হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিয়ের আগে স্বামী শিপলুর সঙ্গে একবছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল জান্নাতির। ওই সময় সে জানতো না যে ভালোবাসার মানুষটি মাদক ব্যবসায় জড়িত। বিয়ের পরে স্বামীর আসল রূপ ধরা পড়ে। জান্নাতি জানতে পারে, শুধু স্বামী নয়, তার পুরো পরিবার দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছে। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন জান্নাতিকেও মাদক ব্যবসায় নামাতে চেয়েছিলো। কিন্তু এতে রাজি না হওয়ায় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে মরতে হলো জান্নাতিকে।
স্বামী শিপলুকে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিতে বলেছিল জান্নাতি। আর সেটাই কাল হলো তার। বিষয়টি জানতে পেরে জান্নাতির গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নির্মম এ ঘটনার ৪০ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জান্নাতি। জান্নাতির খুনীদের স্বীকারোক্তিতে ওঠে এসেছে হত্যার এমন লোমহর্ষক বর্ণনা।
বুধবার দুপুরে নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই নির্মম ঘটনা তুলে ধরেন পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন। তিনি জানান, জান্নাতি হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা শরিফুল ইসলাম গত ১৫ জুন নরসিংদি সদর মডেল থানায় বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নাটোর জেলার নারায়নপুর পুকুরপাড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন, নিহত জান্নাতির শ্বাশুড়ি শান্তি বেগম ওরফে ফেন্সী রানী (৪৫), স্বামী সাব্বির আহামেদ শিপলু ওরফে শিবু (২৩) ননদ ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়া (৫০)। তারা সকলেই নরসিংদী চরহাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর পুলিশ সুপার বলেন, পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করদেত না পারায় জান্নাতুল ফেরদৌসি ওরফে জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যা করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। ঘটনার দিন রাতেই ৬ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের একটি চৌকষ দল নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ, টঙ্গী, চাপাইনবাবগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে না পেয়ে নাটোর জেলায় অভিযান চালালে মঙ্গলবার রাতে এজাহারভুক্ত চার আসামী মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজই তাদের আদালতে তুলে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ জানায়, নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতি আক্তার (১৬) ও আর পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার মধ্যে প্রায় এক বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই জান্নাতি পরিবারের মাদক ব্যবসায়ের বিষয়টি জানতে পারে।
তাকেও পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে শ্বাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তুরাজি করাতে পারেনি জান্নাতিকে। এ কারণে জান্নাতির ওপর চলে কঠোর নির্যাতন। দাবি করে যৌতুকের। দাবির টাকা না দেয়া এবং মাদক ব্যবসায় না জড়ানোয় চলতি বছরের ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাশুড়ি ও স্বামী শিপলু জান্নাতির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাদের সহযোগিতা করে ননদ ফাল্গুনী বেগম।
দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও জান্নাতিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি তারা। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যু যন্ত্রণার পর গত ৩০ মে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে মারা যায় সে।