পৃথিবীজুড়ে ক্যাসিয়ার অনেক প্রজাতি ছড়িয়ে আছে। তবে বর্তমানে ক্যাসিয়ার কিছু কিছু প্রজাতির পরিবর্তিত নাম সেন্না। আমাদের দেশে অনেক জাতের ক্যাসিয়া দেখা যায়। তার কোনো কোনোটি একেবারেই বুনো।
এর মধ্যে একটি জাত ঔষধি গুণের জন্য বিখ্যাত। বৈজ্ঞানিক নাম সেন্না অ্যালাটা, স্থানীয় নাম দাদমর্দন। তবে আমাদের দেশে ক্যাসিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ক্যাসিয়া ফিস্টুলা, যার খ্যাতি সোনালু, সোনাইল বা বানর লাঠি নামে।মালয়েশিয়ার পথতরু হিসেবে পরিচিত ক্যাসিয়া গ্লাওকা আমাদের দেশে এসেছে প্রায় দুই দশক আগে।
পৌষ্পিক ঐশ্বর্যের কারণে ক্যাসিয়ার আকর্ষণ উপেক্ষা করা কঠিন। এখানকার রাজসিক ক্যাসিয়াগুলো সাধারণত গ্রীষ্মেই ফোটে। লালসোনাইল বা ক্যাসিয়া জাভানিকাও মে মাসে ফোটে। তবে আলোচ্য ক্যাসিয়াটি তুলনামূলকভাবে দুর্লভ।
তা ছাড়া একসময় গাছটির সঠিক পরিচয়ও ছিল অজানা। প্রচলিত কোনো বাংলা নামও নেই।ক্যাসিয়া ব্যাকেরিয়ানা (Cassia bakeriana) জাতের এই ফুল প্রথম দেখি ঢাকায় হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে। প্রথম দেখায় অবশ্য ক্যাসিয়া রেনিজেরা মনে হয়েছিল। হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ ছাড়া গুলশান শ্যুটিং ক্লাব এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাতে গোনা কয়েকটি গাছ দেখা যায়।
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নে আমিনুল ইসলামের ‘গাছবাড়ি’তেও একটি গাছ আছে। রমনা পার্কে দুইবার এই গাছের চারা লাগিয়েছিলাম। পার্ক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় একটিও বাঁচেনি। দুর্লভ এই গাছের চারা-কলম করে বিভিন্ন উদ্যানে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। প্রকৃতিতে যখন অন্যান্য রূপসী ক্যাসিয়ার পুষ্প প্রাচুর্য থাকে না তখন ক্যাসিয়া ব্যাকেরিয়ানা ফোটে। এই ফুলের ইংরেজি নাম Pink Shower Tree ev Coral Shower Tree ।ক্যাসিয়া ব্যাকেরিয়ানা মাঝারি আকৃতির পাতাঝরা গাছ, ২০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা পিনেট, ৫০ সে. মি. লম্বা। বসন্তের শেষভাগে পত্রহীন ডালপালায় পুষ্প-প্লাবনে ভরে ওঠে গাছ। ফুল মৃদু সুগন্ধি, গড়ন সোনালু বা লালসোনাইলের মতোই। বসন্তের শুরুতে ৪ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা ঝুলন্ত রেসেমে (প্রতি রেসেমে ২০ থেকে ৪০টি ফুল) ফুলগুলো ফোটে। পাপড়ির রং প্রথমে লালচে গোলাপি থাকে, পরে ফ্যাকাসে সাদা হয়ে ওঠে। পাতাহীন ডালপালাজুড়ে ফুলের উচ্ছ্বাস অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ফুলের পর বড় শিমের মতো শুঁটিগুলো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। প্রতিটি শুঁটিতে ৩০ থেকে ৪০টির মতো বীজ থাকে। মেক্সিকো, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর এবং ব্রাজিলে এই গাছ প্রচুর দেখা যায়। গাছটি পথতরু হিসেবেও আদর্শ। পরিবার Caesalpinaceae।
ক্যাসিয়া ব্যাকেরিয়ানা থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের বনাঞ্চলে স্থানীয় বৃক্ষ হিসেবে জন্মে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে শোভাবর্ধক বৃক্ষ হিসেবে এই গাছ রোপণ করা হয়। শীতকালে সব পাতা ঝরে পড়ে এবং শীতের শেষে প্রথমেই আসে ফুল, পরে পাতা ও ফল আসে। গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তৈরিতে এই গাছের পাতা ও শুঁটি ব্যবহার করা হয়।