হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুন থেকে শুরু করে অস্ত্র, মাদক ও জাল ডলার ব্যবসা, সন্ত্রাসী তৎপরতা, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, মানব পাচারসহ বিদেশিদের নানা অপরাধের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। অবৈধভাবে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বসবাস করে তারা চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধ কর্মকাণ্ড।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলছেন, ২০ দেশের কমপক্ষে ৫ সহস্রাধিক নাগরিক রাজধানী ঢাকায় নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। এর মধ্যে শতাধিক রয়েছেন যারা নিজ দেশের দাগী অপরাধী। নাম-ঠিকানা পাল্টে বাংলাদেশে আত্মগোপনে থেকে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অপরাধের কর্মকাণ্ডে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এমন অবস্থায় অপরাধে জড়িত বিদেশি নাগরিকদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ১ জুন (শনিবার) সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকার ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ (অটোমেটেড টেলার মেশিন) থেকে অত্যাধুনিক জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সময় ইউক্রেনের এক নাগরিককে আটক করেন বুথের নিরাপত্তাকর্মী। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে আরও ৫ ইউক্রেনীয়কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ভ্যালেনটাইন, ওলেগ, ডেনিস, নাজেরি, সারগি ও ভোলোবিহাইন। এটিএম জালিয়াতি চক্রের সদস্য ইউক্রেনের ৬ নাগরিককে আদালতে সোপর্দ করার পর তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানা গেছে, গত বছর ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি ও জালিয়াতির অপরাধে জড়িত বিদেশি নাগরিকদের ধরতে রাজধানীর রামপুরা, গুলশান ও উত্তরার ১৪৭টি বাড়িতে একযোগে অভিযান চালানো হয়। অপরাধে জড়িত অবৈধ ৩১ জন আফ্রিকান নাগরিক আটক করে পুলিশ।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, গত বছর ৪ অক্টোবর অবৈধভাবে বসবাসকারী আলজেরীয় নাগরিক আবু ওবায়েদ কাদের সমকামিতায় ব্যর্থ হয়ে পানিতে চুবিয়ে উত্তরায় স্কুলছাত্র জুবায়ের আহমদকে হত্যা করেন। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর কাদের এই বর্ণনা দেন। ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড ক্যামেরুনের ৩ নাগরিক পেরেজ ইফরেইন, সেন কেরিন ন্যাটি ও মিকো স্যান্ডিও নাটালিকে সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা থেকে জাল ডলার ও ডলার তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করে ডিবি।
গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি জাল ডলার, ইউরো, রূপিসহ গুলশানের নিকেতন থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক জিংগে ফিলিং সিফু, ক্যামেরুনের সামজেলা ক্রিসসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে ডিবি। ওই বছরের ১১ জুন কারওয়ান বাজার হোটেল লা-ভিঞ্চি থেকে সোয়া ৩ কেজি কোকেনসহ জুয়ান পাবলো রেফায়েল নামে পেরুর এক নাগরিক এবং ৩ সেপ্টেম্বর উত্তরা থেকে মদসহ কামারা কাডে, কোনজি লোভেনিয়া এবং রবার্টো মিলি মনোনো নামে গিনি ও দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিককে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। ২২ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে অবৈধ বিপুল ভিওআইপি সরঞ্জামসহ চীন ও তাইওয়ানের ৩৭ নাগরিককে গ্রেফতার করে র্যাব। এর আগে ১৮ এপ্রিল সাভারে একটি রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পেরুর নাগরিক ব্রিট জে লুডাভিগসেন শাকাতা ও ভারতের স্যাম্পাত কুমারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়কৃষ্ণপদ রায় বলেন, বিদেশিদের বাসা ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। বৈধ কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পরই তাদের ভাড়া দেয়া উচিত। গ্রেফতার ৩১ বিদেশি নাগরিক কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। শিক্ষার্থী ও ভ্রমণ ভিসায় তারা বাংলাদেশে এসেছেন। তারা সবাই আফ্রিকান নাগরিক। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরা খুন, প্রতারণা, মাদক ব্যবসা, জাল টাকা তৈরি, ভিওআইপি ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন।