হাওর বার্তা ডেস্কঃ মগড়া ও ধলাই, এই দুটো নদীর কূল ঘেষে গড়ে উঠেছে নেত্রকোণা পৌর এলাকা। প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভার উত্তরের ১নং ওয়ার্ড সাতপাই ও ৩নং ওয়ার্ড মঈনপুর এলাকার মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধলাই নদী। সাতপাই হয়ে জেলা শহরের সাথে মঈনপুর, মাহমুদপুরসহ অন্তত ছয়টি গ্রামের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই নদীর উপরে থাকা একমাত্র বাঁশের সাঁকো। শুকনো সময়ে যেমন তেমন বর্ষার সময় এই সাঁকো ব্যবহার করা মানুষদের কপালে নেমে আসে সীমাহীন কষ্ট। অনেক পুরাতন এই যোগাযোগ ব্যবস্থা। সময়ের প্রয়োজনে পৌর এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড চললেও এই সাঁকো ব্যবহার করা মানুষের ভাগ্যাকাশের আর পরিবর্তন হয়না।
১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীণতম ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্বেও পৌর নাগরিকের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছয়টি গ্রামের অন্তত বিশ হাজার মানুষ। সরকারি/বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, রেল স্টেশন, বাজার সবকিছু রয়েছে ধলাই নদীর দক্ষিন পাশের্ অর্থাৎ মূল পৌরসভা বা জেলা শহরে। ফলে প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে এই ছয় গ্রামের মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ এই বাঁশের সাঁকো পাড় হয়ে শহরে যেতে হয়। তাছাড়া কয়েকশত ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পাড় হয়ে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসা করে। প্রতি বর্ষাতেই পাহাড়ি ঢলের তীব্র ¯স্রোতে সাঁকোটি ভেঙে গেলে মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে ছয় গ্রামের এই বিশ হাজার মানুষ। এবারের চিত্র অন্য যেকোন বারের চেয়েও বেশি ভয়ংকর।
পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষনে সাঁকোটির বর্তমান অবস্থান হাঁটু পানির নিচে। নদীর স্রোতে সরে গেছে সাঁকোতে বিছিয়ে দেয়া বাঁশের টুকরো। যার দরুন অনেক বড় বড় ফাঁকা হয়ে গেছে অনেক জায়গাতেই। আর তাই নদী পাড়াপাড়ের সময় ফাঁকা জায়গা দিয়ে পা ঢুকে পরে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেকেই। দিনের চিত্র যেমন তেমন, রাতের চিত্রটাতো অকল্পনীয়। সাঁকো ভেঙে অনেকে আহত হওয়ার নজিরও রয়েছে যথেষ্ট। এদিকে একটি ব্রীজের দাবীতে দীর্ঘদিন যাবৎ পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন নিবেদন করেও ফল পাচ্ছে না অবহেলিত এই ছয় গ্রামের বাসিন্দারা, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।
পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্বেও নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করেও পৌর নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উল্লেখিত ছয় গ্রামের সাধারণ মানুষ। এমতাবস্থায় অবিলম্বে ধলাই নদীর উপর বাঁশের সাঁকোর জায়গায় একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। এব্যাপারে মঈনপুর এলাকার কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মঈনপুর নেত্রকোণা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩নং ওয়ার্ড। কিন্তু প্রথম শ্রেণির পৌরসভার নাগরিক হয়েও আমরা আজ নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হচ্ছি। বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে প্রার্থীগণ আমাদের কাছে ভোট চাইতে এসে এই ব্রীজটি করে দেয়াই হবে তাদের প্রথম কাজ এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও আমরা এর বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাইনি।
দেখেছি মাটির নমুনা সংগ্রহ করতে। আর আমাদেরকে বারবারই শোনানো হয়েছে, এইতো এবারই হয়ে যাবে। কিন্তু এইবার শব্দটি যেন আর শেষই হচ্ছে না। আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এই সাঁকোর জন্যে। কোন অসুস্থ্য মানুষকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সবই নদীর ঐপাড়ে। তাই দৈনন্দিন সমস্ত কার্যাদী সম্পন্ন করতে এইসব এলাকার লোকদের নদীর ঐপাড়েই পাড়ি জমাতে হয়। আর তাই এই সাঁকোর কারণে দুর্ভোগ আমাদের নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিবছর আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাঁকোটি সংস্কার করতে হয়। করি নিজেদের প্রয়োজনেই। কিন্তু পৌরকর্তৃপক্ষ যদি একটু সুদৃষ্টি রাখে তাহলে আমাদের ততটা ঝামেলা পোহাতে হয় না।
তাছাড়া একটা প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় এরকম একটি বাশের সাঁকো থাকবে বিষয়টা ভাবতেই যেন কেমন লাগে। এই সাঁকোর স্থলে একটি পাকা সেতু নির্মান আজ সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ব্রীজটি নির্মান করে পৌরবাসীর দুঃখ লাঘবে হবেন পৌর মেয়র এমনটাই দাবী আমাদের। এব্যাপারে নেত্রকোণা পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম খান জানান, গতবছর এই ব্রীজটিসহ নেত্রকোণা পৌর এলাকায় মোট চারটি ব্রিজের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখনো অনুমোদন পাইনি তাই কাজটি ব্রীজটি নির্মাণ করতে পারছি না। অনুমোদন পেলেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করেই কাজ শুরু করা হবে।