ঢাকা ১২:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ইসকনের ব্যানারে আলিফকে হ/ত্যা করেছে আওয়ামী লীগের গুন্ডারা: সাকি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই প্রথম যুদ্ধবিরতির পক্ষে বললেন জেলেনস্কি টাটকা রস খেতে বাগানে ভিড়, কেনা যায় বিশুদ্ধ খেজুরের গুড়ও তিন বছরেই ২৪ কোটি টাকা দুর্নীতি, দেনার ঘানি টানছে বিআরটিসি পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন: যা বাদ পড়ছে, যা যুক্ত হচ্ছে হুট করেই বিয়ে করা, ছিলনা কোন পূর্বপরিকল্পনা: কেয়া ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্ক সংকেত, তিন বিভাগে বৃষ্টির আভাস ডিইএব-এর পিডব্লিউডি শাখার সভাপতি আনিসুজ্জামান, মহাসচিব বোরহান উদ্দিন ইতিহাসের এই দিনে ‘হাঁ-না ভোটে জিয়াউর রহমানের গণআস্থা লাভ করেন’ উত্তর গাজায় বড় বিমান হামলা ইসরায়েলের, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ১০০

প্রিয় সাকিব, আপনাকে অনুরোধ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০১৯
  • ২৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শুনেছি সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজধানীর একটি আসন থেকে মনোনয়ন বাধা ছিল সাকিব আল হাসানের। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে তিনি ভোটে লড়বেন এটি চূড়ান্তই হয়ে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নিরুৎসাহিত করেন সাকিবকে। ক্রিকেটে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে সাকিবকে বিশ্বসেরা পারফরম্যান্স করার বিষয়ে উৎসাহ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বলেন, তোমার মেধাকে ক্রিকেটে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাও। যদিও কেউ কেউ আবার এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয়েও যোগ করেন একান্ত আলোচনায়। তারা বলেন, রাজধানীর গুলশান আসন থেকে বিশ্ববরেণ্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে সরকার দলীয় নীতিনির্ধারকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একমত হন।

সাকিবও রাজি হন রাজনীতিতে নাম লেখাতে, মাশরাফির মতোই। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে নাকি সাকিব নিজের জন্মস্থান মাগুরা সদর আসন থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় মনোভাব দেখান। আগে থেকেই সাইফুজ্জামান শিখরকে ওই আসনে মনোনয়নের চূড়ান্ত কথা দেওয়ায় সাকিব আল হাসানকে নিরুৎসাহিত করা হয়। ঘটনা যাই ঘটুক রাজনীতিতে তিনি নাম লেখাননি। এটাই বাস্তবতা। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের সময় মাশরাফি-সাকিবের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া, আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করার খবর হঠাৎ টক অব দ্যা টাউন হয়ে ওঠে। এর মধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজা নড়াইল সদর আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এখন।

সাকিবকে বিলম্বিত ধন্যবাদ। অভিনন্দন, শুভেচ্ছা। আপাতত রাজনীতিতে নাম না লেখানোর জন্য। রাজনীতির মাধ্যমে দেশের সেবা করবেন সাকিব এই ইচ্ছা তো সাধুবাদযোগ্য। খুবই ভালো চিন্তা। আমাদের রাজনীতিতে আরও গুণগত পরিবর্তনের জন্য যারা প্রতিনিয়ত ইতিবাচক চরিত্রে অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন সেখানে সাকিব নামটি তো একেবারে উপরের দিকে থাকার মতো নাম। কিন্তু সেই সময় এখনো হয়েছে কি? এই প্রশ্নটি আমার মনের মধ্যে ছিল, যখন সাকিবের মনোনয়ন হয়ে যায় যায়, যেকোনো মুহূর্তে তার নাম ঘোষণা হয়ে যাবে এমন তোড়জোর চলছিল। তখন মনের মধ্যেকার এই প্রশ্নটি সামনে নিয়ে আসতে পারিনি। নানা জড়তা যেমন ছিল, তেমনি কীভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বসেরা পারফরম্যান্স, বিশেষত ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে তার দানবীয় ব্যাটিং দেখতে দেখতে একটা কথাই বারবার মনে হয়েছে সাকিবই তো আমাদের ‘বেস্ট অ্যাম্বাসেডর’ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে আরও ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে। এই সাকিব তো আমাদের খুউবই প্রয়োজন। তাড়াহুড়ো করে রাজনীতিতে ঢুকিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম এই ব্রান্ডকে আমরা কেন ভোতা করে দেব? আপনাকে অনুরোধ প্রিয় সাকিব তাড়াহুড়ো করে রাজনীতিতে যোগ দেবেন না।

