ঢাকা ০৪:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌনতাসংক্রান্ত পরিসংখ্যানের ভ্রান্তি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩৬:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মে ২০১৫
  • ৩৫২ বার
পুরুষেরা প্রতি সাত সেকেন্ডে একবার সেক্স বা যৌনতার কথা ভাবে। ৮৪ শতাংশ নারীই আবেগের বিবেচনায় সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অসন্তুষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহিতদের চেয়ে একা থাকা নারী-পুরুষেরাই বেশি সেক্স করে থাকে। ৩৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের ৬৯ শতাংশই বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে আবদ্ধ। ২০ বছর আগের চেয়ে এখনকার মানুষদের সেক্সের অভিজ্ঞতা ৪০ শতাংশ কম। পশ্চিমা সমাজ নিয়ে প্রচলিত পরিসংখ্যান নির্ভর এসব তথ্য সত্য নাকি মিথ?
এমন সব উত্তেজনা ছড়ানো পরিসংখ্যানের সমস্যা নিয়ে লিখেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও অর্থনীতিবিদ টিম হারফোর্ড। নিজেকে ‘গুপ্তচর অর্থনীতিবিদ’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া এই তরুণ দীর্ঘদিন ধরে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে ‘দ্য আন্ডারকভার ইকোনমিস্ট’ নামের কলাম লিখে চলেছেন। বেস্ট অব দ্য ওয়েব বিভাগে তাঁর এই লেখার কথা জানিয়েছে বিবিসি। এখানে লেখাটির সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হলো।
পরিসংখ্যানবিদ ডেভিড স্পিজেলহলটার ‘সেক্স বাই নাম্বারস’ নামে একটা নতুন বই লিখেছেন। আমাদের সম্মিলিত যৌনজীবনে পরিসংখ্যানের চিরুনি চালিয়েছে এ বই। তাঁর বইয়ের বড় অংশ জুড়েই রয়েছে যৌন আচরণের ইতিবৃত্ত- কে কার সঙ্গে কী করছে এবং কতবার কীভাবে করছে ইত্যাদি। কিন্তু এই বিবরণের পাশাপাশি তিনি যেভাবেই হোক আমাদের পরিসংখ্যান বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ দিয়েছেন।
প্রথম পাঠটি হলো-‘প্রথমেই কোন ভাবনাটা আমাদের মাথায় আসে, তা না বোঝা পর্যন্ত পরিসংখ্যান আমাদের কিছুই বলে না।’
মানুষজন কত বছর বয়সে প্রথম ‘সেক্স করেছে’ কিংবা কত বছর বয়সে ‘সেক্স করা বন্ধ করেছে’ কিংবা মানুষজনের জীবনে গড়ে কতজন ‘যৌন সঙ্গী’ থাকে? ‘সেক্স করা’ বলতে কী বোঝায় সে বিষয়ে একটা সর্বসম্মত সংজ্ঞায় পৌঁছাতে না পারা পর্যন্ত আসলে এসব প্রশ্নের কোনোই মানে হয় না।
এটা ধরে নেওয়া কোনো ভাবেই ঠিক হবে না যে, আমরা যখন ‘সেক্স’ নিয়ে কথা বলি তখন সবাই ঠিক একই বিষয়কে বুঝাই। বিল ক্লিনটনের কথাই ধরুন, তাঁর সেই বহুল সমালোচিত উক্তির কথা মনে করুন-‘ওই নারী, মিস লিওনিস্কির সঙ্গে আমি কোনো যৌন সম্পর্ক করিনি।’ পরে যখন এটা পরিষ্কার হয় যে, তিনি লিওনিস্কির কাছ থেকে মুখকাম নিয়েছিলেন তখন তিনি বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেও আগের অবস্থান ধরে রাখার পক্ষে বলেন, ‘আমার জবাব আইনগতভাবে সঠিক ছিল।’
