হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির এবং পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের আলোচনার অভিযোগের দ্রুত তদন্ত চেয়েছে টিআইবি। অভিযোগ প্রমাণ হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করারও দাবি দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থাটির বাংলাদেশ শাখা। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বলছে, ‘তদন্ত কর্মকর্তার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুদকের পক্ষে এর দায় কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। একই সঙ্গে ঘুষ লেনদেনে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার সকল অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দায়ও পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি দুদকের।
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। পরিচালক খন্দকার এনামুল বশির এই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি একটি টোলিফোনালাপ ফাঁস হয়েছে যেখানে ৪০ লাখ টাকা এবং বাচ্চাকে স্কুলে আনা নেওয়ার জন্য একটি গাড়ি চেয়েছেন একজন। বলা হচ্ছে, এটি এনামুল বাছির এবং ডিআইজি মিজানের কথোপকথন।
ডিআইজি মিজান গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, এটি তার কণ্ঠস্বর। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ সদরপ্তর। তবে এনামুল বশির দাবি করেছেন, এটি বানোয়াট।
টিআইবি বলেছে, দুই জনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। আর এটি দুদক ও পুলিশের ওপর জনগণের ‘ক্ষয়িষ্ণু আস্থা’ ফিরিয়ে আনার জন্যই দরকার।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুদকের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘকালের পুঞ্জীভূত সমস্যা, যা সর্বজনবিদিত। দুদক কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এ বিষয়ে ইতোপূর্বে একাধিকবার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু তা যে বাস্তবে কোনো কার্যকর ফল দেয়নি, তার প্রমাণ এই আলোচিত ঘটনা। তাই এ ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে রীতিমত শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত করতে না পারলে দুদকের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হবে। একইসঙ্গে দুর্নীতিরও আরো ব্যাপক বিস্তার ঘটবে।’
দুদক অবশ্য এনামুল বশিরকে এরই মধ্যে বরখাস্ত করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্ত করার কথা জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, কোনো কর্মীর ব্যক্তিগত দায় তারা নেবে না।
তবে দুদকের এই বক্তব্যে হতাশ টিআইবি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না- দুদকের এমন অবস্থান আমাদের শুধু হতাশই করেনি বরং আমরা বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমত শঙ্কিত বোধ করছি। একজন উচ্চপদস্থ তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর আমাদের প্রত্যাশা ছিল দুদক একে একটা প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে এবং তাদের অন্য কোনো কর্মকর্তাও যে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত নন তা নিশ্চিত করতে দৃশ্যমান, বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। দুদক নিজেই যদি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে, তাহলে তাদের কার্যক্রমের ওপর জনগণের আস্থা থাকবে কী করে?’।
ডিআইজি মিজানের এখানো স্বপদে বহাল থাকা নিয়েও বিস্মিত টিআইবির। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘ঘুষ লেনদেনে জড়িত দুই পক্ষই সমানভাবে দায়ী। বিশেষ করে যখন কোনো ব্যক্তি দুর্নীতির অভিযোগ থেকে পার পেতে ঘুষ দেন, তখন তার অপরাধের মাত্রা আরো গুরুতর হয়।’
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে যায় কি না, তা নিয়েও শঙ্কিত টিআইবি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে আমরা জেনেছি যে, পুলিশ প্রশাসন এখনও কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। তারা তদন্ত করে দেখার কথা বললেও সেটা কবে শুরু বা শেষ হবে তা আমরা জানি না। আমরা এটাও জানি না যে শেষ পর্যন্ত এই অভিযোগও ধামাচাপা পড়ে যাবে কি না।’
ডিআইজি মিজান এক বছরের বেশি সময় ধরে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত। তার বিরুদ্ধে এক নারীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে বিয়ে করার অভিযোগ ছিল। পাশাপাশি আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও আছে।
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্ত করেছে পুলিশ সদরদপ্তর। সে প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমাও পড়েছে। কিন্তু এই পুলিশ কর্মকর্তা উচ্চ আদালতে রিট করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ঠেকিয়ে রেখেছেন।
টিআইবি বলছে, ‘নারী নির্যাতন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের’ মত গুরুতর অপরাধের অভিযোগ থাকার পরও যখন এই পুলিশ কর্মকর্তা স্বপদেই বহাল থাকা অগ্রহণযোগ্য। এই অবস্থায় পুলিশ প্রশাসন তাদের ওপর জনগণের আস্থা সম্পর্কে কোনো তোয়াক্কা করে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে টিআইবি।