আপনার কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক কিছু পাওয়ার আছে। বিশ্ব ক্রিকেটকে আপনার অনেক কিছু দেওয়ার আছে। একের পর এক রেকর্ড গড়ে আর রেকর্ড ভেঙে আপনি তো বিশ্ব ক্রিকেটেরই অন্যতম সেরা মুখ। পুরোপুরিভাবে খেলার মধ্যে থেকে আপনি ক্রিকেট জীবন শেষ করুন। আরও অন্তত এক দশক। আপনি জ্বলে উঠলে জ্বলে উঠবে বাংলাদেশ। আপনার নেতৃত্বে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাক। এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।

‘সাকিবই কি সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার’? ১৮ জুন ভারতের শীর্ষ বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকার অন্যতম শিরোনাম এটি। অনলাইনে পত্রিকা দেখে রীতিমতো বিস্মিত হই। যে ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের ইতিবাচক অর্জনগুলো বাঁকা চোখে দেখে, সেই ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে সাকিব আর বাংলাদেশ বন্দনা। ভুল দেখছি না তো! খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। জ্যাক ক্যালিস, কপিল দেব, ইমরান খান, রিচার্ড হ্যাডলি, ইয়ান বোথাম, গ্যারি সোবার্সদের ট্র্যাক রেকর্ড ঘেঁটে সাকিবের পারফরম্যান্সের তুলনা হয় প্রতিবেদনে।

আর রেকর্ডই বলছে সাকিব বিশ্বসেরা। শুধুই কি ভারতীয় গণমাধ্যম! সাকিব বন্দনায় মেতেছে বিশ্ব মিডিয়াই। সাকিবের ধারাবাহিক এই সাফল্যের প্রশংসা কে না করবে? যত দিন যাচ্ছে ততই অতুলনীয় হয়ে উঠছেন আমাদের সাকিব। আইসিসির একদিনের আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিয়ের অলরাউন্ডার হিসেবে শীর্ষে তিনি। ২০২ ওডিআইতে করেছেন ছয় হাজার ১০১ রান। বাহাতি অর্থডক্স বোলিংয়ে তুলে নিয়েছেন ২৫৪ উইকেট। ৫৫ টেস্টে ৩৮০৭ রানের সঙ্গে রয়েছে ২০৫ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে ৭২ ম্যাচে করেছেন ১৪৭১ রান এবং ৭৮টি উইকেট।

অনেকের মতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যারি সোবার্সই সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার। তার পরিসংখ্যানটি দেখুন। ৯৩ টেস্টে ২৩৫ উইকেট ছাড়া রয়েছে ৮০৩২ রান। ভারতের কপিল দেবকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই তাদের। সেই কপিল দেব ১৩১ টেস্টে ৫২৪৮ রান ছাড়াও নিয়েছেন ৪৩৪ উইকেট। ২২৫টি ওডিআইতে ৩৭৮৩ রান ছাড়াও তুলে নিয়েছেন ২৫৩ উইকেট। আর পাকিস্তানের সেরা অলরাউন্ডার খ্যাত ইমরান খানের পরিসংখ্যানও এখানে দিচ্ছি। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৭৫ ম্যাচে ১৮২টি উইকেট রয়েছে তার। আর রান আছে ৩৭০৯। অন্যদিকে ৮৮ টেস্টে ৩৮০৭ রানের সঙ্গে নিয়েছেন ৩৬২ উইকেট।

এসবের তুলনা করলে সবার থেকে আমাদের সাকিব আল হাসান এগিয়ে। ক্রিকেট বিশ্ব বাধ্য হচ্ছে তাকে ‘বিরল’ প্রতিভা বলতে। এই সাকিবকে নিয়ে আমরা গর্বতো করবই। পাশাপাশি তাঁকে আরও বেশি করে যত্ন করব। তাঁর মনোসংযোগে এতটুকু চিড় ধরে এমন কোনো কিছু যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।