ক্লিনটনের সতর্কভাবে বেছে নেওয়া শব্দ বেশির ভাগ মানুষের মুখের ভাষার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯১ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, কলেজছাত্রদের ৪০ শতাংশই মুখকামকে সেক্স করা বা যৌন সঙ্গম বলে ভাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটও প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে মিথ্যা বলে শপথ ভঙ্গের অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্টতই প্রায় একই রকম উপসংহারে পৌঁছেছিল।
ক্লিনটন অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানে পরিচালিত যৌন আচরণ বিষয়ক গবেষণাগুলোতে এই অস্পষ্টতা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। যুক্তরাজ্যের সমাদৃত ‘যৌন আচরণ ও জীবনযাপন বিষয়ক জাতীয় জরিপ’-ন্যাটসাল প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে বিল ক্লিনটন মিস লিওনিস্কির সঙ্গে যৌন সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
ডেভিড স্পিজেলহলটারের দেওয়া দ্বিতীয় পাঠটি হলো-পরিসংখ্যানের কাজটি সতর্কভাবে করা হয়েছে নাকি হেসে-খেলে সেরে ফেলা হয়েছে সে বিষয়ে মনোযোগ বাড়ানো।
‘ট্রোজান ইউএস সেক্স সেনসাস’-এর পরিসংখ্যান যথাযথ নয় বলে বাতিল করে দেন স্পিগেলহলটার। ট্রোজানের জরিপে বলা হয়েছিল লস অ্যাঞ্জেলেসের মানুষেরাই যৌন আচরণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়, এখানকার মানুষেরা গড়ে প্রতি বছর ১৩৫টি যৌনক্রিয়ায় অংশ নেন। তিনি বলেন, এমন জরিপে কনডম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির বিশাল বিজ্ঞাপন হলেও জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরাই যুক্তরাষ্ট্রের আপামর জনসাধারণকে প্রতিনিধিত্ব করেন না।
যৌনতা বিষয়ক অনেক বিখ্যাত গবেষকের জরিপও অনেক সময় প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা বাছাই না করার সমস্যা দুষ্ট হতে পারে। আলফ্রেড কিনসলে দেখিয়েছেন যে, পুরুষদের ৩৭ শতাংশই সমকামিতার মধ্যে শীর্ষ সুখের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। শিয়ার হাইট দেখিয়েছেন, ৯৫ শতাংশ নারীই পুরুষ সঙ্গীদের কাছ থেকে ‘আবেগি বা মনস্তাত্ত্বিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।’ এই সব গবেষণাগুলো রাজনৈতিকভাবে যুগান্তকারী মনে হলেও এই সংখ্যাগুলো সঠিক বলে আস্থা রাখাটা কঠিন হতে পারে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

যৌনতাসংক্রান্ত পরিসংখ্যানের ভ্রান্তি

আপডেট টাইম : ০৩:৩৬:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মে ২০১৫
পুরুষেরা প্রতি সাত সেকেন্ডে একবার সেক্স বা যৌনতার কথা ভাবে। ৮৪ শতাংশ নারীই আবেগের বিবেচনায় সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অসন্তুষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহিতদের চেয়ে একা থাকা নারী-পুরুষেরাই বেশি সেক্স করে থাকে। ৩৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়সীদের ৬৯ শতাংশই বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে আবদ্ধ। ২০ বছর আগের চেয়ে এখনকার মানুষদের সেক্সের অভিজ্ঞতা ৪০ শতাংশ কম। পশ্চিমা সমাজ নিয়ে প্রচলিত পরিসংখ্যান নির্ভর এসব তথ্য সত্য নাকি মিথ?
