ঢাকা ১০:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কে হবেন ধর্ষিত কিশোরীর সন্তানের বাবা! চাচা নাকি দুই প্রতিবেশী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:২২:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯
  • ৩৪৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের জেলার কালিহাতীতে গণধর্ষণের ১০ মাস পর তের বছর বয়সী এক কিশোরী কন্যা সন্তানের জম্ম দিয়েছেন। বুধবার (২৯ মে) সকালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে এ সন্তান জন্ম দেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরীটির মা কিছুটা মানসিক অসুস্থ। অন্যের বাড়িতে গৃহকমীর্র কাজ আর ছোট ছেলের দোকান কর্মচারীর সামান্য টাকায় চলে তাদের সংসার। দারিদ্রতার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতেই বন্ধ হয়ে যায় তার পড়াশুনা। বাড়ির কাজকর্ম দেখাশুনা করেই কেটে যাচ্ছিলো তার সময়।

এরই মাঝে গত দশমাস পূর্বে তার জীবনে নেমে আসে আরেক ভয়ানক দুর্যোগ। স্নান শেষে কাপড় পাল্টানোর সময় গোপনে মোবাইলে ছবি ধারণ করে রুদ্র পাল নামের এক প্রতিবেশি। রুদ্র সেই ছবি টাকার বিনিময়ে আরেক প্রতিবেশী মিঠুন পাল ও বসন্ত পালকে দেয়। পরে মিঠুন পাল ও বসন্ত পাল ওই কিশোরীকে ডেকে নিয়ে ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সেই সাথে বিষয়টি গোপন না রাখলে মা ও ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। এ ঘটনার ১৫দিন পর আবারও একই কায়দায় ওই দু’জনের কাছে ধর্ষণের শিকার হয় ওই কিশোরী।

এর দুইমাস পরে আপন চাচা বিষয়টি জেনে গিয়ে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে হাত-পা ও মুখ বেধে ধর্ষণ করে। হুমকি দেয়ায় দীর্ঘ ৮মাস বিষয়টি গোপন রাখে কিশোরী। দুই মাস আগে শারিরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা শেষে আট মাসের গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি জানান তার পরিবারকে। এসময় তার কাছে জানতে চাইলে বিস্তারিত ঘটনা পরিবারকে জানায় ওই কিশোরী। পরে ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে কালিহাতি থানায় ৪ জনকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তাদের ৪ জনকেই গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।

ওই কিশোরী জানান, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আমার পরিবারকে হুমকি দিয়ে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তখন ডাক্তার বলেছিলো যেহেতু ৮ মাস পার হয়ে গেছে এখন বাচ্চা নষ্ট করা হলে আমার মৃত্যু হতে পারে। এমন কথা শুনে আমার পরিবার বাচ্চা নষ্ট করতে দেয়নি। কার মাধ্যমে এই বাচ্চা হয়েছে তা বলতে না পারলেও পরিক্ষার মাধ্যমে বের করা ও শিশুটি যেন তার বাবার পরিচয়ে বড় হতে পারে এবং সকল আসামীদের কঠিন শাস্তির দাবি জানান ওই কিশোরী।

কিশোরীর পরিবার জানান, বুধবার (২৯ মে) সকালে প্রসব ব্যাথা শুরু হলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সে নিজেই এখনো শিশু, তার গর্ভে থেকে জন্ম নিলো আরেকটি শিশু। কি হবে শিশুর পিতৃ পরিচয়? আর কে করবে ভরণ পোষণ? দরিদ্র পরিবারটি এমনো হাজারো হতাশার কথা জানালেও কিশোরীটির পাশে থেকে ন্যায় বিচারের জন্য লড়ে যাবেন বলে জানান তারা। পাশাপাশি সদ্য ভুমিষ্ট শিশু কন্যার পিতৃ পরিচয় ও দোষীদের শাস্তি দাবি জানিয়েছেন পরিবারটি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক তাহমিনা সুলতানা জানান, বুধবার দুপুরে শিশুটিকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শিশুটির ওজন কম ও শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে। তবে শিশুটির অবস্থা শঙ্কা মুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কে হবেন ধর্ষিত কিশোরীর সন্তানের বাবা! চাচা নাকি দুই প্রতিবেশী

