ঢাকা ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে: শেখ হাসিনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৮:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৬৩ বার

হ্ওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আর বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনটি মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের ৭৪ তম সাধারণ পরিষদের ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সমস্যা এখন আর বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বাংলাদেশের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু ক্রমবর্ধমান স্থান সংকট এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে এই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর ৪টা ২৮ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা প্রলম্বিত হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি। আমি অনুরোধ করব এই সমস্যার, অনিশ্চয়তার বিষয়টি যেন সকলে অনুধাবন করেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমস্যার বোঝা বহন করে চলেছি যা মিয়ানমারের তৈরি। এটি সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমার এবং তার নিজস্ব নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যকার একটি সমস্যা। তাদের নিজেদেরই এর সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় রাখাইনে নিজ গৃহে যাওয়ার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, ‘আমি এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২ তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ সমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং রাখাইন প্রদেশে বেসামরিক তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় প্রতিষ্ঠাসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলাম। আজ আমি কিছু প্রস্তাব আবার পেশ করছি।’

এক. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন ও আত্মীকরণে মিয়ানমারকে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে।দুই. বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলুপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে।

তিন. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হতে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

চার. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ সমূহ বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক বিশেষত জাতিসংঘ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গৃহীত সংস্কার উদ্যোগগুলোকে সাধুবাদ জানাই। আশা করছি নতুন প্রজন্মের জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম এবং নতুনরূপে সজ্জিত জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতিসংঘ স্বাগতিক রাষ্ট্রের জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে।

এর আগে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হওয়ায় শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি বাস্তবিক পক্ষেই দুঃখজনক যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হওয়ায় আজ এই মহান সভায় এই বিষয়টি আমাকে পুনরায় উত্থাপন করতে হচ্ছে। ১১ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের আশ্রয়ে রয়েছে। হত্যা-নির্যাতনের মুখে তারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে: শেখ হাসিনা

আপডেট টাইম : ০৬:৩৮:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হ্ওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আর বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনটি মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের ৭৪ তম সাধারণ পরিষদের ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সমস্যা এখন আর বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বাংলাদেশের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু ক্রমবর্ধমান স্থান সংকট এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে এই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর ৪টা ২৮ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা প্রলম্বিত হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি। আমি অনুরোধ করব এই সমস্যার, অনিশ্চয়তার বিষয়টি যেন সকলে অনুধাবন করেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমস্যার বোঝা বহন করে চলেছি যা মিয়ানমারের তৈরি। এটি সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমার এবং তার নিজস্ব নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যকার একটি সমস্যা। তাদের নিজেদেরই এর সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় রাখাইনে নিজ গৃহে যাওয়ার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকবে।’

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, ‘আমি এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২ তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ সমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং রাখাইন প্রদেশে বেসামরিক তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় প্রতিষ্ঠাসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলাম। আজ আমি কিছু প্রস্তাব আবার পেশ করছি।’

এক. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন ও আত্মীকরণে মিয়ানমারকে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে।দুই. বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলুপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে।

তিন. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হতে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

চার. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ সমূহ বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘ মহাসচিব কর্তৃক বিশেষত জাতিসংঘ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গৃহীত সংস্কার উদ্যোগগুলোকে সাধুবাদ জানাই। আশা করছি নতুন প্রজন্মের জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম এবং নতুনরূপে সজ্জিত জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতিসংঘ স্বাগতিক রাষ্ট্রের জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে।

এর আগে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হওয়ায় শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি বাস্তবিক পক্ষেই দুঃখজনক যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হওয়ায় আজ এই মহান সভায় এই বিষয়টি আমাকে পুনরায় উত্থাপন করতে হচ্ছে। ১১ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের আশ্রয়ে রয়েছে। হত্যা-নির্যাতনের মুখে তারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।’