সাকিব আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। তাঁকে আরও বড় হতে দিতে হবে। তাঁর উৎসাহ-উদ্দীপনা আরও বেগবান হয় এমন কাজই আমাদের করতে হবে। এই বিরল প্রতিভার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট গোটা ক্রিকেট বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এমন মন্তব্যও দুয়েকটি ভারতীয় মিডিয়া করেছে।

অথচ এই সেদিনের কথা। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) হায়দরাবাদ কিংবা কলকাতা যখনই যে টিমে সাকিব অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাঁকে কার্যত তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই ব্যবহার করা হতো। নিয়মিত খেলানোই হয়নি। এমনকি ব্যাটিং অর্ডারে তাকে তার যোগ্য জায়গায়ও কখনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। প্রতিভার অবমূল্যায়ন করে তার প্রায়শ্চিত্তই এখন যেন করছে ভারতীয় মিডিয়া। এটি শুভ লক্ষণ বৈকি।

এভাবে তরতর করে সাকিবের হাত ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাক, আমরা পরম তৃপ্তিতে বাংলাদেশের জয়গান গাই। নানা ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ঘুচে যাক ক্রিকেটের সাফল্যে। আর এই সাফল্য পেতে গেলে সাকিবদের বড়ই প্রয়োজন। চাইলেই একজন সাকিব তৈরি হয় না। সাকিববিহীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আমরা কি এই মুহূর্তে কেউ চিন্তা করতে পারি? পারি না। আপাতত সাকিবকে হারানোর ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ নেই। সাকিব আপনার সাফল্য বাংলাদেশের সাফল্য, এটি আমরা জানি, বুঝি, বিশ্বাস করি। তাই ক্রিকেট জীবন শেষ না করে আপনি রাজনীতির মাঠে খেলবেন না। এই সনির্বন্ধ অনুরোধ আপনাকে করি প্রিয় সাকিব আল হাসান।

আপনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ব্যানারে সংসদ নির্বাচন করার আগ্রহ দেখিয়ে প্রমাণ করেছেন আপনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, প্রগতির পক্ষে আপনাকে অভিবাদন প্রিয় সাকিব আল হাসান।

ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন জনৈক বন্ধু। গণভবনে সাকিব পরিবারের সঙ্গে মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাস্যোজ্জ্বল ছবি। সাকিবকন্যা আলাইনার সঙ্গে খুনসুঁটি করছেন প্রিয় শেখ হাসিনা। এভাবেই প্রতিভার পরিচর্যা হোক এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকা টাইমস২৪ডটকম ও সাপ্তাহিক এই সময়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসকনের ব্যানারে আলিফকে হ/ত্যা করেছে আওয়ামী লীগের গুন্ডারা: সাকি

প্রিয় সাকিব, আপনাকে অনুরোধ

আপডেট টাইম : ০৯:৫৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শুনেছি সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজধানীর একটি আসন থেকে মনোনয়ন বাধা ছিল সাকিব আল হাসানের। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে তিনি ভোটে লড়বেন এটি চূড়ান্তই হয়ে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নিরুৎসাহিত করেন সাকিবকে। ক্রিকেটে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে সাকিবকে বিশ্বসেরা পারফরম্যান্স করার বিষয়ে উৎসাহ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বলেন, তোমার মেধাকে ক্রিকেটে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাও। যদিও কেউ কেউ আবার এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয়েও যোগ করেন একান্ত আলোচনায়। তারা বলেন, রাজধানীর গুলশান আসন থেকে বিশ্ববরেণ্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে সরকার দলীয় নীতিনির্ধারকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একমত হন।

সাকিবও রাজি হন রাজনীতিতে নাম লেখাতে, মাশরাফির মতোই। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে নাকি সাকিব নিজের জন্মস্থান মাগুরা সদর আসন থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় মনোভাব দেখান। আগে থেকেই সাইফুজ্জামান শিখরকে ওই আসনে মনোনয়নের চূড়ান্ত কথা দেওয়ায় সাকিব আল হাসানকে নিরুৎসাহিত করা হয়। ঘটনা যাই ঘটুক রাজনীতিতে তিনি নাম লেখাননি। এটাই বাস্তবতা। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের সময় মাশরাফি-সাকিবের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া, আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করার খবর হঠাৎ টক অব দ্যা টাউন হয়ে ওঠে। এর মধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজা নড়াইল সদর আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এখন।

