হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি রয়েছেন বরগুনা জেলা কারাগারে। গেল ১৯ জুলাই শুক্রবার রিফাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর থেকে বরগুনা জেলা কারাগারে রয়েছেন তিনি। তবে মিন্নি সংবাদিকদের বলেছেন, পুলিশ ‘জোরপূর্বক, শেখানো মতে’ তাঁর জবানবন্দি নিয়েছে।
পুলিশ হেফাজত থেকে কারাগারে যাওয়ার পর মিন্নির সঙ্গে দেখা করেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। তারা উভয়ই দাবি করেন, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় পুলিশের নির্যাতনে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মিন্নি। তাই তার চিকিৎসা দরকার। এছাড়াও পুলিশের শিখিয়ে দেয়া স্বীকারোক্তি আদালতে বলেছেন মিন্নি। তাই এ স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করতে চান তিনি।
মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম জানান, মিন্নির সঙ্গে দেখা করার সময় আমি জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনপত্র নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করেনি। তারা বলেছে, এ ধরনের আবেদনপত্র বাইরে থেকে দেয়ার কোনও উপায় নেই। এই আবেদন মিন্নিকে নিজ হাতে লিখতে হবে। এজন্য তাকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজ ও কলম চাইতে হবে। আমি বলে এসেছি চাইতে। আমি মিন্নিকে সব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি কীভাবে আবেদন করতে হবে।’
এ বিষয়ে জেল সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মিন্নি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজ-কলম চাননি। তবে তিনি যদি আবেদন করেন তবে কাগজ ও কলম সরবরাহ করা হবে। জবানবন্দি প্রত্যাহার ছাড়াও যে কোনও আবেদন আসামি যদি করতে চান, জেল সুপার মাধ্যমেই করতে হবে। এটাই কারা বিধি। জেল কর্তৃপক্ষ সেটা কোর্টে পাঠাবে। আইনজীবীর কোনও ভূমিকা নেই। আর কোর্টে পাঠানোর আগে আমি চেক করবো আবেদন ঠিক আছে কিনা।’
ঢাকা জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যদি আসামি কারাগারে থাকেন, সেক্ষেত্রে জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য তাকেই আবেদন করতে হবে। কারাবিধি অনুযায়ী এটাই নিয়ম।
মিন্নির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জেলা কারাগারের সুপার মো. আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিন্নি আদৌ অসুস্থ না। তার আইনজীবী এসেছিলেন। আমি মিন্নিকে তার আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিয়েছি। আমার সামনেই মিন্নির আইনজীবী তার কাছে বারবার জানতে চেয়েছেন, তাকে মারধর করা হয়েছে কিনা এবং সে অসুস্থ কিনা? এর উত্তরে মিন্নি বলেছেন, আমি ঠিক আছি। আমার শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে একটু ব্যাথা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সময় মিন্নি আমার সামনে ছিলেন। সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের আরও কয়েকজন ছিল। আমার সামনে মিন্নি তার আইনজীবীর সঙ্গে এই কথা বলেছেন। মিন্নি তেমন অসুস্থ না। প্রতিদিন সকাল-বিকেল নার্স মিন্নির স্বাস্থ্যের খোঁজ নিচ্ছে। তাছাড়া আমিও আছি। খোঁজ রাখছি। সে অসুস্থ না।’
মিন্নিকে নার্সরা কী চিকিৎসা দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মিন্নি আমাদের এখানে আসার পর বলেছেন তার মাথা ব্যথা করছে। এরপর নার্সরা দুটি ট্যাবলেট মিন্নিকে দিয়েছে। পরদিন আমি মিন্নির কাছে অসুস্থতার খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। তখন মিন্নি বলেছেন, মাথা ব্যথা নেই। এখন ভালো লাগছে। মিন্নি সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছে।
গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে আহত করা হয়। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আয়শা রিফাতকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেয়ার পর রিফাত মারা যান।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করনে। মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান সাক্ষী করা হয়।
এ ঘটনার ১৯ দিন পর ১৩ জুলাই রিফাতের বাবা আবদুল হালিম সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার সঙ্গে আয়শা সিদ্দিকা জড়িত বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। পরদিন ১৪ জুলাই আয়শার গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়, যেখানে সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।
এই ঘটনার দুই দিনের মাথায় ১৬ জুলাই আয়শাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। দুই দিন রিমান্ডে থাকার পর তাঁকে আদালতে পাঠিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ানো হয়। পরে আয়শার বাবা মেয়ের সঙ্গে কারাগারে দেখা করে এসে বলেন, জোরজবরদস্তি করে পুলিশ আয়শাকে যা বলতে বলেছে, তা–ই তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন।
রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত আয়শাসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তবে মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে এখনো ৪ জন গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।