আপডেট টাইম : ০৬:২২:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মে ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের জেলার কালিহাতীতে গণধর্ষণের ১০ মাস পর তের বছর বয়সী এক কিশোরী কন্যা সন্তানের জম্ম দিয়েছেন। বুধবার (২৯ মে) সকালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে এ সন্তান জন্ম দেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরীটির মা কিছুটা মানসিক অসুস্থ। অন্যের বাড়িতে গৃহকমীর্র কাজ আর ছোট ছেলের দোকান কর্মচারীর সামান্য টাকায় চলে তাদের সংসার। দারিদ্রতার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতেই বন্ধ হয়ে যায় তার পড়াশুনা। বাড়ির কাজকর্ম দেখাশুনা করেই কেটে যাচ্ছিলো তার সময়।

এরই মাঝে গত দশমাস পূর্বে তার জীবনে নেমে আসে আরেক ভয়ানক দুর্যোগ। স্নান শেষে কাপড় পাল্টানোর সময় গোপনে মোবাইলে ছবি ধারণ করে রুদ্র পাল নামের এক প্রতিবেশি। রুদ্র সেই ছবি টাকার বিনিময়ে আরেক প্রতিবেশী মিঠুন পাল ও বসন্ত পালকে দেয়। পরে মিঠুন পাল ও বসন্ত পাল ওই কিশোরীকে ডেকে নিয়ে ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সেই সাথে বিষয়টি গোপন না রাখলে মা ও ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। এ ঘটনার ১৫দিন পর আবারও একই কায়দায় ওই দু’জনের কাছে ধর্ষণের শিকার হয় ওই কিশোরী।

এর দুইমাস পরে আপন চাচা বিষয়টি জেনে গিয়ে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে হাত-পা ও মুখ বেধে ধর্ষণ করে। হুমকি দেয়ায় দীর্ঘ ৮মাস বিষয়টি গোপন রাখে কিশোরী। দুই মাস আগে শারিরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা শেষে আট মাসের গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি জানান তার পরিবারকে। এসময় তার কাছে জানতে চাইলে বিস্তারিত ঘটনা পরিবারকে জানায় ওই কিশোরী। পরে ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে কালিহাতি থানায় ৪ জনকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তাদের ৪ জনকেই গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।

ওই কিশোরী জানান, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আমার পরিবারকে হুমকি দিয়ে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তখন ডাক্তার বলেছিলো যেহেতু ৮ মাস পার হয়ে গেছে এখন বাচ্চা নষ্ট করা হলে আমার মৃত্যু হতে পারে। এমন কথা শুনে আমার পরিবার বাচ্চা নষ্ট করতে দেয়নি। কার মাধ্যমে এই বাচ্চা হয়েছে তা বলতে না পারলেও পরিক্ষার মাধ্যমে বের করা ও শিশুটি যেন তার বাবার পরিচয়ে বড় হতে পারে এবং সকল আসামীদের কঠিন শাস্তির দাবি জানান ওই কিশোরী।

কিশোরীর পরিবার জানান, বুধবার (২৯ মে) সকালে প্রসব ব্যাথা শুরু হলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সে নিজেই এখনো শিশু, তার গর্ভে থেকে জন্ম নিলো আরেকটি শিশু। কি হবে শিশুর পিতৃ পরিচয়? আর কে করবে ভরণ পোষণ? দরিদ্র পরিবারটি এমনো হাজারো হতাশার কথা জানালেও কিশোরীটির পাশে থেকে ন্যায় বিচারের জন্য লড়ে যাবেন বলে জানান তারা। পাশাপাশি সদ্য ভুমিষ্ট শিশু কন্যার পিতৃ পরিচয় ও দোষীদের শাস্তি দাবি জানিয়েছেন পরিবারটি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক তাহমিনা সুলতানা জানান, বুধবার দুপুরে শিশুটিকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শিশুটির ওজন কম ও শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে। তবে শিশুটির অবস্থা শঙ্কা মুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।