সাকিবকে বিলম্বিত ধন্যবাদ। অভিনন্দন, শুভেচ্ছা। আপাতত রাজনীতিতে নাম না লেখানোর জন্য। রাজনীতির মাধ্যমে দেশের সেবা করবেন সাকিব এই ইচ্ছা তো সাধুবাদযোগ্য। খুবই ভালো চিন্তা। আমাদের রাজনীতিতে আরও গুণগত পরিবর্তনের জন্য যারা প্রতিনিয়ত ইতিবাচক চরিত্রে অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন সেখানে সাকিব নামটি তো একেবারে উপরের দিকে থাকার মতো নাম। কিন্তু সেই সময় এখনো হয়েছে কি? এই প্রশ্নটি আমার মনের মধ্যে ছিল, যখন সাকিবের মনোনয়ন হয়ে যায় যায়, যেকোনো মুহূর্তে তার নাম ঘোষণা হয়ে যাবে এমন তোড়জোর চলছিল। তখন মনের মধ্যেকার এই প্রশ্নটি সামনে নিয়ে আসতে পারিনি। নানা জড়তা যেমন ছিল, তেমনি কীভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বসেরা পারফরম্যান্স, বিশেষত ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে তার দানবীয় ব্যাটিং দেখতে দেখতে একটা কথাই বারবার মনে হয়েছে সাকিবই তো আমাদের ‘বেস্ট অ্যাম্বাসেডর’ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে আরও ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে। এই সাকিব তো আমাদের খুউবই প্রয়োজন। তাড়াহুড়ো করে রাজনীতিতে ঢুকিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম এই ব্রান্ডকে আমরা কেন ভোতা করে দেব? আপনাকে অনুরোধ প্রিয় সাকিব তাড়াহুড়ো করে রাজনীতিতে যোগ দেবেন না।

আপনার কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক কিছু পাওয়ার আছে। বিশ্ব ক্রিকেটকে আপনার অনেক কিছু দেওয়ার আছে। একের পর এক রেকর্ড গড়ে আর রেকর্ড ভেঙে আপনি তো বিশ্ব ক্রিকেটেরই অন্যতম সেরা মুখ। পুরোপুরিভাবে খেলার মধ্যে থেকে আপনি ক্রিকেট জীবন শেষ করুন। আরও অন্তত এক দশক। আপনি জ্বলে উঠলে জ্বলে উঠবে বাংলাদেশ। আপনার নেতৃত্বে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাক। এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।

‘সাকিবই কি সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার’? ১৮ জুন ভারতের শীর্ষ বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকার অন্যতম শিরোনাম এটি। অনলাইনে পত্রিকা দেখে রীতিমতো বিস্মিত হই। যে ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের ইতিবাচক অর্জনগুলো বাঁকা চোখে দেখে, সেই ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে সাকিব আর বাংলাদেশ বন্দনা। ভুল দেখছি না তো! খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। জ্যাক ক্যালিস, কপিল দেব, ইমরান খান, রিচার্ড হ্যাডলি, ইয়ান বোথাম, গ্যারি সোবার্সদের ট্র্যাক রেকর্ড ঘেঁটে সাকিবের পারফরম্যান্সের তুলনা হয় প্রতিবেদনে।

আর রেকর্ডই বলছে সাকিব বিশ্বসেরা। শুধুই কি ভারতীয় গণমাধ্যম! সাকিব বন্দনায় মেতেছে বিশ্ব মিডিয়াই। সাকিবের ধারাবাহিক এই সাফল্যের প্রশংসা কে না করবে? যত দিন যাচ্ছে ততই অতুলনীয় হয়ে উঠছেন আমাদের সাকিব। আইসিসির একদিনের আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিয়ের অলরাউন্ডার হিসেবে শীর্ষে তিনি। ২০২ ওডিআইতে করেছেন ছয় হাজার ১০১ রান। বাহাতি অর্থডক্স বোলিংয়ে তুলে নিয়েছেন ২৫৪ উইকেট। ৫৫ টেস্টে ৩৮০৭ রানের সঙ্গে রয়েছে ২০৫ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে ৭২ ম্যাচে করেছেন ১৪৭১ রান এবং ৭৮টি উইকেট।

