মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং মোবাইল ব্যাংকিংকে কেন্দ্র করে দেশে অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। সম্প্রতি পুলিশ সেন্টার (সিপিসি), সিআইডি এমনই চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের ভয়ংকর অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে।
পুলিশ বলছে, এজেন্ট ও গ্রাহকের সমন্বয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব অপরাধী চক্র।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সহজেই তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডির একটি টিম পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও পেনাল কোডে রুজুকৃত এক মামলার সূত্র ধরে ওই চক্রকে শনাক্ত করে। জানা গেছে, ময়মনসিংহের ত্রিশালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্ট ছিলেন তারা।
পুলিশের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে ৪২ বছর বয়সী এক নারীর মোবাইলে ফোন আসে। তাকে বলা হয় আপনার সন্তানকে অপহরণ করা হয়েছে। যদি সন্তানকে ফেরত চান তাহলে ইমোতে নগ্ন হয়ে ভিডিও কল দিতে হবে!
তখন তিনি তার সন্তানের কথা চিন্তা করে চক্রটির কথা মতো ভিডিও কলে আসেন। কিছু সময় পর তিনি জানতে পারেন তার সন্তানের অপহরণের বিষয়টা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এরপর তার নগ্ন ছবি প্রকাশের হুমকি দিয়ে প্রতারকচক্র মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার এই চক্রটির সদস্যদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। গত ২৪ তারিখ ময়মনসিংহের ত্রিশালের চকপাশ পাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আলমগীর হোসেনকে। একই দিন পোড়াবাড়ী রোড থেকে ধরা হয় জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক অপরাধীকে।
যেভাবে হচ্ছে এমন অপরাধ: কিছু এজেন্ট চক্রের সদস্য ভুয়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের হিসাব খুলে ভিকটিমদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। গ্রেপ্তার হওয়া এই দুই এজেন্ট প্রতারক চক্রকে ভুয়া নাম-ঠিকানায় মোবাইল ফাইন্যান্স হিসাব খুলে দেন। বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও কোনো প্রকার লেনদেন তারা লিপিবদ্ধ না করে প্রতারক চক্রের কাছে লাখ লাখ টাকা বিলিও করেছে।
নারীরা বেশি শিকার: সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে প্রায় ৬৮ শতাংশ নারী সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। অপরাধের শিকার হয়ে একটি বড় অংশই অভিযোগ করেন না।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১১ ধাপে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এর মধ্যে চারটিই নতুন ধারার অপরাধ। এই অপরাধের শিকার হওয়াদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে চালানো জরিপে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে দেশে সাইবার অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কপিরাইট আইন লঙ্ঘন, অনলাইনে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণা এবং অনলাইনে কাজ করিয়ে নেয়ার কথা বলে প্রতারণা।
সাইবার অপরাধে আক্রান্তদের মধ্যে ফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকির শিকার হচ্ছেন ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। কপিরাইট লঙ্ঘনের মাত্রা ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অনলাইনে কাজ করিয়ে নিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। জরিপের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এগুলো দেশে নতুন ধরনের অপরাধ।