হাওর বার্তা ডেস্কঃ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলী বলেছেন, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের সংশোধনের মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার এখনই সময়। অভ্যাসগত অপরাধী না হলে তাকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া উচিত। শনিবার সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটি ও জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (জিআইজেড) আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০’ আইন বাস্তবায়নে করণীয় বিষয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইমান আলী বলেন, সব অপরাধীর কারাদণ্ডের পরিবর্তে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিকল্প পন্থাও অবলম্বন করা প্রয়োজন। তা করতে হলে দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিনেন্স, ১৯৬০ এর মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, তিন বছর কিংবা তার কম সাজা হলে নানা রকম শর্ত দিয়ে প্রবেশন অফিসারদের মাধ্যমে এসব আসামির জামিন দেয়া যেতে পারে। তাতে কারাগারে অতিরিক্ত চাপ কমবে। যাদের জেলের ভাত খাওয়ার শখ নেই, তারা এসব শর্ত মেনে সে সুযোগটি নেবেন। এক্ষেত্রে বিচারকদের জন্য উপযুক্ত হাতিয়ার হবে দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিনেন্স, ১৯৬০ আইনটি।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই এ আইন সম্পর্কে জানতেন না বা অবগত ছিলেন না। যেখানে সাজার পরিমাণ কম, সেখানে এ আইন প্রয়োগ করা সম্ভব। তবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ডের বেলায় এটি প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। আইনটি ১৯৬০ সালের, কিন্তু এখনো এটি তেমন প্রয়োগ হয়নি। এটি প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি। বিচারকদের পাশপাশি এ আইনের বিষয়ে আইনজীবীদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
কারাবন্দি কমিয়ে কারাগারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় এ আইনকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, উল্লেখ করে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম বলেন, প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ এর বিধান অনুসারে যদি প্রবেশনের আওতায় কারাবন্দিদের মুক্তি দেয়া হতো তাহলে ২০১৬ সালে শুধু বন্দিদের খাওয়া খরচ বাবদ দৈনিক ৫৪ টাকা হিসেবে যে ২৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে তা কারাগারের উন্নয়নে ব্যয় করা যেত।
সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচলক আব্দুল্লাহ আল মামুন, রুল অব ল প্রোগ্রামের প্রধান প্রমিতা সেনগুপ্ত প্রমুখ।