হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত জোট রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও এখন দুই জোটকে পাশ কাটিয়ে ‘একলা চলো’ নীতিতে চলছে বিএনপি। এতে দলটির নেতাকর্মীরা খুশি হলেও শরিক দলের নেতাদের মুখ ভার।
সম্প্রতি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ৩টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, বন্যাদুর্গত কয়েকটি জেলায় ত্রাণ বিতরণ করে বিএনপি। এ ছাড়াও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে দলটির। কিন্তু এসব কর্মসূচিতে পুরনো মিত্র ২০-দলীয় জোট কিংবা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে যে জোট গঠন করা হয় কোনো জোটের নেতাদেরই ঠাঁই দিচ্ছে না বিএনপি।
বিএনপির এই ‘একলা চলো’ নীতি প্রসঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘প্রত্যেক দলই তাদের নিজস্ব কর্মসূচি পালন করতে পারে। কিন্তু আমি চাই ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করা হোক। জোটের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি ঘোষণা করা হোক।’
এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিএনপি এখন থেকে নিজেরা কর্মসূচি পালন করবে-এ কথা আমাদের জানায়নি। দলটির মনোভাব দেখে সে রকমই মনে হচ্ছে। কারণ ঐক্যফ্রন্ট অনেক দিন থেকে প্রায় অকার্যকর হয়ে আছে।’
বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতার মতে, ‘নানামুখী জটিলতা এড়াতে দুই জোটকে পাশ কাটিয়ে বিএনপি যে একক কর্মসূচি পালন করছে তাতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাই সন্তুষ্ট। দুই জোট নিয়ে শরিক দলগুলো এবং দলের মধ্যে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তাতে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’
উদাহরণস্বরূপ ওই নেতা উল্লেখ করেন, ‘এই যে, আমরা আমাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করলাম। এটা যদি জোট কর্মসূচি হতো তাহলে ২০-দলীয় জোটের ২২ চেয়ারম্যান এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরও ৫-৬টা দলের চেয়ারম্যান, সিব মিলিয়ে প্রায় ৩০ জন। বর্তমান সময়ে সরকার সীমিত পরিসরে আমাদের কর্মসূচি পালনের যে সুযোগ দেয় তাতে জনসভা মঞ্চ খুব বড় করা যায় না। সেখানে শরিক দলেরই যদি ৩০ জন থাকে তাহলে প্রটোকল অনুযায়ী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরই মঞ্চে চেয়ার সংকট তৈরি হয়। তারপর যে এলাকায় সমাবেশ হয় ওই এলাকার স্থানীয় শীর্ষনেতা, ওই এলাকার যারা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রয়েছেন তাদের কী পরিস্থিতি হয়?’
তিনি আরও বলেন, ‘শরিকদের ৩০ নেতাকে মঞ্চে নিয়ে আমরা সমাবেশ করলে একদিকে মঞ্চে যেমন সংকট তৈরি হয় তেমনি সমাবেশ সফল করার জন্য যে কর্মীদের উপস্থিতি সেখানেও ঘাটতি তৈরি হয়। কারণ শরিক নেতাদের দুয়েকজনের রাজনীতিতে পরিচিতি থাকলেও মাঠ পর্যায়ে কর্মী, সমর্থক নেই বললেই চলে। সে কারণে কোনো কর্মসূচিতে তারা যেমন কর্মী দিতে পারেন না, তেমনি তাদের উপস্থিতিতে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মঞ্চে জায়গা পান না। ওইসব নেতাদের ভিড়ে বক্তব্যও দিতে পারেন না। দলের কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। তারা মনে করে তাদের রাজনৈতিক অভিভাকদের দল যখন মূল্যায়ন করতে পারছে না সেখানে আমরা যাব কেন?’
‘শরিকদের নিয়ে সমাবেশ করলে কর্মসূচিতে লোকসংখ্যা বাড়ে না। কিন্তু লোকজন জোগাড় বা আর্থিক যোগান-এগুলো বিএনপিকেই করতে হয়। জোট নির্বাচনভিত্তিক গঠন করা হয়ে থাকে, এই মুহূর্তে যেহেতু নির্বাচন নেই, তাই তাদের সঙ্গে রেখে নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। যখন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে তখন যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়িত হবেন’-যোগ করেন তিনি।
জোটগত আর একক কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মীদের মনোভাব প্রসঙ্গে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল খান বলেন, ‘জোট হচ্ছে নির্বাচন এবং আন্দোলনমুখী। যখন জোটগত কর্মসূচি পালন করা হয় তখন নেতাকর্মীরা সেভাবেই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। আর দলের একক কর্মসূচি হলে দলীয় অস্তিত্ব জানান দেয়ার বিষয়টি উঠে আসে। সঙ্গত কারণে জোটের দলের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ততা বেশি থাকে।’
দুই জোটকে পাশ কাটিয়ে দলের একক কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমরা দলীয়ভাবে কর্মসূচি পালন করছি, এ কথা ঠিক। কিন্তু এ কারণে বলা ঠিক হবে না যে, শরিকদের বাদ দিয়েই করছি। হয়তো আগামীতে অন্য কোনো কর্মসূচিতে তাদের সম্পৃক্ত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে পরাজিত করার জন্য আমরা ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। কিছুসংখ্যক মহল অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলছে যে, বিএনপি যে মিটিং-টিটিং করছে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য করছে।’
‘আমরা পরিষ্কার ঘোষণা দিতে চাই, ২০ দল ঠিক আছে, ঐক্যফ্রন্টও ঠিক আছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকার পরাজিত করব, নেত্রীকে মুক্ত করব।’