অনেকের মতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যারি সোবার্সই সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার। তার পরিসংখ্যানটি দেখুন। ৯৩ টেস্টে ২৩৫ উইকেট ছাড়া রয়েছে ৮০৩২ রান। ভারতের কপিল দেবকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই তাদের। সেই কপিল দেব ১৩১ টেস্টে ৫২৪৮ রান ছাড়াও নিয়েছেন ৪৩৪ উইকেট। ২২৫টি ওডিআইতে ৩৭৮৩ রান ছাড়াও তুলে নিয়েছেন ২৫৩ উইকেট। আর পাকিস্তানের সেরা অলরাউন্ডার খ্যাত ইমরান খানের পরিসংখ্যানও এখানে দিচ্ছি। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৭৫ ম্যাচে ১৮২টি উইকেট রয়েছে তার। আর রান আছে ৩৭০৯। অন্যদিকে ৮৮ টেস্টে ৩৮০৭ রানের সঙ্গে নিয়েছেন ৩৬২ উইকেট।

এসবের তুলনা করলে সবার থেকে আমাদের সাকিব আল হাসান এগিয়ে। ক্রিকেট বিশ্ব বাধ্য হচ্ছে তাকে ‘বিরল’ প্রতিভা বলতে। এই সাকিবকে নিয়ে আমরা গর্বতো করবই। পাশাপাশি তাঁকে আরও বেশি করে যত্ন করব। তাঁর মনোসংযোগে এতটুকু চিড় ধরে এমন কোনো কিছু যেন না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।

সাকিব আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। তাঁকে আরও বড় হতে দিতে হবে। তাঁর উৎসাহ-উদ্দীপনা আরও বেগবান হয় এমন কাজই আমাদের করতে হবে। এই বিরল প্রতিভার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট গোটা ক্রিকেট বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এমন মন্তব্যও দুয়েকটি ভারতীয় মিডিয়া করেছে।

অথচ এই সেদিনের কথা। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) হায়দরাবাদ কিংবা কলকাতা যখনই যে টিমে সাকিব অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাঁকে কার্যত তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই ব্যবহার করা হতো। নিয়মিত খেলানোই হয়নি। এমনকি ব্যাটিং অর্ডারে তাকে তার যোগ্য জায়গায়ও কখনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। প্রতিভার অবমূল্যায়ন করে তার প্রায়শ্চিত্তই এখন যেন করছে ভারতীয় মিডিয়া। এটি শুভ লক্ষণ বৈকি।

এভাবে তরতর করে সাকিবের হাত ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাক, আমরা পরম তৃপ্তিতে বাংলাদেশের জয়গান গাই। নানা ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ঘুচে যাক ক্রিকেটের সাফল্যে। আর এই সাফল্য পেতে গেলে সাকিবদের বড়ই প্রয়োজন। চাইলেই একজন সাকিব তৈরি হয় না। সাকিববিহীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আমরা কি এই মুহূর্তে কেউ চিন্তা করতে পারি? পারি না। আপাতত সাকিবকে হারানোর ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগ নেই। সাকিব আপনার সাফল্য বাংলাদেশের সাফল্য, এটি আমরা জানি, বুঝি, বিশ্বাস করি। তাই ক্রিকেট জীবন শেষ না করে আপনি রাজনীতির মাঠে খেলবেন না। এই সনির্বন্ধ অনুরোধ আপনাকে করি প্রিয় সাকিব আল হাসান।

আপনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ব্যানারে সংসদ নির্বাচন করার আগ্রহ দেখিয়ে প্রমাণ করেছেন আপনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, প্রগতির পক্ষে আপনাকে অভিবাদন প্রিয় সাকিব আল হাসান।

ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন জনৈক বন্ধু। গণভবনে সাকিব পরিবারের সঙ্গে মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাস্যোজ্জ্বল ছবি। সাকিবকন্যা আলাইনার সঙ্গে খুনসুঁটি করছেন প্রিয় শেখ হাসিনা। এভাবেই প্রতিভার পরিচর্যা হোক এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকা টাইমস২৪ডটকম ও সাপ্তাহিক এই সময়।