হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা কতজনকে দেয়া হয়েছে এবং কত টাকা কোন হিসেবে জমা রয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য একদিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ হিসেব চাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান আলম সাজুর কাছ থেকে হিসেবে পাওয়ার পর তা প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পাঠাবে মন্ত্রণালয়। একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একইসাথে যৌক্তিকতাসহ ট্রাস্টের অর্থের চাহিদাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্ধারিত ছকের এসব তথ্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিবকে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ট্রাস্টের তথ্য চাওয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে এ তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মুগিস মাহমুদ এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে? এদিকে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা লুটকারী সদস্য-সচিবদের অন্যতম রাজধানীর আল হেরা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ চৌধুরী মুগিস উদ্দিন মাহমুদের শাস্তি দাবি করেছেন অবসর ও কল্যাণের টাকার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করা শিক্ষকরা। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরবর্তী তিন বছর তিনি কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য-সচিব ছিলেন।
শিক্ষকদের জমানো দুশো কোটি টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে সরিয়ে বিতর্কিত ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে জমা করে নিজে লাভবান হয়েছেন তিনি। দুর্নীতির দায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকটি বন্ধ করে দেয়। মুগিস মাহমুদ গত বছর আগস্টে অবসরে যান। হাজার হাজার শিক্ষক যখন অবসর ও কল্যাণের টাকার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন ঠিক তখন এই মুগিসের বাসায় কল্যাণ ট্রাস্টের চেক পৌঁছে দেন কল্যাণের বড় কর্মকর্তারা। অবসরের এক অফিসে ঘুরতে ঘুরতে জুতা ক্ষয় হচ্ছে কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। অথচ কাজী ফারুক, মুগিস মাহমুদ, সেলিম ভূঁইয়ারা কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব থাকাকালে এই ফান্ডের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে জমা রেখে সুদ খেয়েছেন।
মুগিস মাহমুদের জমানায় কোন ব্যাংকে কত টাকা ছিল এবং সুদের টাকা কোথায় গেল তা অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান ভুক্তভোগী মোস্তফা কামাল। জানা যায়, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে মুগিস মাহমুদের অঢেল সম্পদের উৎস অনুসন্ধান শুরু হয়। দেখা যায় সাবেক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে [বর্তমানে আইসিবি ব্যাংক] মুগিসের ১৭টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওইসব অ্যাকাউন্টে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকাও জমা ছিল। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে মুগিস মাহমুদ কিছুদিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি অবসর ও কল্যাণের সাবেক সদস্য সচিব ও বিএনপির নেতা এবং বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়ার অনুসারী হিসেবে শিক্ষক মহলে পরিচিত। মাসের মধ্যে কল্যাণ সুবিধা পান অঢেল টাকার মালিক ও রিয়েলে এস্টেট ব্যবসায়ী অধ্যক্ষ মুগিস মাহমুদ। তার শাস্তি দাবি করেছেন বছরের পর বছর টাকা না পাওয়া শিক্ষকরা।
কল্যাণ ট্রাস্টের লুট করা টাকা উদ্ধার করে দ্রুত শিক্ষকদের দিয়ে দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা। ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, কল্যাণ ট্রাস্টের কল্যাণ ট্রাস্টের প্রাথমিক তহবিলের এক কোটি টাকার হদিস নেই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের জন্মলগ্ন থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ৫ সদস্যের একটি তদন্ত দল প্রথমবারের মতো কল্যাণ ট্রাস্টের দুর্নীতির তদন্ত করে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৯০ থেকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া লুটপাটে জড়িত অনেক শিক্ষক নেতা ও কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য-সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য-সচিব ছিলেন অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ।
ট্রাস্টের প্রাথমিক তহবিল গঠন বাবদ ১ কোটি টাকার হিসাব না পাওয়া প্রসঙ্গে: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায় ট্রাষ্টের প্রাথমিক তহবিল গঠন করার জন্য সরকার থেকে এক কোটি টাকা পাওয়ার কথা উল্লেখ আছে। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন দৈনিক প্রথম আলোতে ‘বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট্রে এক কোটি টাকার হদিস নাই’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তদন্ত দলও ১ কোটি টাকা প্রাপ্তি ও জমার কোনো রেকর্ড পায়নি। তাছাড়া নথিতে উক্ত টাকা পরবর্তী সময়ে পাওয়া যায় নি। এ ধরনের কোনো রেকর্ড ও সিদ্ধান্ত নেই। এক কোটি টাকার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া গেল। তবে, অনুসন্ধানে জানা যায়, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের পর ১৬ বছর পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সরকারের দেয়া ২৯ কোটি টাকা চলতি হিসাবে কেন? রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায় সরকার ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুন ১৪ কোটি টাকা এবং ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন ১৫ কোটি। এই মোট ২৯ কোটি টাকা সরাসরি এফডিআর না করে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মহাপরিচালক একক ব্যাংক হিসাব নং ৯৮৮ তে জমা করা হয়। দীর্ঘ সময় উক্ত হিসাবে রাখার পর পরবর্তী সময়ে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে এফডিআর করা হয়। চলিত হিসাব রাখার ফলে ব্যাংক লাভবান হয়েছে অথচ কল্যাণ ট্রাস্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরীক্ষার সময় উক্ত টাকা জমার ব্যাংক স্লিপ এবং ব্যাংক বিবরণী চেয়েও পাওয়া যায়নি। শুধু সর্বশেষে এফডিআর ভাঙানো ও ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে চলতি হিসাব ফের স্থানান্তরের ব্যাংকের পত্র তদন্ত দলকে দেখানো হয়। এ অনিয়মের ফলে ট্রাস্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে নিরীক্ষা দল মন্তব্য করেন। কর্তন করা ২ শতাংশ হারে কল্যাণ তহবিলের টাকা কম জমার কারণ কি? নিরীক্ষাকালে রেকর্ডপত্র যাচাইয়ে দেখা যায় জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ২ শতাংশ হারে শিক্ষক কর্মচারীদের অনু।