হাওর বার্তাঃ গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম দিনের মতো উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ও শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আরো দুই সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে তিন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করলেন। অপরদিকে ইউজিসি’র তদন্ত টিম তদন্ত কাজ শেষ করে ঢাকায় ফিরেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে উপাচার্য ড. নাসিরেউদ্দিনের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলন করে। এদিন সকাল থেকেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। শিক্ষার্থীদের শ্লোগানে শ্লোগানে কম্পিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
এদিন অনশন ও অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি বেলা ১১টায় প্রেসব্রিফিং এবং দুপুর ১২টায় চোখে কালো কাপড় বেঁধে উপাচার্যের অপসারণের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা ইউজিসি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে উপাচার্যের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি ফিরিস্তি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি তুলে দেন।
এদিকে গতকাল রাতে সহকারী প্রক্টর ড. মো. নাজমুল হক ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কমর্রত আছেন। আর গত শনিবার শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সাত দিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ড. মো. তরিকুল ইসলাম নামে আরেক সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন। তিনি ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
তিনি তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, শিক্ষার্থীদের প্রশাসনবিরোধী অহিংস আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অন্যায়ভাবে হামলা চলাকালে ২০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। যার মধ্যে আমার বিভাগের দুই জন শিক্ষার্থীও রয়েছে। তিনি আরো লিখেছেন, একজন সহকারী প্রক্টর হিসেবে আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও প্রশাসন কর্তৃক দায়িত্বে অবহেলার প্রতিবাদে আমি আমার প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করছি।
এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর প্রথম মো. হুমায়ন কবীর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দোষারাপ করে পদত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া বলেছেন, তদন্ত কমিটি আমাকে (জিনিয়া) ডেকেছিলেন। আমার কথা শুনেছেন ও লিখিত বক্তব্য নিয়েছেন। কিন্তু মিডিয়ার কাছে তদন্তের বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির ওপর তার আস্থা ও বিশ্বাস আছে।
ইউজিসি তদন্ত টিমের সদস্য দিল আফরোজা বেগম বলেছেন, আমরা মাঠ পর্যায়ের তদন্ত কাজ শেষ করেছি। উপাচার্যের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছিল সে ব্যাপারে আমরা ছাত্র-শিক্ষকসহ অসংখ্য মানুষের কথা শুনেছি ও তাদের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নিয়েছি।
এদিকে ইউজিসি গঠিত তদন্ত টিম তদন্ত কাজ শেষ করেছেন। তারা বৃহস্পতিবার বিকেলে কাজ শেষ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে ড. মো. আলমগীরের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত টিম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন এবং তদন্ত শুরু করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও বহিরাগতদের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা যাওয়ার প্রাক্কালে আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ইউজিসি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসে, সেজন্য আমরা সুপারিশ করবো। বিশ্ববিদ্যালয়টি যাতে আগের অবস্থায় ফিরে আসে এবং আর কোনো শিক্ষার্থী আহতের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারেও সুপারিশ করা হবে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরো জানিয়েছেন, তারা ঢাকায় ফিরে ইউজিসির চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলায় ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম খান মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তদন্ত শেষে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যেই আমরা রেজিস্টারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। রিপোর্টে আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ঘটনার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার সুপারিশ করেছি।
এ ব্যাপারে রেজিস্টার অধ্যাপক ড. নূরউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেয়েছি। প্রশাসনের অন্য সদস্যদের সাথে সভা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।