ঢাকা ১০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্মীয় বিষয়ে অবান্তর ও অর্থহীন প্রশ্ন করা বিষয়ে হাদিসের নির্দেশনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৬:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৫৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আবু হুরায়রা আবদুর রহমান বিন সাখরুদ দাউসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আমি তোমাদের যে বিষয়ে নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাকো এবং যে বিষয়ে আদেশ করেছি, তা তোমাদের সাধ্যমতো পালন করো। নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ধ্বংস হয়েছে তাদের বেশি বেশি প্রশ্ন করা ও তাদের নবীগণের সঙ্গে মতবিরোধ করার কারণে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৩৮৮)

আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ধর্মীয় বিষয়ে অবান্তর ও অর্থহীন প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কেননা এসব প্রশ্ন মানুষের মনে ধ্বংসাত্মক সংশয় সৃষ্টি করে, যা কখনো কখনো তাকে ইসলামের পথ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। এমনকি ঈমানে দৌলত থেকে বঞ্চিত হওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়। ধর্মীয় বিষয় শেখার জন্য বা তা ভালোভাবে বোঝার জন্য প্রশ্ন করা ইসলামে প্রশংসনীয়। কিন্তু অর্থহীন ও উপকার নেই এমন বিষয়ে প্রশ্ন করা নিন্দনীয়। বিশেষত ধর্মীয় পণ্ডিতদের বিব্রত করা, তর্ক দীর্ঘায়িত করা, সমাজে ইসলামের বিধি-বিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ধর্মীয় শ্রেণিকে খাটো করার জন্য প্রশ্ন করা অনুচিত ও নিন্দনীয়।

হাদিসবিশারদরা বলেন, আল্লাহ তাআলা কোরআনে যেসব বিষয় গোপন রেখেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও যে বিষয়ে উম্মতদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি, অথচ এসব প্রশ্ন তাঁর সময়ে হওয়া যৌক্তিক ছিল—এমন ব্যাপারে প্রশ্ন করাকেই ‘অধিক প্রশ্ন’ বলা হয়। যেমন—গোপন বিচার ও তাকদির বিষয়ে এবং কিয়ামত কায়েম হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা। এসব বিষয় আল্লাহ তাআলা হেকমত বা প্রজ্ঞার কারণে তাঁর সৃষ্টির কাছ থেকে গোপন রেখেছেন। এগুলো শুধু আল্লাহই জানেন। এসব বিষয় মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি ও বোধের পরিধি থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।

যেসব প্রশ্ন করা কাঙ্ক্ষিত ও প্রশংসনীয়
জ্ঞানানুসন্ধান ও জ্ঞানপিপাসা ইসলামে প্রশংসনীয়। ইসলাম জানার জন্য, আমল করার জন্য যেসব প্রশ্ন করা হয়, তাকে উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে এমন প্রশ্নের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞাসা করো যদি না জানো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৯)

নবী করিম (সা.) যেসব নারী-পুরুষের প্রশংসা করেছেন, যারা দ্বিনের যথাযথভাবে চলার জন্য শরিয়তের বিধানগুলো মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে বুঝতে চাইত। তিনি বলেন, ‘আনসারি মহিলারা কতই না প্রশংসনীয়! দ্বিনের গভীর জ্ঞান অর্জনে লজ্জা-শরম তাদের জন্য কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৭৬)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কিভাবে আপনি ইলম অর্জন করলেন? তিনি বলেন,

‘প্রশ্নকারী জবান, বিবেকসম্পন্ন অন্তর ও ক্লান্তিহীন শরীর দিয়ে।’ (কিতাবুল ইলম : ১/৪৬)

ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, ‘জ্ঞান হলো ভাণ্ডার, জিজ্ঞাসা হলো তার চাবি।’ (আরবাউনা লিন-নাবাবিয়্যা : ১/৮)

উভয় ধরনের হাদিসের সমন্বয়ে মুহাদ্দিসরা বলেন, প্রশ্ন করা ও না করা বিষয়ক হাদিসগুলো ব্যাখ্যা করলে বোঝা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) মূলত প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্যের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। যে প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্য দ্বিন ও শরিয়ত ভালোভাবে জেনে আমল করবে, তার প্রশ্ন করা প্রশংসনীয়। আর যার উদ্দেশ্য ইসলাম ও মুসলমানের সম্মান নষ্ট করা তার প্রশ্ন নিন্দনীয় এবং পরিণতিও ধ্বংস।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ধর্মীয় বিষয়ে অবান্তর ও অর্থহীন প্রশ্ন করা বিষয়ে হাদিসের নির্দেশনা

আপডেট টাইম : ১২:১৬:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আবু হুরায়রা আবদুর রহমান বিন সাখরুদ দাউসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আমি তোমাদের যে বিষয়ে নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাকো এবং যে বিষয়ে আদেশ করেছি, তা তোমাদের সাধ্যমতো পালন করো। নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ধ্বংস হয়েছে তাদের বেশি বেশি প্রশ্ন করা ও তাদের নবীগণের সঙ্গে মতবিরোধ করার কারণে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৩৮৮)

আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ধর্মীয় বিষয়ে অবান্তর ও অর্থহীন প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কেননা এসব প্রশ্ন মানুষের মনে ধ্বংসাত্মক সংশয় সৃষ্টি করে, যা কখনো কখনো তাকে ইসলামের পথ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। এমনকি ঈমানে দৌলত থেকে বঞ্চিত হওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়। ধর্মীয় বিষয় শেখার জন্য বা তা ভালোভাবে বোঝার জন্য প্রশ্ন করা ইসলামে প্রশংসনীয়। কিন্তু অর্থহীন ও উপকার নেই এমন বিষয়ে প্রশ্ন করা নিন্দনীয়। বিশেষত ধর্মীয় পণ্ডিতদের বিব্রত করা, তর্ক দীর্ঘায়িত করা, সমাজে ইসলামের বিধি-বিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ধর্মীয় শ্রেণিকে খাটো করার জন্য প্রশ্ন করা অনুচিত ও নিন্দনীয়।

হাদিসবিশারদরা বলেন, আল্লাহ তাআলা কোরআনে যেসব বিষয় গোপন রেখেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও যে বিষয়ে উম্মতদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি, অথচ এসব প্রশ্ন তাঁর সময়ে হওয়া যৌক্তিক ছিল—এমন ব্যাপারে প্রশ্ন করাকেই ‘অধিক প্রশ্ন’ বলা হয়। যেমন—গোপন বিচার ও তাকদির বিষয়ে এবং কিয়ামত কায়েম হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা। এসব বিষয় আল্লাহ তাআলা হেকমত বা প্রজ্ঞার কারণে তাঁর সৃষ্টির কাছ থেকে গোপন রেখেছেন। এগুলো শুধু আল্লাহই জানেন। এসব বিষয় মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি ও বোধের পরিধি থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।

যেসব প্রশ্ন করা কাঙ্ক্ষিত ও প্রশংসনীয়
জ্ঞানানুসন্ধান ও জ্ঞানপিপাসা ইসলামে প্রশংসনীয়। ইসলাম জানার জন্য, আমল করার জন্য যেসব প্রশ্ন করা হয়, তাকে উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে এমন প্রশ্নের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞাসা করো যদি না জানো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৯)

নবী করিম (সা.) যেসব নারী-পুরুষের প্রশংসা করেছেন, যারা দ্বিনের যথাযথভাবে চলার জন্য শরিয়তের বিধানগুলো মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে বুঝতে চাইত। তিনি বলেন, ‘আনসারি মহিলারা কতই না প্রশংসনীয়! দ্বিনের গভীর জ্ঞান অর্জনে লজ্জা-শরম তাদের জন্য কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৭৬)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কিভাবে আপনি ইলম অর্জন করলেন? তিনি বলেন,

‘প্রশ্নকারী জবান, বিবেকসম্পন্ন অন্তর ও ক্লান্তিহীন শরীর দিয়ে।’ (কিতাবুল ইলম : ১/৪৬)

ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, ‘জ্ঞান হলো ভাণ্ডার, জিজ্ঞাসা হলো তার চাবি।’ (আরবাউনা লিন-নাবাবিয়্যা : ১/৮)

উভয় ধরনের হাদিসের সমন্বয়ে মুহাদ্দিসরা বলেন, প্রশ্ন করা ও না করা বিষয়ক হাদিসগুলো ব্যাখ্যা করলে বোঝা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) মূলত প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্যের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। যে প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্য দ্বিন ও শরিয়ত ভালোভাবে জেনে আমল করবে, তার প্রশ্ন করা প্রশংসনীয়। আর যার উদ্দেশ্য ইসলাম ও মুসলমানের সম্মান নষ্ট করা তার প্রশ্ন নিন্দনীয় এবং পরিণতিও ধ্বংস।