হাওর বার্তা ডেস্কঃ এধরনের শপিং বিলের নজির বোধ হয় দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হতে পারে। সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট ঘেঁটে বিবিসি দেখেছে কীভাবে একজন কারাবন্দী ব্যাংকারের স্ত্রী লন্ডনে সবচেয়ে বিলাসবহুল দোকান হ্যারডসে কেনাকাটায় ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড উড়িয়েছেন। প্রায় দশ বছর ধরে তার এই কেনাকাটা নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহের উদ্রেক হয়নি।
জামিরা হাজিয়েভা তার এই শপিংয়ের জন্য ৫৪টি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছেন, যেগুলোর অনেকগুলোই তার স্বামীর ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট।
তার সম্পদের উৎস নিয়ে এখন ব্রিটেনে তদন্ত চলছে।
হাইকোর্টে সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে না পারলে জামিরা হাজিয়েভা ইংল্যাণ্ডে বার্কশায়ার কাউন্টিতে তার গল্ফ কোর্সটিও হারাতে পারেন। তার স্বামী রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যাংক থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অপরাধে আজারবাইজানে ১৫ বছরের সাজা খাটছেন।
ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার সুদ ছাড়া অন্য কোনো আয় না থাকলেও কীভাবে এত ধন সম্পদের মালিক তিনি হলেন, লডনে হাইকোর্ট আজেরি এই নারীকে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার আদেশ দেয়। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না দিতে পারলে সম্পদ হারানোর সম্ভাবনার কথা বলা হয়। সে সময় তার নাম যাতে প্রকাশ করা যায়, তার জন্য এক আইনি লড়াইতে জিতেছিল বিবিসি এবং আরো কিছু সহযোগী মিডিয়া।
ব্রিটেনের অপরাধ তদন্তের বিভাগের নথিপত্র ঘেঁটে মিসেস হাজিয়েভার প্রতিদিনের খরচ-খরচার যে বিবরণ পাওয়া গেছে, তা অবিশ্বাস্য।
তিন সন্তানের মা এই নারীর ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে। তিনি থাকেন হ্যারডস থেকে বড়জোর পাঁচ মিনিটের দূরত্বে যেটি লণ্ডনের একটি অত্যন্ত অভিজাত এলাকা। ঐ দোকানেই তিনি কেনাকাটা করতেন। এমনকী দোকানের কারপার্কের দুটো বে’র মালিকানা তার।
তার বিরুদ্ধে তদন্তে যেসব নথিপত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটি হ্যারডসের লয়ালটি কার্ডের সূত্রে পাওয়া ৯৩-পাতার একটি বিবরণ। সেটি থেকেই বের হয়ে এসেছে মিসেস হাজিয়েভার শপিংয়ের চিত্র।
আরও পড়ুন:
খরচের শুরু যেভাবে
ব্রিটেনে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরুর পর থেকেই শুরু হয় তার খরচের বহর। খরচের প্রথম যে হিসাব পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায় তিনি শিশুদের বই কিনতে খরচ করেছন ৮৪২ পাউন্ড। সুগন্ধি কিনেছেন ১৪০ পাউন্ড দিয়ে। খুব বেশি কিছু নয়।
