কাজ দিইনি। কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। তাই সে গ্রেপ্তার হলেও কোম্পানির সাথে হিসাব হবে।

অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কাজ বন্ধ থাকতে পারে না। কাজেই জিকেবি কোম্পানি কাজ বন্ধ করলে বিকল্প পথ দেখা হবে। হিসাব করে দেখা হবে কত শতাংশ কাজ হয়েছে। সে অনুযায়ী তাদের বিল পরিশোধ করে অন্য কোম্পানিকে কাজ দেয়া হবে। এডিপিতে ধাক্কা লাগার ব্যাপারে বলেন, বর্তমানে এসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ হলেও পরে পুষিয়ে নেয়া হবে।

মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার এ প্রতিবেদককে বলেন, জি কে শামীমের সার্বিক দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ তারা যেকোনো প্রকল্পের স্টিমেট ও টেন্ডার আহ্বান করে কাজও দেয় ঠিকাদারকে। কাজেই গণপূর্ত অধিদপ্তরই বলতে পারবে আসলে কি হয়েছে, পরবর্তীতে কি করতে হবে। তাদের সুপারিশেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাদত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মিটিংয়ে আছি, শেষ হতে অনেক সময় লাগবে, রাত হয়ে যাবে। কথা বলা সম্ভব না।

তবে এর আগে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ব্যক্তি শামীমকে কাজ দেয়া হয়নি। জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেই কাজ দেয়া হয়েছে। কাজেই শর্ত ভঙ্গ করলে বিকল্প পথ দেখা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনিয়ম হলে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিলে গণপূর্ত অধিদপ্তর সহযোগিতা করবে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৯৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। তার আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাস্তবায়িত হয়েছিল ৯৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এ বছর বেশি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এ জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বেশি করে অর্থও বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু তা হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

কারণ হিসেবে তারা বলেন, জি কে শামীমকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে কাজ দিলেও অনেক সময় চলে যাবে। এ জন্য কাজের ব্যাঘাত ঘটবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাগিয়ে নিয়েছেন।

ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ র্যারের হাতে গ্রেপ্তারের পরই গত ২০ সেপ্টেম্বর নিকেতনের নিজ কার্যালয়ে অবৈধ অস্ত্রসহ আটক হন জি কে শামীম।

এসময় র্যাবের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম গণমাধ্যমকে জানান, অভিযানে শামীমের কার্যালয় থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ১৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি টাকা ও ২৫ কোটি টাকা তার নামে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবেই পরিচিত এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। তার বাবা মো. আফসার উদ্দিন মাস্টার হলেও নিকেতনে শামীম জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে ঠিকাদারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিএনপির সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের ছত্রছায়ায় ঠিকাদারি পেশায় একক আধিপত্য বিস্তার করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতার পালাবদলে ২০০৮ সালের পরে তিনি ভোল্ট পাল্টে যুবলীগ নেতা বনে যান।

এরপর শুধু কাজ আর কাজ পেতে থাকে জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি। গণপূর্তেও শত শত ঠিকাদার কোনো কাজ না পেলেও তার কাজের অভাব হয়নি। তবে শামীমের প্রভাব এতই বেশি যে তার ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে চান না।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার জালাল গত রোববার বলেন, ‘হায়রে শামীম তুমি তো আমাগো কাছে ধরনা দিতা। বর্তমানে হাইফাই গাড়ি, বডিগার্ডে ঘুরো। আর আমাগো দুই চাকার মোটরসাইকেলই ভরসা।’ তিনি আরও বলেন, শামীমের মতো ঠিকাদারদের দাপট নিয়ে মানুষ বলাবলি করায় লজ্জা লাগে। অথচ এক সময় শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষরাই ঠিকাদারি করতো বলে জানান তিনি।

শামীমের জোরালো কানেকশন থাকায় সরকারের বড় বড় সব কাজই পেয়েছে। রাজস্ব আহরণের জন্য যে আধুনিক ও অত্যাধুনিক জাতীয় রাজস্ব ভবন সেই বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শামীমের হাতে নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে এর কাজ শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে মাঝপথে আটকে যায়।

এরপর ১৪১ কোটি টাকা থেকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর ব্যয় ৪৯৫ কোটি টাকায় নিয়ে গেছে। আর জি কে বিল্ডার্স চুক্তিপত্রে ৩০ মাস সময় নিয়ে ২০১৫ সালের মার্চে কাজ শুরু করলেও তা এখনো শেষ করতে পারেনি। বরং জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে কাজ।

শুধু এটিরই যে দুরাবস্থা তাই নয়, ‘বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২০তলা বিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি শুরু না করার আগে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ‘ঢাকার শেরে বাংলানগরে জাতীয় সচিবালয় নির্মাণ’ না হওয়ায় সরকার গত বছর এখানেই অনুমোদন দেয়। জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে ৩২৩ কোটি টাকায় দুই বছরের মধ্যে কাজ করার জন্য গত ২৮ মার্চ চুক্তি করে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

গত জানুয়ারি থেকে আগামী বছরের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ করার কথা। তা দ্রুত শেষ করতে চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে সরকার। অত্যাধুনিক এ ভবনে কেবিনেট অর্থাৎ মন্ত্রিপরিষদের সব কাজ এ ভবনেই হওয়ার কথা। কাজের গতি বাড়াতে ২৫ কোটি টাকা অবমুক্তিও করা হয়েছে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু শুরু না হতেই বন্ধ হয়ে গেলো প্রায় চার লাখ বর্গফুটের ২০তলা এ বিল্ডিং নির্মাণের কাজ।

গত রোববার পাইলিং কোম্পানির মিঠুন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ভাই কি করার আছে। শামীম গ্রেপ্তার হওয়ায় কাজ বন্ধ করে মেশিন নিয়ে চলে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, টাকা ছাড়া তো কাজ করা যায় না। কয়েকদিন হয়ে গেছে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছে না। তাহলে টাকা ছাড়া কিভাবে কাজ করি।

এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জি কে শামীম কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২৭৫টি পাইলিংয়ের মধ্যে ২০৬টির কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু স্যার জেলে থাকায় কেউ কোনো তথ্য দিতে না পারায় টাকার অভাবে কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’

প্রায় ৪৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে র্যাব হেডকোয়ার্টার নির্মাণ প্রকল্পের কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৯০ শতাংশ পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে এর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। এ জন্য চলতি অর্থবছরে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে সরকার।

অপরদিকে ঢাকাস্থ মিরপুর ৬নং সেকশনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১০৬৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সব ভবনের ফিনিশিং কাজ চলামান ছিলো। সেপ্টেম্বরে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা। টুকরো কিছু কাজ শেষ করতে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তারপরও এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

শুধু ওই তিনটি প্রকল্পই নয়, সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জিকেবি কোম্পানি। সার্বিক ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে জি কে শামীম কোম্পানির প্রকল্প ম্যানেজার মো. কাদের এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘স্যার গ্রেপ্তারের দুই দিন পরই টাকার অভাবে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। সবার ব্যাংক হিসাব নম্বর জব্দ করা হয়েছে। কোনো লেনদেন করা যাচ্ছে না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্যারই সব নিয়ন্ত্রণ করতেন। কাজেই তার অবর্তমানে কেউ কোনো তথ্যও দিতে পারছে না। কিন্তু ম্যাডামের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা চাইলেও কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, আমরা কয়েকজন অফিসে নতুন। তাই বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

তবে শামীম র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর গণমাধ্যমকে জি কে শামীমের পিএস বলে দাবি করা দিদারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, র্যাবের হাতে জব্দ এ বিপুল অর্থ সবই জি কে শামীমের। সচিবালয়, র‍্যাব হেডকোয়ার্টার, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালসহ বড় বড় ১৭টি প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন শামীম। তার মালিকানাধীন জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে তিনি এসব কাজ পেয়েছেন।

দিদারুল ইসলাম জানান, জি কে শামীমের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৫০০ কোটি টাকার র্যাব হেডকোয়ার্টারের কাজ পেয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ৪০০ কোটি টাকা এবং পঙ্গু হাসপাতালের ৩৫০ কোটি টাকার কাজ।

এছাড়া শামীমের হাতে রয়েছে- সচিবালয়ে ১৫০ কোটি টাকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন, ১৫০ কোটি টাকার কেবিনেট ভবন, ৪০০ কোটি টাকার এনবিআর, ২০০ কোটি টাকার মহাখালী ডাইজেস্টিভ এবং বেইলি রোডে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প।

এছাড়া ২০-২৫ কোটি টাকার অ্যাজমা, ক্যান্সার, সেবা মহাবিদ্যালয়, নিউরোসায়েন্স, বিজ্ঞান জাদুঘর, পিএসসি, ৩০-৬০ কোটি টাকার র্যাব ফোর্স, ৬৫ কোটি টাকার এনজিও ফাউন্ডেশন এবং মিরপুর-৬ তে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ রয়েছে।

আমার সংবাদ