এমন সব উত্তেজনা ছড়ানো পরিসংখ্যানের সমস্যা নিয়ে লিখেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও অর্থনীতিবিদ টিম হারফোর্ড। নিজেকে ‘গুপ্তচর অর্থনীতিবিদ’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া এই তরুণ দীর্ঘদিন ধরে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে ‘দ্য আন্ডারকভার ইকোনমিস্ট’ নামের কলাম লিখে চলেছেন। বেস্ট অব দ্য ওয়েব বিভাগে তাঁর এই লেখার কথা জানিয়েছে বিবিসি। এখানে লেখাটির সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হলো।
পরিসংখ্যানবিদ ডেভিড স্পিজেলহলটার ‘সেক্স বাই নাম্বারস’ নামে একটা নতুন বই লিখেছেন। আমাদের সম্মিলিত যৌনজীবনে পরিসংখ্যানের চিরুনি চালিয়েছে এ বই। তাঁর বইয়ের বড় অংশ জুড়েই রয়েছে যৌন আচরণের ইতিবৃত্ত- কে কার সঙ্গে কী করছে এবং কতবার কীভাবে করছে ইত্যাদি। কিন্তু এই বিবরণের পাশাপাশি তিনি যেভাবেই হোক আমাদের পরিসংখ্যান বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ দিয়েছেন।
প্রথম পাঠটি হলো-‘প্রথমেই কোন ভাবনাটা আমাদের মাথায় আসে, তা না বোঝা পর্যন্ত পরিসংখ্যান আমাদের কিছুই বলে না।’
মানুষজন কত বছর বয়সে প্রথম ‘সেক্স করেছে’ কিংবা কত বছর বয়সে ‘সেক্স করা বন্ধ করেছে’ কিংবা মানুষজনের জীবনে গড়ে কতজন ‘যৌন সঙ্গী’ থাকে? ‘সেক্স করা’ বলতে কী বোঝায় সে বিষয়ে একটা সর্বসম্মত সংজ্ঞায় পৌঁছাতে না পারা পর্যন্ত আসলে এসব প্রশ্নের কোনোই মানে হয় না।
এটা ধরে নেওয়া কোনো ভাবেই ঠিক হবে না যে, আমরা যখন ‘সেক্স’ নিয়ে কথা বলি তখন সবাই ঠিক একই বিষয়কে বুঝাই। বিল ক্লিনটনের কথাই ধরুন, তাঁর সেই বহুল সমালোচিত উক্তির কথা মনে করুন-‘ওই নারী, মিস লিওনিস্কির সঙ্গে আমি কোনো যৌন সম্পর্ক করিনি।’ পরে যখন এটা পরিষ্কার হয় যে, তিনি লিওনিস্কির কাছ থেকে মুখকাম নিয়েছিলেন তখন তিনি বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেও আগের অবস্থান ধরে রাখার পক্ষে বলেন, ‘আমার জবাব আইনগতভাবে সঠিক ছিল।’
ক্লিনটনের সতর্কভাবে বেছে নেওয়া শব্দ বেশির ভাগ মানুষের মুখের ভাষার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯১ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, কলেজছাত্রদের ৪০ শতাংশই মুখকামকে সেক্স করা বা যৌন সঙ্গম বলে ভাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটও প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে মিথ্যা বলে শপথ ভঙ্গের অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্টতই প্রায় একই রকম উপসংহারে পৌঁছেছিল।
ক্লিনটন অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানে পরিচালিত যৌন আচরণ বিষয়ক গবেষণাগুলোতে এই অস্পষ্টতা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। যুক্তরাজ্যের সমাদৃত ‘যৌন আচরণ ও জীবনযাপন বিষয়ক জাতীয় জরিপ’-ন্যাটসাল প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুসারে বিল ক্লিনটন মিস লিওনিস্কির সঙ্গে যৌন সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
ডেভিড স্পিজেলহলটারের দেওয়া দ্বিতীয় পাঠটি হলো-পরিসংখ্যানের কাজটি সতর্কভাবে করা হয়েছে নাকি হেসে-খেলে সেরে ফেলা হয়েছে সে বিষয়ে মনোযোগ বাড়ানো।
‘ট্রোজান ইউএস সেক্স সেনসাস’-এর পরিসংখ্যান যথাযথ নয় বলে বাতিল করে দেন স্পিগেলহলটার। ট্রোজানের জরিপে বলা হয়েছিল লস অ্যাঞ্জেলেসের মানুষেরাই যৌন আচরণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়, এখানকার মানুষেরা গড়ে প্রতি বছর ১৩৫টি যৌনক্রিয়ায় অংশ নেন। তিনি বলেন, এমন জরিপে কনডম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির বিশাল বিজ্ঞাপন হলেও জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরাই যুক্তরাষ্ট্রের আপামর জনসাধারণকে প্রতিনিধিত্ব করেন না।
যৌনতা বিষয়ক অনেক বিখ্যাত গবেষকের জরিপও অনেক সময় প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা বাছাই না করার সমস্যা দুষ্ট হতে পারে। আলফ্রেড কিনসলে দেখিয়েছেন যে, পুরুষদের ৩৭ শতাংশই সমকামিতার মধ্যে শীর্ষ সুখের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। শিয়ার হাইট দেখিয়েছেন, ৯৫ শতাংশ নারীই পুরুষ সঙ্গীদের কাছ থেকে ‘আবেগি বা মনস্তাত্ত্বিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।’ এই সব গবেষণাগুলো রাজনৈতিকভাবে যুগান্তকারী মনে হলেও এই সংখ্যাগুলো সঠিক বলে আস্থা রাখাটা কঠিন হতে পারে।