কিন্তু বছর না ঘুরতেই তিনি হ্যারডসের কার্টিয়ার ব্র্যান্ডের জুয়েলারি বিক্রির জায়গার খোঁজ পেয়ে যান। সেখানে একটি টিলের রেকর্ডে দেখা যায় তিনি ১৮১ পাউন্ডের জিনিস কিনেছেন। তালিকায় দেখা যায়, তারপর তিনি ১৬০০ পাউন্ড দিয়ে মিউ মিউ ব্র্যান্ডের পোশাক কিনেছেন। ১৫৩৯ পাউন্ড দিয়ে কিনেছেন ফেরাগামো জুতা।
২০০৭ সালের মার্চে মিসেস হাজিয়েভা আবারো মিউ মিউ ব্র্যান্ডের কাপড়ের পেছনে খরচ করেন ১০,৬১৬ পাউন্ড। দাম শোধ করেন তার ২৫টি আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডের একটি দিয়ে।
তারপর থেকেই তার খরচের বহর বাড়তে থাকে। একটি হিসাবে দেখা যায়, হ্যারডসে ৬৬,০০০ পাউন্ডর বিল দিয়েছেন। টম ডিক্সন ব্র্যান্ডের দোকান থেকে ১৭,০০০ পাউন্ডের জিনিস কিনেছেন।
দশ বছরে হ্যারডসে জামিরা হাজিয়েভার খরচের তালিকা
বুশেরন ব্র্যান্ডের গহনা: ৩৫ লাখ পাউন্ড
কার্টিয়ের গহনা: ১৪ লাখ পাউন্ড
ডেনিস বাসো ডিজাইনার পোশাক: ৪০২,০০০ পাউন্ড
স্যান্ডউইচ: ৩৩২,০০০ পাউন্ড (টম ডিক্সন ফার্নিচার এবং কফি শপের বিল একসাথে পরিশোধ করা হতে পারে)
হ্যারডসের পারফিউম কাউন্টার : ১৬০,০০০ পাউন্ড
মোট ব্যয়: ১৬,৩০৯,০৭৭ পাউন্ড (এক কোটি ৬৩ লক্ষ নয় হাজার ৭৭ পাউন্ড)
সূত্র: হাই কোর্ট নথি
২০০৮ সালে বিশে জুনের দুপুরের পরপরই মিসেস হাজিয়েভা আন্ডারওয়ার এবং মোজার কাউন্টারে ৯২৫ পাউন্ডের বিল দেন। এক ঘণ্টা তিন মিনিট পর কার্টিয়ের গহনার কাউন্টারে বিল দেন ৪৩৩,৩৫৮.৭৯ পাউন্ড।
একই দিনে ছেলেদের একটি ডিজাইনার পণ্য কেনার জন্য খরচ করেন ৩৭৪ পাউন্ড। কয়েকদিন পরই তিনি ইসরায়েলি ডিজাইনার এলি তাহারির জিনিসের জন্য খরচ করেন ৮৩৮৭ পাউন্ড। দুদিন পর ২৬শে জুন ঘড়ির কাউন্টারে ১৭০০০ পাউন্ড বিল দেন।
ডিজনি কাউন্টারে কেন এত খরচ?
হ্যারডসে ডিজনি পণ্যের যে কাউন্টার রয়েছে, সেখানে কেন তিনি ৯৯,০০০ পাউন্ড খরচ করেছিলেন তা বোধগম্য নয়। শপিংয়ের এই তালিকা দিনকে দিন শুধুই বেড়েছে। উপহার মোড়ার জন্যই তিনি একদিন খরচ করেছেন ১৩৭১ পাউন্ড।
হ্যারডসের খেলনার বিভাগে গিয়েই খরচ করেছেন ২৫০,০০০ পাউন্ড।
সর্বমোট বিল?
২০০৬ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৪ই জুন পর্যন্ত মিসেস হাজিয়েভা হ্যারডস থেকে ১৬,৩০৯,০৭৭.৮৭ (এক কোটি ৬৩ লাখ নয় হাজার ৭৭ পাউন্ডের) বিল দিয়েছেন। ব্যবহার করেছেন ৫৪টি ক্রেডিট কার্ড, যার মধ্যে ৩৫টি ক্রেডিট কার্ড আজারবাইজানের সেই ব্যাংক থেকে ইস্যু করা যেটি থেকে টাকা আত্মসাতের দায়ে তার স্বামী জেল খাটছেন।
হ্যারডসে তিনি কত খরচ করলেন ব্রিটেনের জাতীয় অপরাধ এজেন্সির (এনসিএ) মূল নজর সেদিকে নয়। তারা দেখছে কীভাবে মিসেস হাজিয়েভা লন্ডনের বাড়ি এবং বার্কশায়ারে গল্ফ কোর্স কিনলেন। পয়সা কোথা থেকে পেলেন।
মিসেস হাজিয়েভা অবশ্য বলেছেন, তিনি অবৈধ কিছু করেননি। এনসিএর তদন্তকে চ্যালেঞ্জ করছেন তিনি। তিনি বলছেন, তার স্বামী আজারবাইজানের কারাগারে। সুতরাং তার স্বামী যে একজন সফল ব্যবসায়ী সে প্রমাণ তিনি এখন দিতে পারছেন না।