পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার প্রায় ৩ হাজার পান চাষী পান নিয়ে বিপাকে, পাচ্ছেন না ন্যায্য মূল্য। বৈদেশিক অর্থকরী ফসল চাষ করে কৃষক প্রতিনিয়ত দিশেহারা। গলাচিপার শ্রেষ্ঠ পান চাষী চিকনিকান্দি ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল লতিফ তালুকদার বলেন, আমার দীর্ঘ ৩১ বছরের পান চাষের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি যা দেখেছি, পান আমাদের দেশের এক অন্যতম অর্থকরী ফসল কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের দেশে বিদেশি পান আমদানি করে আনায় আমরা আমাদের পানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমি বিভিন্ন এনজিও’র কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি। তারপর ১৮৬ শতাংশ জায়গা বিভিন্ন মালিকদের কাছ থেকে বাৎসরিক লিজ নিয়ে ৪০ কুড়ি পানের বরজ গড়ে তুলি।
তিনি বলেন, পানের বরজে ১২ থেকে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করে থাকে, প্রতি শ্রমিকের দৈনিক হাজিরা ৪০০ টাকা। শুধু তাই নয়, পান চাষের জন্য ঔষধ, সার, খৈল, পাটের কাঠি ও ছনের ঝাটি নিয়ে প্রতি মাসে ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। বর্তমানে আমার প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়, আমি প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা লোকসান গুনছি। এভাবে লোকসান দিতে থাকলে পান চাষ বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে এবং বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত পান আমদানি করতে হবে।
কৃষক আব্দুল লতিফ আরও বলেন, বিভিন্ন পান চাষীরা পান চাষের উৎস হারিয়ে ফেলেছি যার ফলে দেশের পান চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্যই দেশকে দারিদ্রমুক্ত করা। তাই সরকারের কাছে পান চাষীদের দাবি অনতি বিলম্বে বিদেশে থেকে পান আমদানি বন্ধ করে, সুদবিহীন ঋণ দিয়ে দেশের পান চাষীদের সহায়তা করা।
এ ব্যাপারে পান চাষী নিত্যরঞ্জন নাথ ও শাহজালাল তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, গলাচিপা উপজেলার সফল পান চাষী আব্দুল লতিফ তালুকদারের উৎসাহ নিয়ে ২০ বছর যাবৎ পান চাষ করে আসছি কিন্তু বর্তমানে পানের বাজার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। তারা আরও বলেন, আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পান রপ্তানি করতাম,বর্তমানে বিদেশ থেকে পান আমদানি হওয়ায় এখন আর ওইসব অঞ্চলে পানের চাহিদা নেই বলেই চলে।
স্বপন হাওলাদার, আব্দুল আজিজ খান, সমির চন্দ্র মালাকার, মো. নূরুজ্জামান, শাহজালালসহ আরও অনেক পান চাষীরা উপরোক্ত সমস্যায় আছেন বলে জানান ।গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মন্নান বলেন, পান চাষীরা যে ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না এ ব্যাপারে আমার কাছে কোন অভিযোগ নেই। যদি তারা অভিযোগ করেন তাহলে উপর মহলে বিষয়টি জানাব। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ -২০১৫ অর্থ বছরে ৩৫০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে যা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি ।