হাওর বার্তা ডেস্কঃ এক সময় জঙ্গল থেকে কচু ও ঢেকি শাক তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে যে শিশুটি পরিবারকে সাহায্য করতো তিনিই আজ ভারতের মন্ত্রিসভার সদস্য।
আসামের ডিব্রুগড়ের লোকসভা আসনের সাংসদ রামেশ্বর তেলিকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এই রামেশ্বরেরই ছোটবেলা কেটেছে খুব অভাবের মধ্যে।
তার বাবা ছিলেন চা শ্রমিক। ডিব্রুগড়ের চা বাগানের বেড়ার একটি ঘরে মা,বাবা, ভাই ও দুই বোন নিয়ে ছয় জনের সংসার। বাবার উপার্জনের টাকায় সংসার ঠিক মতো চলতো না।
১২ বছর বয়স থেকেই রামেশ্বর সংসারের খরচ যোগাড়ে উপার্জনে নামেন। দুই বছরের ছোট ভাইকে নিয়ে চা বাগানের আশপাশের জঙ্গলে খুঁজে কচু ও ঢেকি শাক তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। যা আয় করতেন তা দিয়ে রুটি কিনে বাড়িতে ফিরতেন।
এই অবস্থা আরও খারাপ হয় তার বাবার মৃত্যুর পর। সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। বাড়ির কাছে পানের দোকান দেন।
এই দোকান করতে করতেই ভর্তি হন কলেজে। যোগ দেন আসামের চা জনগোষ্ঠীর ছাত্র সংস্থা আটসায়। এখান থেকেই জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বগুণের কারণে বিজেপি নেতাদের চোখে পড়েন। ২০০১ ও ২০০৬ সালে হন বিধায়ক, তারপর ২০১১ সালে হেরে যান।
কিন্তু ২০১৪ সালে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। কারণ তিনি এক লাখ ৮৫ হাজার ভোটে পরাজিত করেন কংগ্রেসের পাঁচ বারের সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবন সিংহ ঘাটোয়ারকে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে একই প্রতিদ্বন্দ্বীকে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হারান তিনি।
বিপুল জনপ্রিয়তা ও জনগণের ব্যাপক সমর্থনের কারণেই মোদী তাকে মন্ত্রিসভায় নিয়েছেন বলে মত বিশ্লেষকদের।
এখন আর পানের দোকান চালাতে না হলেও মা ও ভাই চা বাগানের ওই আগের ঘরেই থাকেন। রাজনীতিতে ব্যস্ত রামেশ্বর বাড়িতে খুব একটা না থাকলেও যখনই যান ওই বেড়ার ঘরেই থাকেন।
তার এক চাচা ঠেলাগাড়ি চালান। এক চাচা অটো চালান ও আরেক চাচা গ্যাস সিলিন্ডারের ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করেন।
সংসার ও রাজনীতি করতে গিয়ে এখনও বিয়ে করা হয়নি ৪৯ বছর বয়সী রামেশ্বরের। এখন তার জন্য পাত্রী খুঁজছেন তার মা, যিনি বৃহস্পতিবার ছেলেকে দেশের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন।